বাংলাদেশ

ভারতের পণ্যে শুল্কের বোঝা: বাংলাদেশের সুবিধা কোথায়?

ভারতের ব্যবসায়ীরা দুই সপ্তাহ আগে পাল্টা শুল্কের সুযোগ কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশসহ প্রতিযোগী দেশগুলোর তৈরি পোশাক রপ্তানির ব্যবসা দখলের পরিকল্পনা করছিলেন। তাঁরা ধারণা করেছিলেন যে বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার ওপর তুলনামূলক বেশি হারে পাল্টা শুল্ক বসবে, আর তাঁদের পণ্যে শুল্ক কম হবে। কিন্তু পরিস্থিতি উল্টে গেছে।

পাল্টা শুল্কের নতুন বাস্তবতা

গত ৩১ জুলাই মার্কিন প্রশাসন কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ১৯ শতাংশ এবং বাংলাদেশের পণ্যের ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। তবে ভারতীয় পণ্যে ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বসানো হয়, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় পণ্যের প্রবেশে মোট পাল্টা শুল্ক বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ শতাংশ। এই শুল্ক কার্যকর হবে ২১ দিন পর।

বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধির সুযোগ

ভারতীয় পণ্যে উচ্চ শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের কিছু পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। রপ্তানিকারকেরা বলছেন, উচ্চ শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা বেশ কিছু পণ্যে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবেন। এর মধ্যে তৈরি পোশাক, হোম টেক্সটাইল, কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত মাছ ও চিংড়ি, আসবাব ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব পণ্য বাংলাদেশের শীর্ষ রপ্তানি পণ্য।

ভারতের রপ্তানি পরিসংখ্যান

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৮০ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ১ হাজার ২৫৮ কোটি ডলারের ইলেকট্রিক যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ, ৯৩০ কোটি ডলারের জুয়েলারি, ৮৮৭ কোটি ডলারের ওষুধ, ৫১৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক, ৩৭০ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, ১৯৭ কোটি হিমায়িত মাছ ও চিংড়ি, ৭৫ কোটি ডলারের চামড়াজাত পণ্য এবং ১১৫ কোটি ডলারের আসবাব।

রপ্তানির সুযোগের বিশ্লেষণ

এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৫৪০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে ভারত। নতুন পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে ভারত থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে গড় শুল্ক ৬০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। ফলে, বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য মার্কিন বাজারে প্রবেশের সুযোগ বাড়বে।

হোম টেক্সটাইল ও আসবাবের সম্ভাবনা

হোম টেক্সটাইলের ক্রয়াদেশও ভারত থেকে বাংলাদেশ স্থানান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর ভারত যুক্তরাষ্ট্রে ২৯৩ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি করেছে, যেখানে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে ১৫ কোটি ডলারের। উচ্চ শুল্কের কারণে ভারত থেকে আসবাবের ক্রয়াদেশও সরবে, যার একটি অংশ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওয়ার আশা করছেন।

অর্থনীতিবিদদের মতামত

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা বা ডব্লিউটিও কাঠামোর পরিপন্থী। তিনি বলেন, রাশিয়ার জ্বালানি তেল আমদানি করার কারণে ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশও এই হুমকির বাইরে নয়।

ভারতের পণ্যে উচ্চ শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে, এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের প্রস্তুতি নিতে হবে এবং প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জন করতে হবে। সরকারের উচিত, এই শিল্পের উন্নয়নে সহায়তা প্রদান করা, যাতে ভবিষ্যতে রপ্তানি বৃদ্ধি পায় এবং দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

MAH – 12195 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button