তিন দিনে পেঁয়াজের কেজিতে দাম বাড়ল ১৫ টাকা

গত তিন দিনে বাজারে পেঁয়াজের ঝাঁজ যেন হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে গড়ে ১৫ টাকা। এ হঠাৎ দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, সরবরাহে বিঘ্ন এবং আবহাওয়াজনিত কারণে এই বৃদ্ধি হয়েছে। তবে অনেক ভোক্তার অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা ইচ্ছাকৃতভাবে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
পেঁয়াজের বাজারে হঠাৎ উর্ধ্বগতি
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, আগারগাঁও ও তেজগাঁওয়ের কলোনি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়, যা তিন দিন আগেও ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় পাওয়া যেত। তুলনামূলক কম মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৬ থেকে ৭০ টাকায়। তবে পাড়া-মহল্লার দোকানে এসব দাম আরও বেশি, সেখানে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
ক্রেতারা বলছেন, বাজারে হঠাৎ করে এই ধরনের মূল্যবৃদ্ধি তাদের জন্য বড় চাপ তৈরি করছে। রাজধানীর আগারগাঁও এলাকার বাসিন্দা আসাদুল্লাহ মিয়া বলেন, “কয়েকদিন আগেও ৬০ টাকায় পেঁয়াজ কিনেছি। এখন তিন দিনে ১৫ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। কোনো কারণ ছাড়াই এভাবে দাম বাড়ানো হচ্ছে।”
ব্যবসায়ীদের যুক্তি: বৃষ্টির প্রভাব ও সরবরাহের ঘাটতি
পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে। কারওয়ান বাজারের এক ব্যবসায়ী এরশাদ আলী জানান, “গত তিন-চার দিনে পাইকারি মোকামে প্রতি মণে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দাম বেড়েছে। এর প্রভাব খুচরা বাজারে পড়েছে। বর্তমানে কোনো দেশ থেকে পেঁয়াজ আসছে না, সবই দেশি পেঁয়াজ। তাই সাময়িক সরবরাহ কমে গিয়ে দাম বেড়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এবার পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে। তাই দাম অতিরিক্ত বাড়ার সম্ভাবনা কম। কয়েকদিনের মধ্যেই বাজার আবার স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।”
ভোক্তাদের ক্ষোভ: মনগড়া দামের অভিযোগ
অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে বাজার সিন্ডিকেট সক্রিয়। রাজধানীর কয়েকটি বাজারে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেরই অভিযোগ—প্রথমে সামান্য কারণ দেখিয়ে দাম বাড়ানো হয়, তারপর সেই দাম আর নামানো হয় না। ভোক্তারা মনে করছেন, সঠিক তদারকির অভাবে ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ নিচ্ছেন।
মোহাম্মদপুরের গৃহিণী লায়লা আক্তার বলেন, “প্রতিদিনের রান্নার জন্য পেঁয়াজ লাগে। দাম হঠাৎ বেড়ে গেলে মাসিক খরচের ওপর চাপ পড়ে। সরকার বাজার মনিটরিং করলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।”
গত বছরের তুলনায় দাম এখনও কম
যদিও দাম হঠাৎ বেড়েছে, তবুও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বর্তমান দাম কিছুটা কম। গত বছর এই সময়ে পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতি কেজি ১০৫ থেকে ১২০ টাকা। সরকারি সংস্থা টিসিবির সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক মাসে পেঁয়াজের দাম প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এখনও দাম ৩৩ শতাংশ কম।
সরবরাহ, আমদানি ও বাজারের ভবিষ্যৎ চিত্র
পেঁয়াজের বাজার মূলত দেশীয় উৎপাদনের ওপর নির্ভর করছে। বর্তমানে কোনো দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের ধারণা, নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু করলে দাম আবারও স্থিতিশীল হবে। তবে যদি বর্ষার প্রভাবে সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে দাম আরও কিছুটা সময় অস্থিতিশীল থাকতে পারে।
বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক তদারকি না থাকলে এবং সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে ক্রেতাদের জন্য এটি বড় চাপ হয়ে দাঁড়াবে। তাই এখনই বাজার পর্যবেক্ষণ জোরদার করা জরুরি।
বিশেষজ্ঞ মতামত: তদারকি ও আমদানি ব্যবস্থার তাগিদ
বাজার বিশ্লেষক মো. রফিকুল ইসলাম মনে করেন, “যদি কয়েক সপ্তাহ ধরে সরবরাহের সংকট চলতে থাকে তবে দাম আরও বাড়তে পারে। সরকার চাইলে জরুরি ভিত্তিতে পেঁয়াজ আমদানি করতে পারে, যাতে বাজার স্থিতিশীল থাকে।”
তিনি বলেন, “সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ ও বাজার তদারকির কাজ এখনই না করলে সাধারণ মানুষের জন্য পেঁয়াজ ক্রয় ক্ষমতা আরও কঠিন হয়ে যাবে।”
সারসংক্ষেপ
মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দামে ১৫ টাকা বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনে চাপ তৈরি করেছে। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, কয়েকদিনের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। তবে বাজার পর্যবেক্ষণ ও কার্যকর উদ্যোগ না নিলে এই দাম বাড়ার প্রবণতা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এখন দেখার বিষয়, বাজার পরিস্থিতি কত দ্রুত স্থিতিশীল হয়।
এম আর এম – ০৬৭৮, Signalbd.com