প্রথমবারের মতো নিলামে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কিনলো বাংলাদেশ ব্যাংক

দেশে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা দেওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রথমবারের মতো নিলামের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কিনেছে। ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখতে এই পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ডলারের নিলামে বাংলাদেশের নতুন পদক্ষেপ
রবিবার (১৩ জুলাই) বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিলামের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ১৭ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি ও রপ্তানি আয়ের উল্লম্ফনের ফলে ডলারের বিনিময় হার কমতে শুরু করে, যার প্রেক্ষিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ডলারের দর নির্ধারণ করেছে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা, যা বাজারে অধিকাংশ ব্যাংকের নির্ধারিত দামের তুলনায় বেশি। অর্থনীতিবিদদের মতে, এটি একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত — যা টাকার মান রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
নিলামের প্রক্রিয়া ও মূল্য নির্ধারণ
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এই নিলামের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা অতিরিক্ত ডলার সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনি বলেন, “বাজারে অতিরিক্ত ডলারের সরবরাহ থাকায় আমরা সুযোগটা কাজে লাগাতে চেয়েছি। টাকার মান যাতে হঠাৎ করে বেশি না বাড়ে বা কমে না যায়, সেটাই মূল লক্ষ্য।”
তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে যদি দেখা যায় টাকার মান পড়ে যাচ্ছে, তখন নিলামের মাধ্যমেই আবার ডলার বিক্রি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন এমন পদক্ষেপ দরকার হলো?
গত কয়েক মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। জুলাই মাসের প্রথম দুই সপ্তাহেই প্রায় ১২৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে, যা বিগত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। পাশাপাশি তৈরি পোশাক শিল্পসহ অন্যান্য খাতে রপ্তানিও বেড়েছে।
এর ফলে বাজারে ডলারের জোগান বেড়ে যায় এবং টাকার মান তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী হতে শুরু করে। এর ফলে ডলারের বিনিময় হার এক সপ্তাহে প্রায় ৩ টাকা কমেছে।
বাজারে প্রতিক্রিয়া: ব্যাংক ও অর্থনীতিবিদরা কী বলছেন?
একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান বলেন, “এই পদক্ষেপ বাজারে স্থিতিশীলতা আনবে। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এভাবে সক্রিয়ভাবে কাজ করে, তাহলে ভবিষ্যতে কোনো ধরনের ডলার সংকট বা অস্থিরতা দেখা যাবে না।”
অর্থনীতিবিদ ড. শামসুল আলম বলেন, “প্রথমবারের মতো নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা একটি সাহসী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এটি বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করবে।”
পরিসংখ্যান ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ
গত সপ্তাহেও ব্যাংকগুলোতে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২৩ টাকা। কিন্তু রেমিট্যান্স ও রপ্তানির চাপ কমায় তা কমে ১২০ টাকায় এসে দাঁড়ায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আজ যে ১২১.৫০ টাকা দামে ডলার কিনেছে, তা আবার বিনিময় হারকে সামান্য উপরে তুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এটি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি পজিটিভ সিগনাল হতে পারে, যেহেতু মুদ্রাবাজারে প্রাধান্য রক্ষার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এখন নীতিগতভাবে সক্রিয়।
ভবিষ্যতের পথে কী?
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পদক্ষেপ হয়তো মুদ্রানীতির এক নতুন ধারা সূচিত করবে। যদি এই ধরনের নিলাম কার্যক্রম অব্যাহত থাকে, তবে তা মুদ্রার স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
এছাড়া সরকারের বিভিন্ন বৈদেশিক ঋণ ও পরিশোধের খরচের ওপরও এই নীতিগত পদক্ষেপ ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
“মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে নিলামের মাধ্যমে হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি”—অর্থনীতিবিদ ড. শামসুল আলম।
গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনার সূচনা?
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ব্যতিক্রমধর্মী পদক্ষেপ অনেকটাই ইঙ্গিত দেয় যে, দেশের মুদ্রাবাজার এখন আগের চেয়ে বেশি নীতিনির্ভর হচ্ছে। ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং টাকার মান শক্তিশালী করতে ভবিষ্যতে আরও পরিকল্পিত পদক্ষেপ আসতে পারে।
তবে প্রশ্ন হলো, এই নীতিগত হস্তক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদে কতটা কার্যকর হবে? এবং বাজার কতটা সহনশীল থাকবে? — উত্তর সময়ই দেবে।
এম আর এম – ০৩৩০, Signalbd.com