আঞ্চলিক

ঋণের টাকার জন্য মুখে বিষ ঢেলে রিকশাচালককে হত্যার অভিযোগ, ‘সুদের কারবারি’ গ্রেপ্তার

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার একটি গ্রামে ঋণ ও সুদের বোঝা সহ্য করতে না পেরে এক রিকশাচালককে হত্যা করা হয়েছে। ফজলুর রহমান (৫৫) নামে ওই রিকশাচালককে পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী তার মুখে বিষ ঢেলে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। ফজলুরকে উদ্ধার করা হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি পরদিন মারা যান। এই ঘটনায় পুলিশ ধুলু মিয়া (৪৫) নামের এক সুদের কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে।

ঘটনার বিবরণ

বেলনা গ্রামের বাসিন্দা ফজলুর রহমান বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে বাড়ির পাশে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যান। পরিবারের অভিযোগ, তার মুখে একপ্রকার ঘাস মারার বিষ ঢেলে রাখা হয়েছিল। স্থানীয়রা তাকে দ্রুত মোহনপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা পরিস্থিতি গুরুতর বলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তিনি শুক্রবার রাতে মারা যান।

ফজলুরের বড় ছেলে শাহ আলম জানান, ধুলু মিয়া এবং তার অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ৫-৬ জন মিলে ফজলুরকে এই অবস্থায় ফেলে দেয়। হত্যার আগে ফজলুর একটি ভিডিওতে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছেন।

অভিযুক্তের তথ্য এবং গ্রেপ্তার

ধুলু মিয়া মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভার বাসিন্দা। ফজলুরের স্ত্রী আনজুয়ারা বিবি মোহনপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করলে পুলিশ অভিযুক্তকে সেই রাতেই গ্রেপ্তার করে। মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান জানান, ধুলু মিয়া ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছে এবং পুলিশ ঘটনার গভীর তদন্ত করছে।

ঋণ ও সুদের জট

ফজলুরের চাচাতো ভাই এনামুল হক বলেন, ধুলু মিয়া গ্রামের অন্যান্য মানুষকেও ঋণ দিয়ে থাকে এবং অতিরিক্ত সুদের দাবী করে। ফজলুর ২০২২ সালে ধুলু মিয়ার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ধার নেন। তবে ঋণের সুদ বাবদ ৪৩ হাজার টাকা পরিশোধের পরও ধুলু আরও ৩০ হাজার টাকা দাবী করেন। এর ফলে ফজলুরের সঙ্গে সালিশ হয়, যেখানে ১৫ হাজার টাকায় মীমাংসা হয়। কিন্তু ধুলু মানতে নারাজ হন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি ফজলুরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বলে পরিবার অভিযোগ করেছেন।

ফজলুর রহমান শহরে রিকশা চালাতেন এবং মাঝে মধ্যে গ্রামের বাড়ি আসতেন। তবে ঋণ ও সুদের চাপের কারণে তিনি দীর্ঘ দিন বাড়িতে থাকতেন না।

প্রতিবেশী ও স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কাওসার সরদার বলেন, “ধুলুর কাছে আলু চাষের জন্য ফজলুর কিছু টাকা নিয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে গ্রামবাসীরা সালিশ করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত মীমাংসা ব্যর্থ হয়েছে। ফজলুর অনেক এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন, যার কারণে বাড়িতে থাকতেন না।”

ফজলুরের বাড়িতে গিয়ে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং পরিবারকে সমবেদনা জানান। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তারা চাইছেন দোষীদের শাস্তি হোক।

বিচার প্রক্রিয়া এবং ভবিষ্যৎ ধাপ

ফজলুর রহমানের স্ত্রী আনজুয়ারা বিবি জানান, তিনি চাইছেন সকল দোষীকে আইনের আওতায় আনা হোক। পুলিশ এই ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে এবং মামলা চলমান। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তারা দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ঋণ ও সুদের অতিরিক্ত চাপ প্রায়শই গ্রামীণ অঞ্চলে এমন অমানবিক ঘটনা ঘটায়। এর ফলে শুধুমাত্র ব্যক্তি নয়, পুরো পরিবারই মানসিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সংক্ষিপ্তসার

রাজশাহী মোহনপুরে ঘটে যাওয়া এই রিকশাচালক হত্যাকাণ্ড গ্রামীণ ঋণ ও সুদের অতিরিক্ত চাপের মারাত্মক প্রভাব তুলে ধরেছে। পরিবার, স্থানীয় মানুষ এবং প্রশাসন আশা করছে, অভিযুক্ত ধুলু মিয়াসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এমন ঘটনায় গ্রামীণ ঋণ ব্যবস্থা ও সুদের মান নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অন্যথায় ভবিষ্যতেও অনুরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এম আর এম – ০৯২৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button