ফুটবল

সোনার জুতা জয় করলেন এমবাপ্পে

২০২৪-২৫ ইউরোপিয়ান ফুটবল মৌসুমের পর্দা নামল আর তার সঙ্গেই শেষ হলো ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের প্রতিযোগিতাও। এই মৌসুমে ইউরোপের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিগত পুরস্কার, ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু, জিতেছেন ফ্রান্সের তারকা ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পে। এই সম্মানজনক সোনার জুতা এবার উঠল তার হাতেই।

এমবাপ্পের অভিষেকেই বাজিমাত

লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলা প্রথম মৌসুমেই এমবাপ্পে করেছেন ৩১টি গোল। স্প্যানিশ লিগে এটাই ছিল তার অভিষেক বছর। এত বড় মঞ্চে প্রথম মৌসুমেই এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্স সত্যিই চোখে পড়ার মতো। তার এই গোল সংখ্যাই তাকে এনে দেয় ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু।

ইউরোপের পাঁচটি শীর্ষস্থানীয় লিগের (ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, স্প্যানিশ লা লিগা, জার্মান বুন্দেসলিগা, ইতালিয়ান সিরি আ, ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান) খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট অর্জনকারী ফুটবলার এই পুরস্কারটি পান। এমবাপ্পে যেহেতু ৩১ গোল করেছেন, এবং লা লিগা UEFA কো-এফিসিয়েন্ট র‍্যাংকিংয়ে শীর্ষ তিনে থাকায়, তার প্রতিটি গোলের জন্য ২ পয়েন্ট করে হিসেব করা হয়েছে। ফলে তার মোট পয়েন্ট দাঁড়ায় ৬২

ইতিহাসে নাম লিখলেন রিয়ালের হয়ে

রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসেও এমবাপ্পে হয়ে উঠেছেন বিশেষ একজন। এর আগে মাত্র দু’জন ফুটবলার রিয়ালের হয়ে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু জিতেছিলেন—হুগো সানচেজ এবং ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এখন তাদের পাশে জায়গা করে নিলেন এমবাপ্পে।

প্রতিদ্বন্দ্বীদের ছাপিয়ে গেলেন

এবারের মৌসুমে সোনার জুতা জয়ের লড়াইটা ছিল বেশ জমজমাট। এমবাপ্পের পাশাপাশি দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পারফরম্যান্সে—ভিক্টর ইয়োকেরেস এবং মোহাম্মদ সালাহ

১. ভিক্টর ইয়োকেরেস – ৩৯ গোল, কিন্তু দ্বিতীয়!

পর্তুগালের স্পোর্টিং সিপি ক্লাবের সুইডিশ স্ট্রাইকার ভিক্টর ইয়োকেরেস এবারের মৌসুমে করেছেন ৩৯টি গোল। যা এমবাপ্পের চেয়ে ৮টি বেশি। কিন্তু গোল্ডেন শু জেতার জন্য শুধু গোল করলেই হয় না, লিগের মানও বিবেচনা করা হয়।

পর্তুগিজ লিগ UEFA কো-এফিসিয়েন্ট র‍্যাংকিংয়ে সাত নম্বরে, তাই সেখানে করা প্রতিটি গোলের জন্য ১.৫ পয়েন্ট হিসাব করা হয়। সে হিসেবে ইয়োকেরেসের মোট পয়েন্ট দাঁড়ায় ৫৮.৫—যা এমবাপ্পের চেয়ে কম। তাই গোল বেশি করেও তাকে থাকতে হলো দ্বিতীয় স্থানে।

২. মোহাম্মদ সালাহ – হ্যাটট্রিকের আশায় ছিলেন

লিভারপুলের মিসরীয় সুপারস্টার মোহাম্মদ সালাহ এবারের প্রিমিয়ার লিগে করেছেন ২৯ গোল। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ UEFA র‍্যাংকিংয়ে প্রথম পাঁচে থাকায় প্রতিটি গোলের জন্য সালাহ পেয়েছেন ২ পয়েন্ট করে। ফলে তার পয়েন্ট দাঁড়ায় ৫৮

