বাংলাদেশ

আন্দোলনকারী ছাত্রদের কাপড় খুলে ভিডিও করে রেখে দিতেন তৌহিদ আফ্রিদি, দাবি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর

ইউটিউবার তৌহিদ আফ্রিদির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছে রাষ্ট্রপক্ষ। আদালতে জানানো হয়, আন্দোলনের সময় ছাত্রদের জিম্মি করে তাদের কাপড় খুলে ভিডিও ধারণ করতেন তিনি। এ ঘটনায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ইউটিউবার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদিকে হাজির করা হলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতে গুরুতর অভিযোগ করেন। তিনি জানান, আন্দোলন চলাকালে তৌহিদ আফ্রিদি শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে তাদের কাপড় খুলিয়ে ভিডিও ধারণ করতেন এবং সেগুলোকে ভয় দেখানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতেন। শুনানি শেষে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

রাষ্ট্রপক্ষের দাবি

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নয়ন আদালতে বলেন, “তৌহিদ আফ্রিদি একজন মিডিয়া সন্ত্রাস। তিনি তার ইউটিউব ও ফেসবুক প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে ছাত্রদের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তার করেছেন। আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছাত্রদের নগ্ন ভিডিও ধারণ করে জিম্মি করে রাখতেন।”

এছাড়া তিনি আরও দাবি করেন, তৌহিদ আফ্রিদি ছাত্ররাজনীতি, বিভিন্ন দল ও সংগঠনকে উসকে দিতেন এবং এর মাধ্যমে সহিংসতায় ভূমিকা রাখতেন।

রিমান্ডে নেওয়ার কারণ

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানান, মামলার তদন্তের স্বার্থে তৌহিদ আফ্রিদিকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। আন্দোলনের সময় তার ভূমিকা, ভিডিও ধারণের উদ্দেশ্য এবং সেগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য জানতে তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

এদিন সিআইডির পক্ষ থেকে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে আদালত তা আংশিক মঞ্জুর করে পাঁচ দিনের রিমান্ড অনুমোদন করে।

আসামিপক্ষের যুক্তি

তৌহিদ আফ্রিদির পক্ষে আইনজীবী খায়রুল ইসলাম বলেন, তার মক্কেলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন। মামলার বাদী নিজেও আগে হলফনামায় জানিয়েছিলেন, তথ্যগত ভুলের কারণে তৌহিদ আফ্রিদির নাম যুক্ত হয়েছে। এছাড়া তৌহিদ আফ্রিদি বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ, কিডনি ও লিভারের জটিলতায় ভুগছেন।

আইনজীবী আদালতে দাবি করেন, তার অসুস্থতার সমস্ত কাগজপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনায় রিমান্ড বাতিল ও জামিন চাওয়া হলেও আদালত তা নাকচ করে দেন।

গ্রেফতারের প্রেক্ষাপট

গত রোববার রাতে বরিশাল থেকে সিআইডি তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেফতার করে। এর আগে ১৭ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থেকে তার বাবা মাইটিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিনি বর্তমানে একই মামলায় কারাগারে আছেন।

মামলার সূত্র অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মো. আসাদুল হক বাবু নামে এক ছাত্র নিহত হন। ওই ঘটনায় করা মামলায় তৌহিদ আফ্রিদিকে ১১ নম্বর আসামি করা হয়।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া

তৌহিদ আফ্রিদির গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। কেউ কেউ তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন, আবার অনেকে তার অসুস্থতার কারণে মানবিক দিক বিবেচনার কথা বলছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, এই মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।

পরিশেষে

তৌহিদ আফ্রিদির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ গুরুতর। আন্দোলনকারী ছাত্রদের কাপড় খুলে ভিডিও ধারণের অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয়, তবে সেটি কেবল অপরাধই নয়, বরং মানবাধিকারেরও গুরুতর লঙ্ঘন। এখন দেখার বিষয়—আদালত ও তদন্ত সংস্থার পরবর্তী পদক্ষেপ কোন পথে অগ্রসর হয়।

এম আর এম – ১০৩৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button