মাদকের নিয়ন্ত্রণ নিতে জেনেভা ক্যাম্পে সংঘর্ষ, চলছে পুলিশের অভিযান

সোমবার বিকেল চারটার পর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হয়। মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণের জন্য সংঘর্ষের জেরে এলাকায় উত্তাপ সৃষ্টি হয়। অভিযানের অংশ হিসেবে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ, যাদের মধ্যে ফয়সাল নামে এক ব্যক্তি চাপাতিসহ গ্রেফতার হয়েছেন। আরেকজন সেলিম নামে আরও একজনকে আটক করা হয়।
মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জুয়েল রানা জানিয়েছেন, মাদক ব্যবসায়ীরা নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ ক্রমাগত অভিযান অব্যাহত রাখবে বলে তিনি জানান।
সংঘর্ষের পেছনের কারণ
জেনেভা ক্যাম্পে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শাহনেওয়া সান্নু ও পিচ্চি রাজা নামের দুই গ্রুপের মধ্যে মাদক ব্যবসার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ গড়ে ওঠে।
গত বৃহস্পতিবার থেকে টানা পাঁচ দিন ধরে এই সংঘর্ষ চলে আসছে। সংঘর্ষের সময় ককটেল বিস্ফোরণ ও ধারালো অস্ত্র ব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে। এতে ২০ বছর বয়সী শাহ আলম নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। তার মৃত্যু ক্যাম্পের বাসিন্দাদের মধ্যে ভয়ের আবহ তৈরি করেছে।
প্রভাব ও স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্বেগ
সংঘর্ষ ও অভিযানকালে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি গুরুতর আহত হন। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের চক্রান্ত চালিয়ে এলাকায় অবাধ আধিপত্য বিস্তার করছে। তারা মাদক কারবারে জড়িত ব্যক্তি ও গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জুয়েল রানা জানান, মাদক ব্যবসায়ীদের মাঝে আধিপত্য বিস্তার রোধে পুলিশের যৌথ অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, “আমরা এই ক্যাম্পে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি, কিন্তু জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও তারা সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে।”
মাদক কারবারের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব
মাদক ব্যবসার এই অবাধতা ও সংঘর্ষ স্থানীয় জনগণের জীবন যাত্রায় বিরূপ প্রভাব ফেলছে। শিশু ও যুবকদের মধ্যেও এই অবৈধ কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে। জেনেভা ক্যাম্পের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু পুলিশি অভিযানই যথেষ্ট নয়; সামাজিক সচেতনতা এবং যুবকদের জন্য সঠিক পথ দেখানো জরুরি। পাশাপাশি, প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন যাতে মাদক ব্যবসার শেকড় ধ্বংস করা যায়।
প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
জেলা প্রশাসন ও পুলিশ মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারা জানিয়েছে, মাদক নির্মূলের জন্য নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি, সমাজকে মাদকমুক্ত রাখতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও পুনর্বাসনের কার্যক্রমও শুরু করা হবে।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং যারা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
মাদক বিরোধী কার্যক্রমে সামাজিক ভূমিকা
মাদক সমস্যা শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব নয়, এটি সমগ্র সমাজের সমস্যাও বটে। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় কমিউনিটির সহযোগিতা ছাড়া এই সমস্যা মোকাবিলা করা কঠিন। সামাজিক শিক্ষার মাধ্যমে যুব সমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখা সম্ভব।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রতিটি পরিবারকে সচেতন হতে হবে এবং যুবকদের জন্য শিক্ষামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে যাতে তারা মাদকসেবনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অবগত থাকে।
পরিস্থিতির পরবর্তী পর্যায়
জেনেভা ক্যাম্পের মাদক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলমান সংঘর্ষ ও পুলিশের অভিযান ভবিষ্যতে কী রূপ নেবে, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে পুলিশের ক্রমাগত অভিযান ও স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা এই পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের জন্য আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিই একমাত্র পথ। নতুন প্রজন্মকে মাদক থেকে দূরে রাখতে সমগ্র জাতির সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
এম আর এম – ০৮০৮, Signalbd.com