খেলাধুলায় ‘চ্যাম্পিয়ন’ ফিলিস্তিনি কিশোরের অনাহারে মৃত্যু

ইসরাইলি অবরোধ আর মানবিক সংকটের মধ্যে গাজায় অনাহারে মারা গেল ১৭ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি কিশোর আতেফ আবু খাতের। খেলাধুলায় স্থানীয় পর্যায়ে সেরা এই কিশোরের মৃত্যু গাজায় খাদ্য সংকটের ভয়াবহ চিত্র আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।
ঘটনাটি কীভাবে ঘটল
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় মানবিক বিপর্যয়ের কারণে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আতেফ আবু খাতের নামের এই কিশোর খেলাধুলায় ছিল অত্যন্ত প্রতিভাবান। স্থানীয় প্রতিযোগিতায় তিনি চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। কিন্তু মাসের পর মাস পর্যাপ্ত খাবার না পাওয়ায় অপুষ্টিতে ভুগে অবশেষে তার মৃত্যু হয় গাজার আল শিফা হাসপাতালে।
গত শনিবার (২ আগস্ট) দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরিবারের সদস্যরা জানান, আগে তার ওজন ছিল ৭০ কেজি, কিন্তু গত কয়েক মাসের অনাহারে তা নেমে যায় ২৫ কেজিতে।
গাজায় ভয়াবহ মানবিক সংকট
মার্চ মাস থেকে গাজায় শুরু হওয়া সর্বাত্মক অবরোধের ফলে খাদ্য, পানি এবং ওষুধের প্রবেশ প্রায় সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার সতর্ক করলেও পরিস্থিতি উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই অবরোধের কারণে চলমান খাদ্য সংকট ও অপুষ্টিতে ইতিমধ্যেই ১৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৯৩ জন শিশু।
মানবিক সহায়তার কিছু চালান সীমিত আকারে ঢুকলেও, সেগুলোও পর্যাপ্ত নয়। অনেক সময় ত্রাণ নিতে আসা সাধারণ মানুষ ইসরাইলি সেনাদের গুলির শিকার হচ্ছে। ফলে মানুষজন আতঙ্কে খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়াতেও ভয় পাচ্ছে।
খেলাধুলার চ্যাম্পিয়ন থেকে মৃত্যুর দিকে
আতেফ আবু খাতের গাজার স্থানীয় খেলাধুলার জগতে ছিল এক উজ্জ্বল নাম। ফুটবল, দৌড়, এবং বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছিল।
কিন্তু এই প্রতিভাবান কিশোরের জীবন ও স্বপ্ন থেমে যায় ক্ষুধার কাছে। চিকিৎসকরা জানান, দীর্ঘ সময় ধরে পুষ্টিকর খাবার না পাওয়ায় তার শরীর ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ে। অসুস্থতার কারণে শেষ পর্যন্ত তাকে হাসপাতালে আনা হলেও চিকিৎসকরা আর তাকে বাঁচাতে পারেননি।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, “সে কখনো অসুস্থ ছিল না। কেবল অনাহারের কারণে তার শরীরের শক্তি ফুরিয়ে যায়। আমরা কিছুই করতে পারিনি।”
ভিডিও এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
আতেফের মৃত্যুর পরপরই সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায়, এক ব্যাগের ভেতর তার শীর্ণকায় দেহ রাখা হয়েছে। আত্মীয়-স্বজনেরা শোকে কাতর হয়ে তাকে বিদায় জানাচ্ছেন।
ভিডিওটিতে আতেফের এক আত্মীয় তার শরীরের হাড় স্পর্শ করে দেখাচ্ছেন, যা দেখে বোঝা যায় সে কতটা অপুষ্টিতে ভুগছিল। এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেটিজেনদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
আন্তর্জাতিক মহলের নিন্দা
এই ঘটনার পর গাজার মানুষের মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে আবারও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বলছে, গাজার খাদ্য সংকট এখন দুর্ভিক্ষে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ক্ষুধার কারণে নতুন নতুন মৃত্যু ঘটছে, অথচ বিশ্ব সম্প্রদায় তা রোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, “এটি শুধুমাত্র একটি মৃত্যু নয়, এটি গাজার মানুষের অমানবিক অবস্থার প্রতীক। যতদিন অবরোধ চলবে, ততদিন এরকম মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকবে।”
ভবিষ্যতের উদ্বেগ
এই মৃত্যু গাজা উপত্যকায় চলমান সংকটের ভয়াবহতাকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অবরোধ না ভাঙলে এবং পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ না হলে আগামী দিনে এই ধরনের মৃত্যুর ঘটনা আরও বাড়বে।
গাজার সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছে, “কতদিন আর বিশ্ব চুপ করে থাকবে?”
শেষ কথা:
আতেফ আবু খাতেরের মৃত্যু গাজায় চলমান দুর্ভিক্ষ ও মানবিক সংকটের এক নির্মম চিত্র। একজন ক্রীড়াচ্যাম্পিয়নের স্বপ্ন ক্ষুধায় ভেঙে পড়ার এই ঘটনাটি গোটা বিশ্বের বিবেককে নাড়া দিচ্ছে। এখন বিশ্ব সম্প্রদায়ের দায়িত্ব এই সংকট নিরসনে কার্যকর ভূমিকা নেওয়া।
এম আর এম – ০৬৬৮, Signalbd.com