আঞ্চলিক

 ভালুকায় মা ও দুই সন্তানকে গলা কেটে হত্যা, প্রধান আসামি নজরুল গ্রেপ্তার

 ময়মনসিংহের ভালুকায় নির্মম হত্যাকাণ্ডে কেঁপে উঠেছে পুরো এলাকা। ভাড়া বাসা থেকে মা ও দুই শিশুর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের পর পলাতক প্রধান আসামি নজরুল ইসলামকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তদন্তে মিলছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

হত্যাকাণ্ডের বিবরণ: ভয়াল সকাল, তালাবদ্ধ ঘর, লাশের স্তূপ

ঘটনার দিন রোববার রাতের শিফটে কাজ করতে গিয়েছিলেন রফিকুল। সোমবার সকালে ফিরে এসে দেখতে পান তার ঘরের দরজায় তালা। প্রতিবেশীদের সহায়তায় তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে নারকীয় দৃশ্য—স্ত্রী ও দুই সন্তানের গলাকাটা লাশ পড়ে আছে বিছানায়।

ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

প্রধান অভিযুক্ত নজরুল: পরিচয় ও অতীত

প্রধান আসামি নজরুল ইসলাম, নিহত ময়নার দেবর, হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পলাতক ছিলেন। জানা যায়, তিনি আগে একটি হত্যা মামলায় জেল খেটেছেন এবং আড়াই মাস আগে বড় ভাই রফিকুল ইসলাম তাকে ৪০ হাজার টাকা জামিন দিয়ে মুক্ত করান। এরপর থেকে তিনি একই বাসায় বসবাস করছিলেন।

পুলিশ জানিয়েছে, পালানোর জন্য নজরুল জয়দেবপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেন ধরার চেষ্টা করছিলেন। তবে তার আগেই তাকে আটক করা হয়।

মামলা ও তদন্ত: ভাইয়ের দায়েরকৃত অভিযোগ

নিহত ময়নার বড় ভাই জহিরুল ইসলাম ভালুকা মডেল থানায় নজরুলকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকেও আসামি করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, “নজরুলকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। হত্যার পেছনের মোটিভ নিশ্চিতভাবে উদঘাটনে কাজ করছে আমাদের তদন্ত দল।”

পরিবারের প্রতিক্রিয়া: শোকের মাতম ও অসহায় প্রশ্ন

নিহত ময়না আক্তারের ভাই জহিরুল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমরা ভাইকে আগলে রাখার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সে পুরো সংসার ধ্বংস করে দিল। এমন নিষ্ঠুরতা কিভাবে সম্ভব?”

তিনি আরও জানান, মরদেহ তিনটি মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত শেষে ভালুকার কুল্লাব গ্রামে মা ময়নার কবরের দুই পাশে দাফন করা হয় দুই সন্তানকে। একসঙ্গে তিনটি কবর খোঁড়া হয়। পুরো গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া: চাঞ্চল্য ও ক্ষোভ

এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই দাবি তুলেছেন, নজরুলের মতো অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “একটি পুরো পরিবার শেষ করে দিয়েছে যার কোনো অধিকারই ছিল না। ন্যায়বিচার চাই—আর দেরি নয়।”

পুলিশ প্রশাসনের অবস্থান: দ্রুত বিচার ও তদন্তে অগ্রগতি

ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম জানান, “আসামিকে ভালুকায় এনে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হত্যার পেছনের মোটিভ, সহায়তাকারী কারা ছিল, সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। আমরা শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত জানাব।”

তদন্তে নতুন মোড়ের সম্ভাবনা

এখন পর্যন্ত পুলিশের তদন্তে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, পারিবারিক কলহ অথবা সম্পত্তিগত কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে চূড়ান্ত কিছু বলা এখনও সম্ভব নয়।

পুলিশের ধারণা, নজরুল একা নয়, তার সঙ্গে আরও কেউ থাকতে পারে। তাই মামলায় অজ্ঞাত আসামির অংশটিও গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।

“নজরুল আগে থেকেই সন্দেহজনক ছিল। জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার এমন কিছু করবে, তা কল্পনাও করিনি”—নিহতের ভাই জহিরুল ইসলাম।

ভয়াবহ ঘটনার তদন্ত চলছে

ভালুকার এই মর্মান্তিক ঘটনা শুধু একটি পরিবারের সর্বনাশ নয়, এটি পুরো সমাজের জন্যও এক করুণ বার্তা।

তদন্তের অগ্রগতির ওপর নির্ভর করছে—এই হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য কত দ্রুত উদঘাটন হবে এবং অপরাধীরা কত দ্রুত শাস্তি পাবে। তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে: একটি পরিবার যদি ঘরের ভেতরেও নিরাপদ না থাকে, তবে নিরাপত্তা কোথায়?

তিনটি প্রাণের নির্মম পরিণতি

ময়মনসিংহের ভালুকা পৌর শহরের পনাশাইল এলাকার একটি ভাড়া বাসায় ঘটে যাওয়া এই হত্যাকাণ্ড সারা দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। সোমবার সকালে উদ্ধার করা হয় রফিকুল ইসলামের স্ত্রী ময়না আক্তার (২৫), মেয়ে রাইসা আক্তার (৭) এবং দুই বছর বয়সী ছেলে নীরব হোসেনের গলাকাটা মরদেহ। ঘটনার পরপরই সন্দেহভাজন হিসেবে নজর পড়ে নিহতের দেবর নজরুল ইসলামের দিকে।

পুলিশের তৎপর অভিযানে মঙ্গলবার বিকেলে গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এম আর এম – ০৩৫৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button