
গলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার প্রথম টেস্ট ম্যাচটি ড্র-তে শেষ হয়েছে। শেষ দিনে শ্রীলঙ্কাকে জয়ের জন্য ২৯৬ রানের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল বাংলাদেশ। জবাবে, শ্রীলঙ্কা ৩২ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৭২ রান সংগ্রহ করে। খেলার শেষ পাঁচ ওভার বাকি থাকতেই উভয় দল ড্র মেনে নেয়, ফলে ম্যাচটি কোনো ফলাফল ছাড়াই সমাপ্ত হয়। এই টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে নাজমুল হোসেন শান্তর দুটি এবং মুশফিকুর রহিমের একটি সেঞ্চুরি দলের পারফরম্যান্সকে উজ্জ্বল করেছে। অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস এই ম্যাচের মাধ্যমে তার টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি টানেন।
ম্যাচের বিস্তারিত
ম্যাচের প্রথম দিনে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ সব উইকেট হারিয়ে ৪৯৫ রানের একটি শক্তিশালী সংগ্রহ গড়ে তোলে। এই ইনিংসে মুশফিকুর রহিমের ১৬৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস ছিল দলের মূল ভরসা। তবে, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ১৩৮ রান করে দেড়শোর কাছাকাছি পৌঁছেও সেঞ্চুরির স্বাদ পাননি। বাংলাদেশের এই রানের জবাবে শ্রীলঙ্কা তাদের প্রথম ইনিংসে ৪৮৫ রান সংগ্রহ করে, যা বাংলাদেশের চেয়ে মাত্র ১০ রান কম। ফলে, বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে স্বল্প লিড পায়।
দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ আবারও শান্তর ব্যাটে ভর করে এগিয়ে যায়। শান্ত ১২৫ রানের দুর্দান্ত একটি সেঞ্চুরি হাঁকান, যা দলকে ৬ উইকেটে ২৮৫ রানে পৌঁছে দেয়। এই পর্যায়ে বাংলাদেশ ইনিংস ঘোষণা করে, শ্রীলঙ্কার সামনে ২৯৬ রানের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায়। শ্রীলঙ্কার জন্য শেষ দিনে ৩৭ ওভার খেলার সুযোগ ছিল এই রান তাড়া করার জন্য।
শ্রীলঙ্কা তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং শুরু করে আক্রমণাত্মকভাবে। দুই ওপেনার লাহিরু উদারা এবং পাথুম নিশাঙ্কা দ্রুত রান তুলতে থাকেন। তবে ষষ্ঠ ওভারে তাইজুল ইসলামের বলে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন উদারা, তার ব্যাট থেকে আসে ৯ বলে ১৩ রান। এরপর নাইম হাসানের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন নিশাঙ্কা, যিনি ২৫ বলে ২৪ রান করেন। তার ইনিংসে ছিল চারটি চারের মার। দুই উইকেট হারিয়ে ৩৪ রানে শ্রীলঙ্কা চা বিরতিতে যায়।
বিরতির পর খেলা শুরু হলে বাংলাদেশের বোলাররা চাপ সৃষ্টি করে। ২০তম ওভারে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান। তার ব্যাট থেকে আসে ৪৫ বলে মাত্র ৮ রান। এরপর তাইজুল আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন, যখন দিনেশ চান্দিমাল আউট হন। শ্রীলঙ্কা ৩২ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৭২ রান সংগ্রহ করে। তখন খেলা বাকি ছিল আরও পাঁচ ওভার। তবে, উভয় দলই ফলাফলের সম্ভাবনা কম দেখে ড্র মেনে নেয়, ফলে ম্যাচটি শেষ হয়।
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের বিদায়
এই টেস্ট ম্যাচটি ছিল শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ৪৫ বলে মাত্র ৮ রান করেন। আউট হওয়ার পর বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা তার সঙ্গে হাত মেলান এবং সম্মান প্রদর্শন করেন। মাঠের বাইরে থেকে সতীর্থরা হাততালি দিয়ে তাকে বিদায় জানান। প্রথম ইনিংসে তিনি ৬৯ বলে ৩৯ রান করেছিলেন। ম্যাথিউসের এই বিদায় শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের জন্য একটি আবেগঘন মুহূর্ত ছিল।
বাংলাদেশের প্রাপ্তি
যদিও ম্যাচটি ড্র হয়েছে, বাংলাদেশ দলের জন্য এই টেস্টে বেশ কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত দুটি দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করে দলকে শক্ত অবস্থানে রাখেন। প্রথম ইনিংসে তার ১৩৮ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৫ রান দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এছাড়া, মুশফিকুর রহিম প্রথম ইনিংসে ১৬৩ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন, যা বাংলাদেশের বড় সংগ্রহের ভিত্তি তৈরি করে।
বোলিংয়ে নাইম হাসান প্রথম ইনিংসে পাঁচটি উইকেট নিয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখান। তাইজুল ইসলামও দ্বিতীয় ইনিংসে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইনআপে চাপ সৃষ্টি করেন। এই পারফরম্যান্সগুলো বাংলাদেশের জন্য সিরিজের বাকি ম্যাচগুলোতে আত্মবিশ্বাস যোগাবে।
ম্যাচের তাৎপর্য
এই টেস্ট ম্যাচটি বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা উভয় দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বাংলাদেশ দল তাদের ব্যাটিং শক্তি প্রদর্শন করেছে, বিশেষ করে শান্ত ও মুশফিকের সেঞ্চুরির মাধ্যমে। অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কা তাদের প্রথম ইনিংসে ৪৮৫ রান করে প্রমাণ করেছে যে তাদের ব্যাটিং লাইনআপও দুর্বল নয়। তবে, দ্বিতীয় ইনিংসে তারা রান তাড়া করতে গিয়ে ধীরগতির ব্যাটিং করায় ম্যাচটি ড্র-তে শেষ হয়।
এই ড্র ফলাফল বাংলাদেশের জন্য মানসিকভাবে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তারা আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মাঠে নামবে। শ্রীলঙ্কার জন্য ম্যাথিউসের বিদায় একটি বড় ধরনের ক্ষতি, তবে তাদের তরুণ খেলোয়াড়দের এগিয়ে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
পরিসংখ্যান ও তথ্য
- বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৪৯৫/১০ (মুশফিকুর রহিম ১৬৩, নাজমুল হোসেন শান্ত ১৩৮)
- শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস: ৪৮৫/১০ (বাংলাদেশের চেয়ে ১০ রান পিছিয়ে)
- বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ২৮৫/৬ ডিক্লেয়ারড (নাজমুল হোসেন শান্ত ১২৫)
- শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংস: ৭২/৪ (৩২ ওভার, পাথুম নিশাঙ্কা ২৪)
- **বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে নাইম হাসান প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট, তাইজুল ইসলাম দ্বিতীয় ইনিংসে ২ উইকেট নেন।
উপসংহার
গলে অনুষ্ঠিত এই টেস্ট ম্যাচটি দুই দলের জন্যই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল। বাংলাদেশের ব্যাটিং শক্তি এবং শ্রীলঙ্কার প্রতিরোধ ম্যাচটিকে উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলেছিল। শান্ত ও মুশফিকের সেঞ্চুরি, নাইমের পাঁচ উইকেট এবং ম্যাথিউসের বিদায় এই ম্যাচের স্মরণীয় মুহূর্ত। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ কীভাবে এই আত্মবিশ্বাস বজায় রাখে, তা দেখার অপেক্ষায় থাকবে ক্রিকেটপ্রেমীরা।