অস্ট্রেলিয়ায় ফিলিস্তিন সমর্থনে অভূতপূর্ব প্রতিবাদ মিছিল

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান বর্বর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হারবার ব্রিজে হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হয়ে একটি বিশাল মানবিক মিছিল করেছে। এই মিছিল বিশ্ববাসীর কাছে ফিলিস্তিনের প্রতি সমবেদনা প্রকাশের পাশাপাশি গাজায় অবরুদ্ধ মানবতাকে মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে।
সিডনি হারবার ব্রিজে লাখো মানুষের মানবাধিকার মিছিল
রোববার, ৩ আগস্ট, সিডনির ঐতিহাসিক হারবার ব্রিজে অনুষ্ঠিত হয় ‘মার্চ ফর হিউম্যানিটি’ শীর্ষক একটি প্রতিবাদ মিছিল। হাজার হাজার মানুষ সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার রক্ষায় একত্রিত হয়ে মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে জোরালো কণ্ঠস্বর তুলেছে। মিছিলের মাধ্যমে তারা ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সহানুভূতি ও সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে।
সিডনির হারবার ব্রিজের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ‘ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন’ স্লোগানে মুখরিত হয়, যা প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ব্রিজটিকে সম্পূর্ণভাবে যানবাহনের জন্য বন্ধ করে দেয়। প্রতিবাদকারীরা প্ল্যাকার্ড হাতে হাতে শ্লোগান দেন — “ফিলিস্তিনকে মুক্তি দিতে হবে”, “ইসরায়েলের বর্বরতা বন্ধ কর”, “ত্রাণ পৌঁছে দাও গাজার মানুষদের” ইত্যাদি।
মানবতার জন্য হাঁড়ি-পাতিল হাতে প্রতিবাদ
প্রতিবাদ মিছিলের একটি বিশেষ আকর্ষণ ছিল কয়েকজনের হাতে ‘হাঁড়ি-পাতিল’। এরা ক্ষুধার প্রতীক হিসেবে এই হ্যান্ডসাইন বহন করছিলেন, যা গাজায় ত্রাণের অবরোধ ও খাদ্য সংকটের প্রতি জনসাধারণের সচেতনতা বাড়িয়েছে। তারা বলেন, “ক্ষুধার্ত মানুষকে খাদ্য পৌঁছানোই এখন সবচেয়ে বড় মানবাধিকার।”
বিশেষ অতিথিদের উপস্থিতি
এই মিছিলে অংশগ্রহণ করেন অস্ট্রেলিয়ার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, দেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং একাধিক সিনেটর। তারা ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্তর্জাতিক ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
মিছিলের আয়োজনকারীরা দাবি করেন, এই মানববন্ধনে তিন লাখের বেশি লোক অংশ নিয়েছে, যদিও স্থানীয় পুলিশ আধিকারিকেরা অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা এক লাখের কিছু বেশি উল্লেখ করেছেন।
মেলবোর্নেও প্রতিবাদের সুর
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরেও একই দিনে ফিলিস্তিন সমর্থনে বিশাল প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেলবোর্নের মিছিলে ব্যাপক পুলিশবাহিনী মোতায়েন ছিল, তবে জনতার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে।
বিশ্ববাসীর দাবি: ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি
এই প্রতিবাদ মিছিল শুধু ইসরায়েলের গাজা উপত্যকায় আগ্রাসন বন্ধের আহ্বানই নয়, বরং ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নাগরিকরা বলছেন, “নিপীড়িত ফিলিস্তিনবাসীর প্রতি বিশ্ববাসী দৃষ্টি দেওয়া উচিত। অবিলম্বে ইসরায়েলের অবরোধ তুলে নিতে হবে এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে হবে।”
গাজা উপত্যকার সংকট: দ্রুত নজর দেওয়ার আহ্বান
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অবরোধ ও সামরিক অভিযান ইতিমধ্যেই হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করেছে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সুবিধা থেকে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার সতর্ক করেছে, যদি অবরোধ অব্যাহত থাকে তবে তা মানবতাবিরোধী অপরাধে পরিণত হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে, আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় গাজার শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের দুর্দশার ছবিগুলো ছড়িয়ে পড়েছে, যা বিশ্বজুড়ে শোক ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এসব ছবি ও তথ্যই বিশ্ব নাগরিকদের মধ্যে এক বৃহৎ প্রতিবাদের সূত্রপাত করেছে।
কেন এই প্রতিবাদ মিছিল বিশেষ?
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হারবার ব্রিজে অনুষ্ঠিত এই মিছিলটি ছিল ঐতিহাসিক—যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন মানবাধিকার আন্দোলন হয়েছে, তবুও এত বড় পরিসরে ফিলিস্তিন সমর্থনে আন্তর্জাতিক একত্রিত হওয়া খুবই কম দেখা গেছে।
এই প্রতিবাদের মাধ্যমে বিশ্ববাসী বুঝতে পেরেছে, ফিলিস্তিন ইস্যু আর কোনো জাতিগত বা আঞ্চলিক সংঘাত নয়, এটি একটি মানবাধিকার ও মানবিক সঙ্কট। তাই এটি শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের ভাবুক মানুষের উদ্বেগের বিষয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
এই প্রতিবাদের খবর বিশ্ব মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর, অনেক দেশের রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকার সংগঠন ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলছেন, “মানবতার পক্ষ থেকে নির্যাতন বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত।”
বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রফ্রন্ট থেকে তেলআবিবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছে। তাদের মতে, শুধুমাত্র ডিপ্লোম্যাটিক উদ্যোগ নয়, আন্তর্জাতিক চাপও জরুরি, যাতে গাজার অবরোধ উঠে যায় ও সেখানে ত্রাণ পৌঁছানো যায়।
বাংলাদেশ থেকে দৃষ্টিভঙ্গি
বাংলাদেশের মতো দেশগুলো ফিলিস্তিন ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরেই সমর্থন জাহির করে আসছে। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনও এই ধরনের আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ মঞ্চগুলোতে সক্রিয়। বাংলাদেশের তরুণ সমাজ বিশেষত সোশ্যাল মিডিয়ায় ফিলিস্তিনের পক্ষে ব্যাপক সমর্থন ব্যক্ত করছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও আন্তর্জাতিক ফোরামে ফিলিস্তিনের জন্য মানবিক সহায়তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।
মানবতার বিজয়েই ফিলিস্তিনের মুক্তি
ফিলিস্তিনের আজকের সংগ্রাম শুধু তাদের নিজের জন্য নয়, মানবাধিকার রক্ষায় সারা বিশ্ববাসীর জন্য একটি প্রতীক। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হারবার ব্রিজে অনুষ্ঠিত এই মিছিল বিশ্বকে দেখিয়ে দিলো, মানবতা, ন্যায় ও স্বাধীনতার জন্য লড়াই এখন আর কোন জাতি বা দেশের সীমাবদ্ধ নয়—এটি একটি সার্বজনীন আন্দোলন।
বিশ্ববাসীর ঐক্য ও সচেতনতা যদি বজায় থাকে, তাহলে ফিলিস্তিনের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের পথ সুগম হবে। এখন সময় এসেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মানবিক নীতির উপর ভিত্তি করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে।
MAH – 12125 , Signalbd.com