বাংলাদেশ

নিখোঁজের ৫ দিন পর গাজীপুরে শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার

গাজীপুরের ধীরাশ্রম এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া চার বছর বয়সী শিশু নাবিলা কানিজ নাবার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিখোঁজের পাঁচ দিন পর সোমবার বিকেলে বাড়ির পাশে লাশ পাওয়া যায়, যা এলাকাবাসী এবং পরিবারকে দারুণ স্তম্ভিত করেছে।

নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ও খোঁজাখুঁজি

স্থানীয় সূত্র এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ৯ জুলাই নাবিলা তার পাশের বাড়িতে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে অনেকবার খোঁজাখুঁজি চালানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। এলাকাজুড়ে মাইকিং করে শিশু নিখোঁজের খবর ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং সাহায্য চাওয়া হয় খুঁজে পেতে।

বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার: চাচার চোখে লাশ

৫ দিনের অপেক্ষার পর সোমবার বিকেলে বিকাল চারটার দিকে, নাবিলার চাচা কুদ্দুস মিয়া বাড়ির পাশে এক বস্তা পড়ে থাকতে দেখেন। কৌতূহলবশত বস্তাটি খুলতেই তার চোখের সামনে এল নাবিলার বাঁধা হাত-মুখের সঙ্গে বস্তাবন্দি মরদেহ। পরিবারের সদস্যরা এই ভয়ংকর দৃশ্য দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে।

পুলিশ ও ময়নাতদন্তের পদক্ষেপ

খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহের অবস্থা দেখে এলাকাবাসী এবং পুলিশ 모두 চমকে যায়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শিশুটিকে পরিকল্পিতভাবে হাত-পা বেঁধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে ধারনা করা হচ্ছে।

মরদেহ দ্রুত শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য। ময়নাতদন্ত শেষে হত্যার প্রকৃত কারণ এবং সময় নির্ধারণ করা হবে। পুলিশ ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড হিসেবে তদন্ত শুরু করেছে এবং দ্রুত দোষীদের আইনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

সমাজে শিশু নিরাপত্তা সংকটের চিত্র

এই দুঃখজনক ও নৃশংস ঘটনায় আবারও উঠে এসেছে শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ। বিশেষ করে পারিবারিক ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে ছোট্ট শিশুদের ওপর প্রতারনা, অপহরণ ও হত্যার ঘটনা বাড়ছে। স্থানীয়রা বলেন, “এ ধরনের ঘটনায় আমরা অনেকটা ভয়ভীতি ও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হচ্ছি।”

শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আইন প্রয়োগে দ্রুততা আনয়নের দাবি জানানো হয়েছে।

ঘটনার তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থা

গাজীপুর পুলিশ প্রশাসন দ্রুত তদন্ত পরিচালনা করছে। নিখোঁজ হওয়ার সময় থেকে হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত বিভিন্ন তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ চলছে। পরিবারের সদস্যরা প্রত্যাশা করছেন, দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

এছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “এ ধরনের নৃশংস ঘটনা যাতে পুনরায় না ঘটে সেজন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় জোর দেওয়া হবে। বিশেষ করে শিশুদের নিরাপত্তা আইন কঠোর করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।”

শিশুর মৃত্যুর পিছনে কী কারণ থাকতে পারে?

শিশু নাবিলা কানিজ নাবার হত্যার রহস্য এখনো পুরোপুরি প্রকাশ পায়নি। তবে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টের পর সঠিক কারণ জানা যাবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পারিবারিক ও সামাজিক অবহেলা, শিশুদের প্রতি সহিংসতা এবং অপরাধ প্রবণতা বাড়ার কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তাই সমাজের সকল স্তরে শিশুদের প্রতি দায়িত্ববোধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

সমবেদনা ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া

নাবিলার হত্যার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে স্থানীয় ও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমবেদনা প্রকাশ পেয়েছে। অনেকেই শিশুর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন। একই সঙ্গে সমাজের প্রতি বার্তা দিয়েছেন, যেন সবাই শিশুদের নিরাপত্তায় আরও সচেতন হয়।

বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও শিশু কল্যাণ সংস্থা এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দাবি করেছে, সরকারকে শিশুদের প্রতি সহিংসতা ও নিপীড়ন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

নাবিলা কানিজ নাবার হত্যা কেবল একটি পরিবারের নয়, পুরো সমাজের জন্য একটি সতর্কবার্তা। শিশুদের নিরাপত্তা এবং তাদের জীবন রক্ষা করাই আমাদের প্রথম দায়িত্ব। প্রতিটি শিশু যেন নিরাপদ পরিবেশে বড় হতে পারে, সেই জন্য সকলের সহযোগিতা ও সচেতনতা প্রয়োজন।

গাজীপুরে এই শোকাবহ ঘটনার তদন্তে দ্রুত সাফল্য কামনা করে সবাই আশা রাখছে দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার এবং আইনের আওতায় আনা হবে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button