বিশ্ব

মালয়েশিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে হাজারো মানুষ

মালয়েশিয়ায় প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের পদত্যাগের দাবিতে হাজারো মানুষ রাজধানী কুয়ালালামপুরের রাস্তায় নেমে এসেছে। জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়, প্রতিশ্রুত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়নে ব্যর্থতা এবং সরকারের প্রতি আস্থাহীনতার কারণে এই বিশাল বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

রাজধানীতে জনস্রোত, বিরোধী দলের নেতৃত্বে বিক্ষোভ

শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল নিয়ে মানুষ জড়ো হয় স্বাধীনতা স্কয়ারে (ইন্ডিপেনডেন্স স্কয়ার)। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকে আয়োজিত এই বিক্ষোভে সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতারা অংশ নেন। পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১৮ হাজার মানুষ এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।

বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল নানা ধরনের প্ল্যাকার্ড, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের আহ্বান লেখা ছিল। স্লোগানে মুখরিত পুরো এলাকাজুড়ে বারবার শোনা যাচ্ছিল, “তুরান আনোয়ার” এবং “সরকার পদত্যাগ করো” ধ্বনি।

সরকারের প্রতি হতাশা ও ক্ষোভের পেছনের কারণ

২০২২ সালের নভেম্বরে ক্ষমতায় আসেন আনোয়ার ইব্রাহিম। তখন তিনি দুর্নীতি দমন, স্বচ্ছতা, অর্থনৈতিক সংস্কার এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেলেও তার এসব প্রতিশ্রুতির সুফল জনগণ অনুভব করতে পারছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, নতুন কর এবং জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষ চরম সমস্যার মধ্যে পড়েছে।

৩৫ বছর বয়সী বিক্ষোভকারী ফাউজি মাহমুদ বলেন, “আনোয়ার ইব্রাহিম দেশ চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু আমরা শুধু আশ্বাস পাচ্ছি। বাস্তবে কোনো সুফল নেই। বাজারে দাম দিন দিন বাড়ছে, অথচ সমাধান নেই।”

সাম্প্রতিক সরকারি পদক্ষেপেও জনঅসন্তোষ কমেনি

বিক্ষোভের আগেই জনসাধারণের ক্ষোভ প্রশমনে কিছু পদক্ষেপ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার। এর মধ্যে ছিল নগদ আর্থিক সহায়তা, দরিদ্র পরিবারকে বাড়তি সুবিধা এবং জ্বালানির দাম সামান্য কমানোর প্রতিশ্রুতি।

সরকার ঘোষণা করে, ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে প্রতিটি মালয়েশিয়ান নাগরিককে এককালীন ১০০ রিঙ্গিত দেওয়া হবে। পাশাপাশি মধ্যমানের অকটেনযুক্ত জ্বালানির দাম ২.০৫ রিঙ্গিত থেকে কমিয়ে ১.৯৯ রিঙ্গিত করা হবে।

তবে এসব স্বল্পমেয়াদি উদ্যোগ বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ প্রশমিত করতে ব্যর্থ হয়। বিক্ষোভকারীরা জানান, এসব সাময়িক সুবিধা নয়, দীর্ঘমেয়াদি বাস্তব সংস্কার চান তারা।

বড় রাজনৈতিক সমাবেশে প্রভাবশালী নেতাদের উপস্থিতি

বিক্ষোভে দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ এবং মুহিউদ্দিন ইয়াসিন অংশ নেন। এছাড়া পার্টি ইসলাম মালয়েশিয়ার (পিএএস) প্রেসিডেন্ট আব্দুল হাদি আওয়াং-ও উপস্থিত ছিলেন। বিরোধীদের মতে, এই সরকারের সময় বিচারব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ এবং দুর্নীতিবিরোধী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

বিক্ষোভে উপস্থিত একজন নারী শিক্ষার্থী নূর শাহিরাহ বলেন, “নতুন কর ও বিদ্যুতের অতিরিক্ত চার্জ শেষ পর্যন্ত আমাদের ওপরই প্রভাব ফেলবে। সাধারণ মানুষ টিকতে পারছে না।”

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, আনোয়ার সরকারের ওপর এই আন্দোলন বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, কুয়ালালামপুরে গত কয়েক বছরে এটিই অন্যতম বৃহৎ বিক্ষোভ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ যদি দ্রুত বাস্তবায়িত না হয়, তবে জনঅসন্তোষ আরও বাড়বে এবং ভবিষ্যতে এই আন্দোলন আরও বিস্তৃত আকার নিতে পারে।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

বিক্ষোভের ফলে মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিরোধীরা জানিয়েছে, জনগণের দাবি মানা না হলে আরও বড় কর্মসূচি দেওয়া হবে। অন্যদিকে সরকার বলছে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তারা কাজ চালিয়ে যাবে এবং ধৈর্য ধরতে জনগণকে আহ্বান জানিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, আগামী কয়েক মাস পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় সেটিই এখন দেখার বিষয়।

এম আর এম – ০৫৩৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button