বিশ্ব

নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী: ‘বিক্ষোভের নামে যা ঘটেছে, মনে হচ্ছে সব পরিকল্পিত’

নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী ও সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি ক্ষমতায় আসার পর প্রথমবারের মতো সংবাদমাধ্যমের সামনে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, দেশের সাম্প্রতিক বিক্ষোভে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনাগুলো পরিকল্পিত বলে মনে হচ্ছে। তার দাবি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিস্থিতি সামাল দিয়ে ছয় মাসের মধ্যে ক্ষমতা একটি নির্বাচিত সংসদের হাতে তুলে দেবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান

৭৩ বছর বয়সী সুশীলা কার্কি স্পষ্ট করেছেন যে তিনি ও তার দল ক্ষমতায় স্থায়ী হওয়ার কোনো ইচ্ছা পোষণ করছেন না। তিনি বলেন, “আমরা এখানে ক্ষমতার স্বাদ নিতে আসিনি। ছয় মাসের বেশি দায়িত্ব পালন করব না। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদকে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে।”

তিনি আরও জানান, নতুন সরকারের হাতে ক্ষমতা শান্তিপূর্ণভাবে হস্তান্তরের জন্য জনগণের সহযোগিতা ও আস্থা জরুরি।

বিক্ষোভ ও প্রাণহানি

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে নেপালের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সহিংসতা হয়েছে। কেপি শর্মা ওলির সরকারকে উৎখাত করার পর এসব আন্দোলন শুরু হয়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত মোট ৭২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে ৫৯ জন বিক্ষোভকারী, ১০ জন কারাগারের বন্দি এবং তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা।

কার্কি নিহতদের ‘শহীদ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ১০ লাখ নেপালি রুপি ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের চিকিৎসা ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন।

ভাঙচুর ও ক্ষয়ক্ষতির তদন্ত

প্রধানমন্ত্রী কার্কি উল্লেখ করেন, বিক্ষোভের সময় যেসব এলাকায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর হয়েছে, সেগুলোর তদন্ত করা হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও তিনি স্পষ্ট করেছেন। তার মতে, বিক্ষোভের আড়ালে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র লুকিয়ে থাকতে পারে। তিনি বলেন, “মাত্র ২৭ ঘণ্টার আন্দোলনে আমি এত বড় পরিবর্তন আগে কখনও দেখিনি। মনে হচ্ছে, এর পেছনে গভীর পরিকল্পনা ছিল।”

বিক্ষোভের প্রেক্ষাপট

নেপালে কেপি শর্মা ওলির সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ জমছিল। অর্থনৈতিক সংকট, দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতায় জনগণের ক্ষোভ চরমে পৌঁছায়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গড়ায় যে, ওলি সরকারের পতন ঘটে এবং দেশকে অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

এই বিক্ষোভকে অনেকেই ইতিবাচকভাবে দেখলেও, ভাঙচুর ও প্রাণহানির ঘটনাগুলো নিয়ে সমালোচনা বাড়ছে। বিশেষ করে রাজধানী কাঠমান্ডু ও বড় শহরগুলোতে সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ এবং বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের ঘটনা নিয়ে স্থানীয়দের উদ্বেগ প্রবল।

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিক্ষোভের মাধ্যমে জনগণের ক্ষোভ প্রকাশ পেলেও এর সহিংস রূপ নেপালের ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত। তারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষা করা।

আন্তর্জাতিক মহল থেকেও নেপালের পরিস্থিতির প্রতি নজর রাখা হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সকল পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানায়।

বিশেষজ্ঞ মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে দুটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, জনগণের আস্থা পুনর্গঠন করা। দ্বিতীয়ত, অস্থির পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে যাতে কোনো পক্ষ ষড়যন্ত্র করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা।

একজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন, “বিক্ষোভ পরিকল্পিত হোক বা স্বতঃস্ফূর্ত, এত স্বল্প সময়ে সরকারের পতন এবং এত প্রাণহানি নেপালের রাজনৈতিক অঙ্গনের ভঙ্গুরতা স্পষ্ট করে দিয়েছে।”

সামনের পথ

সুশীলা কার্কির নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ছয় মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন আয়োজন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সহিংসতা ও ভাঙচুরের ঘটনায় তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া কীভাবে এগোয়, সেটিই নির্ধারণ করবে জনগণের আস্থা কতটা পুনর্গঠন সম্ভব।

নেপালে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও সরকারের পরিবর্তন দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন মোড় এনেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে দেশ স্থিতিশীলতার পথে হাঁটতে পারবে কি না, তা নির্ভর করবে আগামী কয়েক মাসের পরিস্থিতির ওপর। প্রশ্ন রয়ে গেল— সহিংসতা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগের ভেতর দিয়ে নেপাল কি শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পথে অগ্রসর হতে পারবে?

এম আর এম – ১৩২৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button