আমাজনের বিরুদ্ধে বড় মামলা: ভারী ধাতু ও আর্সেনিকযুক্ত চাল বিক্রির অভিযোগ

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস আমাজন ডটকম (Amazon.com)-এর বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রে একদল ভোক্তা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আর্সেনিক ও অন্যান্য বিষাক্ত ভারী ধাতু দ্বারা দূষিত চাল বিক্রির অভিযোগে ফেডারেল আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
সিয়াটেল ফেডারেল কোর্টে ক্লাস অ্যাকশন মামলা
২৪ মে শুক্রবার, স্থানীয় সময় অনুযায়ী, সিয়াটেলের একটি ফেডারেল আদালতে এই ‘ক্লাস অ্যাকশন’ মামলা দায়ের করা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, আমাজনে বিক্রি হওয়া ১৮ ধরনের চাল স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ মাত্রায় ভারী ধাতু দ্বারা দূষিত। এর মধ্যে রয়েছে—
- বেন’স অরিজিনাল (Ben’s Original)
- ৩৬৫ বাই হোল ফুডস মার্কেট (365 by Whole Foods Market) — যেটি আমাজনেরই মালিকানাধীন একটি ব্র্যান্ড।
মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে—
“আমাজন শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক ভোক্তাদের কোনো রকম সতর্কতা ছাড়াই এমন চাল বিক্রি করেছে, যেগুলোতে আর্সেনিক, সীসা (lead), ক্যাডমিয়ামসহ অন্যান্য ক্ষতিকর ভারী ধাতু রয়েছে।”
এগুলো দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সার, স্নায়বিক সমস্যা এবং শিশুদের বিকাশে গুরুতর ব্যাঘাত ঘটাতে পারে বলে পরীক্ষায় জানা গেছে।
চাল পরীক্ষায় পাওয়া গেছে ভয়াবহ তথ্য
মামলার অংশ হিসেবে যে চালগুলো পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছিল, তাতে দেখা যায়—
- উচ্চমাত্রায় আর্সেনিক (Arsenic) – ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান।
- সীসা (Lead) – শিশুদের মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
- ক্যাডমিয়াম (Cadmium) – কিডনি সমস্যা এবং হাড় দুর্বল করার জন্য দায়ী।
এই ধরণের বিষাক্ত ধাতু শরীরে দীর্ঘদিন ধরে জমা হতে থাকলে দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুরা এই ধরনের ভারী ধাতুর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ভোক্তাদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়েছে আমাজন?
মামলায় আরও বলা হয়েছে, “আমাজন জানত অথবা জানার কথা ছিল যে তাদের বিক্রি করা চালগুলোতে এসব ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে। কিন্তু কোম্পানিটি ভোক্তাদের কোনো রকম সতর্কতা বা তথ্য দেয়নি।”
এর ফলে ক্রেতারা বিনা সাবধানতায় এসব চাল কিনে খেয়েছেন, যা একধরনের ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন বলে দাবি করা হয়েছে।
ক্ষতিপূরণ ও আইনগত প্রতিক্রিয়া
বর্তমানে আদালতের কাছে মামলাটি ‘ক্লাস অ্যাকশন’ হিসেবে স্বীকৃতি পেলে, আমাজনের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দাবি করা হতে পারে। এতে আমাজনে চাল কেনা লাখো গ্রাহক মামলা করার যোগ্যতা পাবেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক ও অন্যান্য রাজ্যের ভোক্তা সুরক্ষা আইন অনুযায়ী, এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমাজনকে প্রতিটি ভোক্তার জন্য পৃথক ক্ষতিপূরণ দিতে হতে পারে।
ই-কমার্স পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন
এই ঘটনা আমাজনের বিরুদ্ধে প্রথম নয়। গত কয়েক বছরে:
- বেবি ফুড (Baby Food)
- মসলা (Spices)
- প্রসাধনী পণ্য (Cosmetics)
—এমন বহু পণ্যে ভারী ধাতুর উপস্থিতি নিয়ে জরিমানা ও মামলা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘটনা অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোর খাদ্য নিরাপত্তা নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার আহ্বান জানাবে।
আমাজনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো মন্তব্য নেই
মামলার খবর প্রকাশিত হলেও আমাজনের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে ভবিষ্যতে এই মামলা আমাজনের ব্র্যান্ড ইমেজ, ক্রেতা আস্থা ও বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ঘটনা যদি নিয়মিত ঘটে, তবে ভবিষ্যতে অনলাইন খাবার পণ্য বিক্রিতে কড়া আইন ও পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হতে পারে।
অতীত ঘটনা ও আমাজনের গাফিলতি
এর আগে, ২০২১ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি গবেষণা সংস্থা প্রকাশ করে যে—
আমাজন এবং আরও কয়েকটি প্ল্যাটফর্মে বিক্রি হওয়া শিশুখাদ্যে সীসা ও আর্সেনিক পাওয়া গেছে।
২০২৩ সালে আবারও দেখা যায়, হোল ফুডসের পণ্য পরীক্ষায় উচ্চমাত্রার ক্যাডমিয়াম পাওয়া গেছে, কিন্তু আমাজনের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের কোনো সতর্কতা জানানো হয়নি।
এইসব ঘটনা মিলিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, “আমাজনের মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে।”
কী করতে পারেন ভোক্তারা?
যেসব ভোক্তা ১৮টি অভিযোগকৃত চালের যে কোনোটি আমাজন থেকে কিনেছেন, তারা চাইলে—
- মামলার অংশ হতে পারেন
- অনলাইন লিংকের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করতে পারেন (কোর্ট অনুমোদন সাপেক্ষে)
- প্রয়োজনে স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে নিজের ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে পারেন