বিশ্বব্যাংক ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জাটের বাংলাদেশ সফর

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের নতুন ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জাট চার দিনের সরকারি সফরে আজ শনিবার ঢাকায় পৌঁছেছেন। তার এই সফর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সফরের মূল উদ্দেশ্য দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ে গভীরভাবে আলোচনা করা এবং নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে সমন্বয় সাধন।
বিশ্বব্যাংকের দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশের প্রথম আনুষ্ঠানিক সফর
জোহানেস জাট ২০২৫ সালের ১ জুলাই দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ তার নতুন দায়িত্বে প্রথম আনুষ্ঠানিক সফর। এর আগে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই তার বাংলাদেশ সম্পর্কে সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং দেশটির সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি গভীর দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই চার দিনের সফরে জোহানেস জাট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং দেশের নীতি নির্ধারক ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন।
বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে বিশ্বব্যাংকের অঙ্গীকার
জোহানেস জাট সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব এবং দীর্ঘদিনের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের মানুষের দৃঢ়তা, সৃজনশীলতা এবং তাদের সন্তানের জন্য উন্নত ভবিষ্যত গড়ার সংকল্প আমাকে সবসময় মুগ্ধ করেছে। আমি আগ্রহ নিয়ে আবার এখানে এসেছি, যেন নিজের চোখে দেখার সুযোগ পাই গত দশকে বাংলাদেশের উন্নয়নে কী অসাধারণ পরিবর্তন এসেছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে কাজ করে যাবে। পাশাপাশি, প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ তরুণ-তরুণী কর্মবাজারে প্রবেশ করে, তাদের জন্য ভালো ও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংক বদ্ধপরিকর।”
জোহানেস জাটের বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা ও বিশ্বব্যাংকে অবদান
নেদারল্যান্ডসের নাগরিক জোহানেস জাট ১৯৯৯ সালে বিশ্বব্যাংকে যোগ দেন। তার বহুবর্ষীয় অভিজ্ঞতা রয়েছে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য নিরসনে কাজ করার। তিনি ব্রাজিলে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তুরস্ক, কমরোস, ইরিত্রিয়া, কেনিয়া, রুয়ান্ডা, সেশেলস ও সোমালিয়ায় কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এছাড়াও তিনি অপারেশনাল পলিসি অ্যান্ড কান্ট্রি সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
তার বহুমুখী অভিজ্ঞতা দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে তার এই সফর বিশ্বব্যাংক ও সরকারের মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদার করবে, যা দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশে সহযোগিতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বাংলাদেশ গত দশকে অবিশ্বাস্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করেছে, যা জোহানেস জাটের কাছে খুবই প্রশংসনীয়। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে দিতে নানা প্রকল্প ও তহবিল প্রদান করে আসছে। বিশেষত, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, অবকাঠামো ও তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশ্বব্যাংকের অবদান অপরিসীম।
এই সফরে তিনি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন কিভাবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে আরও বেশি সহায়তা করা যায়, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন ও ডিজিটাল অর্থনীতির প্রসারে। বেসরকারি খাতের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি ব্যবসা ও বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও আলোচনা করবেন।
বাংলাদেশের তরুণ সমাজ ও বিশ্বব্যাংকের ভূমিকা
বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। তাদের জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করা এবং দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করার ওপর জোর দিয়েছেন জোহানেস জাট। তিনি বিশ্বাস করেন, দেশের তরুণ সমাজের সক্ষমতা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন অনেক বেশি ত্বরান্বিত করা সম্ভব।
বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি ও ভবিষ্যৎ আশা
জোহানেস জাটের এই সফর বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। তার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও আন্তরিকতা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক কল্যাণে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। বাংলাদেশ- বিশ্বব্যাংকের এই সহযোগিতা আরও মজবুত হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশ সরকারের নীতি নির্ধারক ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও তরুণদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে এই সফর দীর্ঘমেয়াদে ফলপ্রসূ হবে।