বিশ্ব

রাশিয়ার স্কুলে সামরিক প্রশিক্ষণ: দেশপ্রেমিক যোদ্ধা হয়ে উঠছে শিক্ষার্থীরা

রাশিয়ার স্কুল শিক্ষার্থীরা এখন দেশপ্রেম এবং সামরিক দক্ষতা অর্জনের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছে। রাশিয়ার রোস্তভ এলাকায়, ইউক্রেন সীমান্ত সংলগ্ন একটি ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত ‘রুট মার্চ’ অনুষ্ঠানে ৮ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এই প্রশিক্ষণের মধ্যে রয়েছে অস্ত্র পরিচালনা, শত্রু মোকাবেলার কৌশল এবং দলবদ্ধ কাজের দক্ষতা। মূল উদ্দেশ্য হলো, শিশুদের ছোটবেলা থেকেই আত্মবিশ্বাসী, দেশপ্রেমিক ও শারীরিকভাবে শক্তিশালী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।

শিশুদের জন্য কড়া সামরিক রুট মার্চ

ক্যাম্পে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে ছোট ছোট শিশুরা কঠোর প্রশিক্ষণে নিযুক্ত। কেউ সেনাবাহিনীর পূর্ণ ইউনিফর্মে, কেউ সাধারণ পোশাকে। কারও হাতে খেলনা বন্দুক, কারও হাতে বাস্তব রাইফেল—সবাই শত্রু মোকাবেলার কৌশল অনুশীলন করছে। নদীতীরের ধারে পিঠে ভর দিয়ে, কাঁদায় জল-মাখা কঠোর অনুশীলন হচ্ছে।

শিশুরা ক্লান্ত হলেও তাদের চোখে-মুখে স্পষ্ট দেশপ্রেমের ছাপ দেখা যায়। তাদের মধ্যে অনেকেই ভবিষ্যতে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে আগ্রহী।

এক প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া শিশু বলেন, “আমরা মোট তিনটি রাউন্ড দৌড়েছি। খুব মজা হয়েছে। এমন আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ।”
অন্য একজন যোগ করেন, “ভবিষ্যতে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চাই। তাই এই প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজের দেশের সেবা করতে চাই।”

অভিভাবকদের দৃষ্টিভঙ্গি

কিছু অভিভাবক জানিয়েছেন, সন্ধ্যার পর বাচ্চারা একেবারে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তবু প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর তাদের মুখে সন্তুষ্টি দেখা যায়। একজন অভিভাবক বলেন, “যখন জিজ্ঞেস করি তারা হাল ছাড়বে কিনা, চিৎকার করে বলে—‘কখনোই না!’”

শিশুদের প্রশিক্ষণের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন ইউক্রেন যুদ্ধে আহত রাশিয়ান সেনারা। তাঁদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া হয় প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া শিশুদের সাথে। এতে শিশুরা শিখছে কেবল শারীরিক কৌশলই নয়, আত্মবিশ্বাস এবং দায়িত্ববোধও।

সেনাদের অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ পদ্ধতি

রাশিয়ান মেরিন ব্রিগেডের সদস্য আলেক্সান্ডার শোপিন বলেন, “আমার মেয়ে এখানে অংশ নিয়েছে। ও অনেক খুশি। আমি নিজের অভিজ্ঞতা শিশুদের কাছে তুলে ধরতে পেরে আনন্দিত। দলবদ্ধভাবে কাজ করার মাধ্যমে তারা একদিন এক পরিবার হয়ে উঠবে।”

প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ায় শিশুদের শারীরিক ক্ষমতা, মানসিক দৃঢ়তা, দলবদ্ধ কাজের দক্ষতা এবং শৃঙ্খলা বিকাশের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া, তারা দেশের প্রতি দায়বোধ এবং আত্মনির্ভরশীল হওয়ার মানসিকতা অর্জন করছে।

শিশু অধিকার সংস্থার সমালোচনা

শিশুদের এই ধরনের সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কিছু শিশু অধিকার সংস্থা। তাদের দাবি, ছোট বাচ্চাদের হাতে অস্ত্র দেওয়া এবং যুদ্ধসংক্রান্ত কৌশল শেখানো অনুচিত। তবে রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ যুক্তি দেখাচ্ছে, এই প্রশিক্ষণ শিশুদের শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্তিশালী করে এবং তাদের মধ্যে দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধ জন্মায়।

প্রশিক্ষণের প্রভাব ও লক্ষ্য

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ছোটবেলা থেকেই শিশুকে এই ধরনের শৃঙ্খলাবদ্ধ ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ পরিবেশে রাখা তাদের জীবনের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। শিশুরা শিখছে দলগত কাজের গুরুত্ব, সমস্যা সমাধানের কৌশল এবং কিভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়।

রাশিয়ার সেনাবাহিনী এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আশা করছে, ভবিষ্যতের যোদ্ধারা দেশের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকবে। এতে শিশুদের মধ্যে সাহস, দৃঢ়তা, এবং দেশভক্তি গড়ে ওঠে।

শিশুরা কিভাবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে?

প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু করে বিকেলের মধ্যেই কঠোর অনুশীলন চলে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • দৌড় এবং শারীরিক ব্যায়াম: শিশুরা বিভিন্ন রুটে দৌড়াদৌড়ি করছে।
  • অস্ত্র পরিচালনা ও কৌশল শেখা: খেলনা ও বাস্তব রাইফেল ব্যবহার করে।
  • দলবদ্ধ কাজ ও কম্যান্ড প্রশিক্ষণ: একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা এবং নির্দেশ মানার অভ্যাস গড়ে তোলা।
  • প্রাকৃতিক পরিবেশে অনুশীলন: নদীর ধারে, বনের মধ্যে, এবং খোলা মাঠে কঠোর প্রশিক্ষণ।

সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি

যদিও প্রশিক্ষণ নিয়ে সমালোচনা আছে, অনেক অভিভাবক ও সমাজকর্মী মনে করছেন, এটি শিশুদের মানসিক ও শারীরিকভাবে মজবুত করতে সাহায্য করছে। শিশুদের মধ্যে দেশপ্রেম, সাহস এবং আত্মনির্ভরশীলতার চেতনা জন্মাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

রাশিয়ার এই ধরনের শিশু সামরিক প্রশিক্ষণ নতুন নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে দেশটি শিশুদের জন্য মিলিটারী ক্যাম্প এবং কৌশল প্রশিক্ষণ আয়োজন করেছে। ইউক্রেন সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় এই উদ্যোগ আরও বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এটিকে শিশুদের প্রতি সরকারের মনোযোগ এবং সামরিক প্রস্তুতির একটি অংশ হিসেবে দেখছেন।

রাশিয়ায় শিশুদের সামরিক প্রশিক্ষণ যেভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তা ছোটদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস, শৃঙ্খলা, দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধ গড়ে তোলার একটি চেষ্টা। যদিও এটি আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত, রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকরা মনে করছেন, এটি ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয়। শিশুরা শিখছে শুধুই অস্ত্র ব্যবহার নয়, দলবদ্ধভাবে কাজ করা, কঠোর পরিশ্রমের মূল্য বোঝা এবং নিজের দেশের জন্য অবদান রাখার মানসিকতা।

রাশিয়ার এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিশুদের শিক্ষা ও সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু করেছে।

MAH – 12444 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button