আঞ্চলিক

বরগুনায় নিজ ঘর থেকে স্ত্রীর গলাকাটা ও স্বামীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

বরগুনা সদর উপজেলার ৫নং আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ ইটবারিয়া এলাকার মোল্লা বাড়ি থেকে সোমবার সকালে এক মর্মান্তিক ঘটনা সামনে এসেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই বাড়িতে স্বপন মোল্লা (৩২) এবং তার স্ত্রী আকলিমা মোল্লা (২৭)-এর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। স্বপনের মরদেহ ঘরের মধ্যে ঝুলন্ত অবস্থায়, আর আকলিমার মরদেহ গলাকাটা অবস্থায় পাওয়া গেছে। একই সময়ে, দম্পতির দুই কন্যা শিশু — পাঁচ বছরের সাদিয়া এবং এক বছরের ছোট কন্যা — অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

শিশুরা জানিয়েছিল অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন সকালে সাদিয়া তার ফুফু রাজিয়ার কাছে গিয়ে জানায়, “মা কথা বলছে না।” পরে রাজিয়া বাড়িতে গেলে মরদেহ দেখে চিৎকার করেন। আশপাশের মানুষ ও স্বজনরা দ্রুত ছুটে আসেন এবং পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মরদেহ উদ্ধার করে। পুলিশ বাড়িটিকে ক্রাইম সীন হিসেবে ঘিরে রেখেছে এবং তদন্ত শুরু হয়েছে।

নিহত স্বপনের ভাই কবির মোল্লা বলেন, “সাদিয়া এসে বলল তার মা কথা বলছে না। আমি প্রথমে মনে করি আমাদের মাঝের সাধারণ ঝগড়া। কিন্তু পরে আমার এক চাচাতো বোন বাড়িতে গিয়ে মরদেহ দেখে চিৎকার করলে আমরা সবাই ছুটে যাই।”

নিহত আকলিমার বাবা মো. আব্বাস বলেন, “ফজরের সময় খবর পেয়ে আমি বাড়িতে গেলাম। দেখি ঘরে রক্তমাখা অবস্থায় সন্তানদের মা ও স্বামী মৃত অবস্থায়। আমরা বুঝতে পারছি না, এটি পারিবারিক ঝগড়ার কারণে হয়েছে নাকি অন্য কোনো কারণ আছে।”

পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে

বরগুনা জেলা পুলিশ ও ক্রাইম অ্যান্ড অপস বিভাগ তদন্তে নিয়োজিত। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. জহুরুল ইসলাম হাওলাদার জানান, “ঘটনাস্থলে স্বপন মোল্লার ঝুলন্ত এবং আকলিমার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে এবং ময়নাতদন্তের মাধ্যমে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ধারণ করা হবে। ডিবি পুলিশ ও সিআইডি সদস্যরা তদন্তে সহযোগিতা করছেন। প্রাথমিকভাবে ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।”

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, ঘটনাটি পারিবারিক অশান্তি বা মানসিক চাপের কারণে ঘটতে পারে। তবে হত্যাকাণ্ড নাকি আত্মহত্যার ঘটনা তা নির্ধারণের জন্য আরও তদন্ত চলছে।

স্থানীয়দের বক্তব্য

স্থানীয়রা জানান, স্বপন ও আকলিমা দম্পতি সাধারণ জীবন যাপন করতেন। স্বপন ছোট ব্যবসায় জড়িত ছিলেন, আর আকলিমা ঘর সংসারের দায়িত্বে ছিলেন। প্রতিবেশীরা বলেন, “এ ধরনের ঘটনা আমাদের এলাকায় কখনো ঘটেনি। তাই পুরো এলাকা এখন স্তব্ধ এবং শোকময় পরিবেশ বিরাজ করছে।”

স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, “বাড়ির পাশে ছোট শিশুদের অবস্থায় দেখা গেছে। এটি সত্যিই হৃদয়বিদারক। শিশুরা এখন সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আমাদের সবাই তাদের নিরাপদ রাখার চেষ্টা করছি।”

মনস্তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপট

ময়নাতদন্ত এবং পুলিশি তদন্তের পাশাপাশি মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শদাতারা বলছেন, পারিবারিক অশান্তি বা মানসিক চাপ অনেক সময় এমন চরম পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে, সামাজিক এবং আর্থিক চাপের কারণে মানসিক সমস্যায় ভুগে কেউ এমন চরম পদক্ষেপ নিতে পারে।

মনোবিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলছেন, “যদি পারিবারিক মধ্যে চাপ, মানসিক সমস্যা বা ঝগড়া দীর্ঘদিনের হয়, তবে তা অতি সংবেদনশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। শিশুদের মানসিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবচেয়ে জরুরি।”

শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ

এই মর্মান্তিক ঘটনার সময় দম্পতির দুই কন্যা শিশু অক্ষত রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ শিশুটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তৎপর হয়েছে। সামাজিক কল্যাণ দফতর শিশুদের যত্ন এবং মানসিক সহায়তার ব্যবস্থা করছে।

স্থানীয় সেবা সংস্থা জানিয়েছে, “শিশুদের মানসিক সহায়তা এবং নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা হবে। তাদের সঙ্গে স্থানীয় শিক্ষক ও পরামর্শদাতারা কাজ করবেন যাতে শিশুদের মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।”

সম্প্রসারিত তদন্ত

পুলিশ জানিয়েছে, মরদেহের সাথে থাকা প্রমাণাদি সংগ্রহ করা হয়েছে। ফিঙ্গারপ্রিন্ট, সিসিটিভি ফুটেজ এবং পারিবারিক ইতিহাস অনুসন্ধান করা হচ্ছে। পাশাপাশি দম্পতির সামাজিক ও পারিবারিক জীবন যাচাই করা হচ্ছে।

এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, “ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত প্রমাণাদি বিশ্লেষণ করে আমরা মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ধারণ করব। এটি কেবল পারিবারিক সমস্যা নাকি অন্য কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত তা তদন্তের পরে নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”

সামাজিক প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় সমাজের মানুষ এই ঘটনার খবর শুনে হতবাক। অনেকেই শোক প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্থানীয়রা শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন।

এক সামাজিক কর্মী বলেন, “এটি শুধু একটি পরিবার নয়, পুরো এলাকার জন্য শোকের বিষয়। শিশুদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।”

সাংবাদিকদের জন্য তথ্য

  • স্থান: বরগুনা সদর, ৫নং আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়ন, দক্ষিণ ইটবারিয়া, মোল্লা বাড়ি
  • নিহত: স্বপন মোল্লা (৩২), আকলিমা মোল্লা (২৭)
  • শিশু: সাদিয়া (৫), এক বছরের কন্যা
  • প্রাথমিক তদন্ত: ঝুলন্ত ও গলাকাটা মরদেহ, ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়াধীন
  • প্রতিবেশী মন্তব্য: সাধারণ জীবন, কোনো পূর্বে উল্লেখযোগ্য অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়নি

বরগুনার এই মর্মান্তিক ঘটনা একদিকে পারিবারিক অশান্তি ও মানসিক চাপের প্রভাবের প্রতিফলন, অন্যদিকে শিশুদের সুরক্ষা এবং সমাজের সচেতনতার গুরুত্ব আবারও প্রমাণ করে। তদন্ত চলমান থাকায় মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য এখনো জানা যায়নি। তবে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও সামাজিক সংস্থাগুলো শিশুসহ পরিবারের পরিস্থিতি নিরাপদ করার জন্য তৎপর রয়েছে।

MAH – 12671,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button