২৫ বছর পর জার্মান-জুজু কাটাল পর্তুগাল, রোনালদোর দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন

আন্তর্জাতিক ফুটবলের ইতিহাসে কিছু প্রতিদ্বন্দ্বিতা মানেই দীর্ঘশ্বাস আর প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষা। এমনই এক দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটাল পর্তুগাল। ২৫ বছর পর জার্মানিকে হারিয়ে শুধু একটি ম্যাচ জেতা নয়, বরং একটি ইতিহাসকে উল্টে দেওয়ার নাম এই জয়। ন্যাশনস লিগের সেমিফাইনালে জার্মানিকে ২-১ গোলে হারিয়ে পুরনো এক জুজুর অবসান ঘটিয়েছে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর নেতৃত্বাধীন পর্তুগিজ দল।
২০০০ সালের পর প্রথমবার জয় পেল পর্তুগাল
২০০০ ইউরোতে পর্তুগাল শেষবার জার্মানির বিপক্ষে জয় পেয়েছিল ৩-০ গোলে। এরপর পেরিয়ে গেছে এক-চতুর্থাংশ শতাব্দী। এর মাঝে বিশ্বকাপ ও ইউরোর মতো বড় টুর্নামেন্টে মোট পাঁচবার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। প্রতিবারই বিজয়ী হয়েছে জার্মানি। তবে ২০২৫ সালের এই ম্যাচের মাধ্যমে পর্তুগাল লিখে দিল এক নতুন গল্প। সেই গল্পে আছে প্রতিশোধ, পরিকল্পনা, দক্ষতা এবং রোনালদোর উজ্জ্বল উপস্থিতি।
ম্যাচ বিশ্লেষণ: রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে পর্তুগালের উত্থান
মিউনিখের বিখ্যাত আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় আয়োজিত এই ম্যাচে প্রথমার্ধে দুই দলই রক্ষণাত্মক কৌশল বজায় রাখে। গোল শূন্যভাবে প্রথমার্ধ শেষ হয়। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই খেলা গতি পায়। ৪৮ মিনিটে জার্মান মিডফিল্ডার ফ্লোরিয়ান উইর্টজ গোল করে স্বাগতিকদের এগিয়ে দেন। পাসটি আসে জোশুয়া কিমিখ-এর কাছ থেকে।
তবে পিছিয়ে পড়েও ঘুরে দাঁড়ায় পর্তুগাল। ৬৩ মিনিটে বদলি খেলোয়াড় ফ্রান্সিসকো কনকেইসাও সমতাসূচক গোল করেন মাত্র ৫ মিনিট মাঠে নামার পর। তাঁর এই বদলি হিসেবে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দলকে প্রাণ ফিরে পেতে সাহায্য করে।
এরপরই আসে সেই মুহূর্ত, যার জন্য অপেক্ষা করে ছিল পুরো পর্তুগাল— ৬৮ মিনিটে গোল করেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। নুনো মেন্দেস এর পাস থেকে পাওয়া সুযোগটি দারুণভাবে কাজে লাগিয়ে দলকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে নেন রোনালদো।
রোনালদোর ফর্মে ফেরা ও আবেগঘন বার্তা
গোল করার পর পরই নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ম্যাচের ছবি পোস্ট করে রোনালদো লেখেন, “সামনে পর্তুগাল“—এই বার্তার মাধ্যমে তিনি যেন ফাইনালের আগে প্রতিপক্ষকে হুঁশিয়ার করে দিলেন। ম্যাচ শেষে তিনি আরও বলেন, “এই জয় শুধু জয় নয়, এটা আমাদের ইতিহাসের অংশ। আমরা নিজেদের প্রমাণ করেছি।”
এই ম্যাচের মাধ্যমে রোনালদো আন্তর্জাতিক ফুটবলে নিজের গোল সংখ্যা বাড়িয়ে ১৩৭-এ পৌঁছে দিলেন, যা এক অনন্য রেকর্ড। পর্তুগালের হয়ে তাঁর ম্যাচ সংখ্যা এখন ২২০। বয়স ৪০ এর কাছাকাছি হলেও এখনও গোলের মধ্যে আছেন এই মহাতারকা।
কোচ রবার্তো মার্তিনেজের কৌশলগত সাফল্য
পর্তুগাল কোচ রবার্তো মার্তিনেজ ম্যাচ শেষে বলেন, “এই জয় শুধু খেলোয়াড়দের নয়, গোটা জাতির। আমরা জানতাম, জার্মানির বিপক্ষে খেলাটা কঠিন হবে। কিন্তু প্রতিটি পজিশনে আমরা আমাদের সেরা ট্যাকটিকস প্রয়োগ করেছি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “প্রতিশ্রুতি, অধ্যবসায় আর দলীয় সংহতির জয় এটি। এখন আমাদের চোখ ফাইনালে।”
ফাইনালের পথে পর্তুগাল, কারা হবে প্রতিপক্ষ?
এই জয়ের মাধ্যমে উয়েফা ন্যাশনস লিগ ২০২৫-এর ফাইনালে উঠেছে পর্তুগাল। অন্যদিকে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে স্পেন ও ফ্রান্স। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টায় এমএইপি অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত হবে সেই ম্যাচ।
ফাইনাল ম্যাচটি হবে রোববার (৮ জুন ২০২৫)। রোনালদোর দল প্রতীক্ষায় থাকবে স্পেন বা ফ্রান্সের বিরুদ্ধে শিরোপা জয়ের জন্য।
জার্মানির হতাশা ও ভবিষ্যতের ভাবনা
জার্মানির কোচ ও খেলোয়াড়দের মুখে হতাশা স্পষ্ট ছিল ম্যাচ শেষে। টেকনিক্যাল দিক থেকে এগিয়ে থাকলেও পর্তুগালের কৌশলগত পরিবর্তন এবং রোনালদোর দৃঢ়তা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জার্মানি এখনও পুনর্গঠনের পর্যায়ে আছে এবং তাদের রক্ষণভাগে কিছু দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে। এই ম্যাচ থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী ইউরো বা বিশ্বকাপে তারা আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সামগ্রিক প্রভাব: পর্তুগালের আত্মবিশ্বাসের নতুন দিগন্ত
২৫ বছরের অপেক্ষার অবসান শুধু এক পরিসংখ্যান নয়, এটি এক আত্মবিশ্বাসের নাম। একটি দলের ইতিহাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার সাহস এবং একটি প্রজন্মের নেতৃত্বে পুরনো মানসিক বাঁধা ভাঙার উদাহরণ। এই জয়ের মাধ্যমে পর্তুগাল ন্যাশনস লিগের ফেভারিট হয়ে উঠেছে।