পাকিস্তানের কাছেও হেরে আরও অপেক্ষায় বাংলাদেশের মেয়েরা

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হেরে বসে রইল বাংলাদেশের নারী দল। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে পরাজয়ের ফলে সরাসরি জায়গা পাকা করতে পারেনি ২০২৫ সালের নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে। এখন সব আশা গিয়ে ঠেকেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও থাইল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচের ফলাফলের ওপর।
পাকিস্তানের কাছে হার: বিশ্বকাপ স্বপ্নে ধাক্কা
লাহোরের সিটি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন গ্রাউন্ডে আজকের ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৭৮ রান। দলের পক্ষে রিতু মনি ৪৮ এবং ফাহিমা খাতুন ৪৪ রানের কার্যকর ইনিংস খেলেন। তবে শুরুটা ছিল হতাশাজনক—উচ্চাশা অনুযায়ী রান তুলতে পারেননি শুরুর ব্যাটাররা।
পাকিস্তান ইনিংসে শুরুটা ভালো হলেও বাংলাদেশ প্রথম ধাক্কাটা দেয় দ্বিতীয় বলেই। মারুফা আক্তার এলবিডব্লিউ করেন ওপেনার শাওয়াল জুলফিকারকে। কিন্তু এরপর সিদরা আমিন (৩৭) ও মুনিবা আলীর (৬৯) ৮০ রানের জুটি এবং পরে মুনিবা-আলিয়া রিয়াজের (৫২*) ৭৪ রানের জুটিতে ম্যাচ বাংলাদেশের হাতছাড়া হয়ে যায়।
পাকিস্তান মাত্র ৩৯.৪ ওভারে ৭ উইকেটে লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে।
ম্যাচ পয়েন্ট হাতছাড়া হলো তৃতীয়বারের মতো
২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার আশা নিয়ে বাছাইপর্বে খেলতে আসে বাংলাদেশ। এই টুর্নামেন্টে টানা তিনটি ম্যাচ জিতে আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর হয়ে ওঠে টাইগ্রেসরা। এরপর আসে তাদের প্রথম বড় পরীক্ষায়—ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সেই ম্যাচে হেরে যায় বাংলাদেশ।
আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল যেন তৃতীয় ‘ম্যাচ পয়েন্ট’। কিন্তু সেই সুযোগও হাতছাড়া হয়। এখন সব আশার প্রদীপ জ্বলছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম থাইল্যান্ড ম্যাচে।
এখন কীভাবে বিশ্বকাপে যেতে পারে বাংলাদেশ?
বাংলাদেশের বর্তমান নেট রান রেট (NRR) +০.৬৩৯। আজকের হারেও তারা এখনো শীর্ষ তিনে থাকার লড়াইয়ে আছে। কিন্তু এখন নির্ভর করতে হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম থাইল্যান্ড ম্যাচের ওপর।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ যদি থাইল্যান্ডকে খুব বড় ব্যবধানে পরাজিত না করে, তাহলে বাংলাদেশই পাবে বিশ্বকাপে খেলার টিকিট।
তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের ব্যবধান এবং ওভার সংখ্যা খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে। বাংলাদেশকে টপকে যেতে হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নির্দিষ্ট ওভারের মধ্যেই জিততে হবে, যার নির্ভরতা থাইল্যান্ডের ইনিংসের স্কোরের ওপর।
এই ম্যাচের আগ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের নেট রান রেট ছিল -০.২৮৩, যা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। অতএব, বাংলাদেশকে পেছনে ফেলতে হলে ক্যারিবীয়দের জন্য কঠিন এক সমীকরণ মেলাতে হবে।
কেন বাংলাদেশ ম্যাচগুলো হারছে?
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ দলের পরপর দুটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ব্যাটিং ব্যর্থতা ছিল বড় কারণ। ১৭৮ রানের মতো নিচু স্কোর আন্তর্জাতিক মানের বোলিং ইউনিটের বিরুদ্ধে রক্ষা করা খুবই কঠিন। বিশেষ করে যখন প্রতিপক্ষ পাকিস্তান বা ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো অভিজ্ঞ দল।
রিতু মনি ও ফাহিমা খাতুনের ইনিংস ছাড়া অন্যরা একদমই ভরসা দিতে পারেননি। প্রথম চার ব্যাটারই ২০ রানের নিচে আউট হন। শেষদিকে ফাহিমা ও রিতুর জুটি দলকে সম্মানজনক স্কোরে পৌঁছাতে কিছুটা অবদান রাখে।
বোলিংয়েও শুরুটা ভালো করলেও মাঝপথে ছন্দ হারায় দল। বিশেষ করে স্পিন বোলারদের ওপর চাপ তৈরি করতে পারেনি টাইগ্রেসরা।
আগামী বিশ্বকাপের চিত্র
২০২৫ সালের নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে ভারতে, সেপ্টেম্বরে। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে মোট ৮টি দল, যার মধ্যে শীর্ষ পাঁচটি আইসিসির র্যাংকিংয়ে থাকা দল স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্বাচিত হবে। বাকি তিনটি স্থান নির্ধারিত হবে এই বাছাইপর্বের মাধ্যমে।
বাংলাদেশ যদি সুযোগ পায়, তবে এটি হবে তাদের টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ অংশগ্রহণ। ২০২২ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অভিষেক হয়েছিল, যেখানে তারা পাকিস্তানকে হারিয়ে প্রথম বিশ্বকাপ জয়ও পেয়েছিল।
টাইগ্রেসদের আশার আলো
বিশ্বকাপে সুযোগ না পেলেও বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের সামগ্রিক উন্নতির কথা স্বীকার করছেন বিশেষজ্ঞরা। নতুন প্রতিভাবান খেলোয়াড় উঠে আসছেন, দল গঠনেও রয়েছে ভারসাম্য। তবে বড় ম্যাচের চাপ নিতে না পারার সমস্যা এখনও কাটেনি।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আগামি মাসে নারী দলের জন্য বিশেষ ক্যাম্প আয়োজন করতে যাচ্ছে, যেখানে মানসিক প্রশিক্ষণ, চাপ সামলানোর কৌশল ও ফিটনেস উন্নয়নের ওপর জোর দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ নারী দলের জন্য সময়টা কঠিন হলেও এখনো সব হারিয়ে যায়নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ–থাইল্যান্ড ম্যাচ থেকে একটা ইতিবাচক ফল পেলেই টাইগ্রেসদের দেখা যাবে ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলতে। এখন শুধু অপেক্ষা, প্রার্থনা আর আশা।