শেষ ম্যাচে, ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে, সালাহর দরকার ছিল কমপক্ষে ৪ গোল, যাতে তিনি এমবাপ্পেকে পেছনে ফেলতে পারেন। তবে ম্যাচটি শেষ হয় ১-১ ড্রয়ে এবং লিভারপুলের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন সালাহ নিজেই।

যদি তিনি হ্যাটট্রিকও করতেন, তাহলেও তার পয়েন্ট হতো এমবাপ্পের সমান ৬২। তবুও নিয়ম অনুযায়ী এমবাপ্পেই বিজয়ী হতেন, কারণ সালাহ মৌসুমে খেলেছেন ৩৩৭৭ মিনিট, আর এমবাপ্পে ২৯১২ মিনিট। কম সময়ে সমান গোল করে বা পয়েন্ট অর্জন করলে সেই খেলোয়াড়ই সোনার জুতা পান।

ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু – কীভাবে হিসাব হয়?

অনেকেই ভাবতে পারেন, শুধু গোলসংখ্যা দিয়েই কি সেরা নির্ধারিত হয়? না, এখানে রয়েছে বিশেষ নিয়ম:

  • UEFA-র কো-এফিসিয়েন্ট র‍্যাংকিং অনুযায়ী লিগগুলোকে পয়েন্ট দেওয়া হয়।
  • শীর্ষ ৫ লিগে প্রতিটি গোলের জন্য ২ পয়েন্ট।
  • র‍্যাংকিংয়ের ৬ থেকে ২২ নম্বর পর্যন্ত লিগে প্রতিটি গোলের জন্য ১.৫ পয়েন্ট।
  • আরও নিচের লিগে প্রতিটি গোলের জন্য ১ পয়েন্ট।

এভাবে সব খেলোয়াড়ের পয়েন্ট হিসাব করে, যার সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট, তাকেই সোনার জুতা দেওয়া হয়।

ফুটবল বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া

বিশ্লেষকরা বলছেন, এমবাপ্পের এই অর্জন প্রমাণ করে যে তিনি শুধু গতির খেলোয়াড় নন, বরং পরিণত একজন গোলস্কোরার। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে তার প্রথম মৌসুমেই এমন অর্জন ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো।

সালাহ ও ইয়োকেরেসের সামনে কী ভবিষ্যৎ?

  • মোহাম্মদ সালাহ হয়তো ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ছাড়তে পারেন, নানা গুঞ্জন রয়েছে যে তিনি সৌদি প্রো লিগে যোগ দিতে পারেন। তবে ইউরোপে থেকে গেলে আবারো গোল্ডেন শুর দৌড়ে তিনি থাকবেনই।
  • ভিক্টর ইয়োকেরেস ইতিমধ্যেই ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোর নজরে। বিশেষ করে জুভেন্টাস, আতলেটিকো মাদ্রিদ ও চেলসি তাকে নেওয়ার জন্য আগ্রহী।

এই মৌসুমে কিলিয়ান এমবাপ্পের গোল্ডেন শু জয় শুধু তার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে তার যাত্রা শুরু হয়েছে স্বপ্নের মতো। সামনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও অন্যান্য ট্রফি জয়ের পথে তার অবদান গুরুত্বপূর্ণ হবে বলেই ফুটবলবিশ্ব আশা করছে।

  • কিলিয়ান এমবাপ্পে জিতলেন ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু ২০২৫
  • লা লিগায় ৩১ গোল করে পেলেন ৬২ পয়েন্ট
  • ভিক্টর ইয়োকেরেস (৩৯ গোল) ও মোহাম্মদ সালাহ (২৯ গোল) যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয়
  • লিগের মান অনুযায়ী পয়েন্ট হিসাব হওয়ায় গোল বেশি করেও পিছিয়ে পড়েন ইয়োকেরেস
  • কম সময়ে বেশি গোল করায় সালাহর সমান পয়েন্ট হলেও এমবাপ্পেই বিজয়ী হতেন
মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button