অর্থনীতি

বেশির ভাগ সবজি ৮০ টাকার ওপরে, এত দাম কেন

প্রতিদিনের জীবনে জর্জরিত ক্রেতারা

এই প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর-সহ অন্যান্য বাজারে সবজির দাম কতটা বেড়েছে, সাধারণ জনগণের কী প্রতিক্রিয়া এবং এর পেছনে মূল কারণগুলো কী—এসবই উঠে এসেছে অনুবীক্ষণে।

গৃহিণী লাবনী আক্তারের কথায়, “হঠাৎ যেন সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে গেল। ২০০ টাকা খরচ হলে অন্য খাতে টান পড়ে যায়। সবজির মূল্যবৃদ্ধি আমাদের কষ্টের কারণ।” এই নিরিখে হতদরিদ্র ও নিম্ন-মধ্য আয়ের পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি কষ্টে রয়েছেন।

২. বর্তমান বাজারে সবজির মুল্যকাঠামো

রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল, আগারগাঁও, কারওয়ান বাজার প্রভৃতি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ সবজির দাম এখন ৮০ টাকার ওপরে। লালশাক, ডাঁটাশাক, পুঁইশাকসহ শাক-সবজি এবং বেগুন, করলা, বট, কাঁকরোল, পটোল, ঢেঁয়ড়স, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, কচুমুখি, লাউ, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, পেঁপে, কাঁচকলাসহ অন্যান্য সবজির মুল্য চড়া। নির্দিষ্ট কিছু মূল্য:

  • বেগুন: ১০০–২০০ টাকা/কেজি (সাম্প্রতিককালে ৬০–১৪০ টাকায় পাওয়া যেত)
  • করলা, বরবটি, কাঁকরোল: ১০০–১২০ টাকা/কেজি
  • টমেটো (আমদানি): ১৬০–১৮০ টাকা/কেজি
  • পটোল, ঢেঁয়ড়স, ঝিঙা: ৮০–১০০ টাকা/কেজি
  • চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, কচুমুখি: ৬০–৮০ টাকা/কেজি
  • মিষ্টিকুমড়া, পেঁপে, কাঁচকলাসহ: ৫০ টাকার নিচে
  • লাউ: ৭০–৮০ টাকা/পিস
  • চালকুমড়া: ৫০–৭০ টাকা/পিস
  • কাঁচা মরিচ: ২০০–২৪০ টাকা/কেজি

শাক-সবজির দামও একইভাবে বেড়েছে—মানভেদে লাউ শাক ৪০–৫০ টাকা/গুচ্ছ, পুঁইশাক ৩০–৪০ টাকা, ডাঁটাশাক ৩০, লালশাক ২০–৩০, পাট, কলমি, কচু ও ঢেঁকিশাক ১৫ টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কচুর ডাঁটা ৫০–৬০ টাকা।

৩. কারণ কী? — মৌসুমীয় সংকট ও বৃষ্টিপাত

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মণ্ডলের বক্তব্য: “রবি বা শীত মৌসুমে (অক্টোবর-মার্চ) উৎপাদন বেশি হয়। এখন বর্ষাকালে বৃষ্টির কারণে চাষ কমে গিয়েছে। মাঠে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে। অক্টোবর থেকে শীঘ্রই উৎপাদন বাড়লে দাম নেমে আসবে।”

এই মৌসুমীয় চর্চার সঙ্গে চলমান বৃষ্টিপাত মিলিয়ে পড়েছে, যার কারণে ফসল ধ্বংস, রেডি পণ্যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

৪. অতিরিক্ত তথ্য ও বিশ্লেষণ (অন্যান্য সংবাদ সূত্র অনুযায়ী)

a) ক্রমাগত বৃষ্টি ও ক্ষেত নষ্ট

‘দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’ বলছে:

  • জুলাই থেকে চলমান ভারি বৃষ্টি সবজি উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করেছে।
  • তেঁতুল, করলা, বেগুন, ঢেঁয়ড়স, ঝিঙা, পটোলসহ সবজি ৮০–১০০ টাকা/কেজির মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
  • টমেটো ১৬০–২০০, কাঁচামরিচ ২০০–২৪০ টাকা/কেজি, অন্যান্যের মধ্যে পেঁপে ও আলু তুলনামূলক সস্তা। রাইস স্থিতিশীল।

b) পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি ও সরবরাহ শৃঙ্খল বিপর্যয়

bdnews24.com অনুযায়ী, প্রাকৃতিক কারণে সরবরাহের ব্যাঘাত ছাড়াও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে—প্রতি কেজিতে ১০–২০ টাকা করে বাড়ছে।

c) মধ্যস্বত্ত্ব, জোরনাদ, তথ্যাভাবে কৃষকের দুর্ভোগ

“দ্য ডেইলি স্টার”-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী:

  • বেচাকেনা মধ্যস্বত্ত্বের কারণে কৃষকরা ক্ষুদ্র দামে বিক্রি করলেও রিটেইলে ভোক্তা চড়া দামে কিনছেন।
  • কোথাও কোথাও প্রতিদিন একটি মধ্যস্বত্ত্বকারী ৮০০০–১০,০০০ টাকা উপার্জন করেন; কিন্তু কর দেন না। ফরমাল বাইরে বাড়তি খরচ ভোক্তা বহন করছেন।

d) অতিরিক্ত বোর্ডার টোল, যায়া-অন্যায্য ফি ও আবরাহা

উদ্ধৃত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ঢাকা প্রবেশপথে (যাত্রাবাড়ি, আমিনবাজার, আবদুল্লাহপুর) সবজি গাড়ি থেকে সরকারি-অসরকারি প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক গোষ্ঠী তুলে নেয় “মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ফি” (প্রতি ট্রাকে ১২০০–১৫০০ টাকা)। এতে ভোক্তাদের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে।

e) সামগ্রিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি

অর্থনীতিবিদদের মতে, খাবারের দাম বৃদ্ধি খাদ্য মূল্যস্ফীতি চালিত করছে—জুনে ছিল ৭.৩৯%, জুলাইয়ে বেড়ে ৭.৫৬%—যাতে পেঁয়াজ, মুরগি, সবজি, ডিম অন্তর্ভুক্ত।

৫. ফলাফল ও বিশ্লেষণ: ব্যবহারকারীদের জীবনযাত্রায় প্রভাব

  • নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে চাপ: দৈনন্দিন বিদ্যুৎ, ভাড়া, শিক্ষা—সবখরচের মধ্যে স্বল্পখরচের সবজির জায়গা নেই; দামের এধরনের লাফ জীবনযাত্রার মান নিম্নে নিয়ে যায়।
  • পুষ্টি স্বাস্থ্যে প্রভাব: প্রোটিন বা পুষ্টির বিকল্প হিসাবে সবজি গ্রহণে বাধা—বাদাম, ডিম, মাংসের দামেও লাফের কারণে।
  • সরকারি হস্তক্ষেপে উদ্যোগ: OMS/সাবসিডাইজড সেলিং, ইমপোর্ট সহজ করা, ট্রান্সপোর্ট নিয়ন্ত্রণ, মধ্যস্বত্ত্ব নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি বাস্তবায়ন জরুরি।

৬. সমন্বিত পরামর্শমালা

সমস্যাপরামর্শ
মৌসুমীয় সরবরাহ ঘাটতিবর্ষাকালের বিকল্প চাষ, ফসল সংরক্ষণ (কোল্ড স্টোরেজ) উন্নয়ন
পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধিভ্রাম্যমাণ ট্রাকিং ফি, টোল কর্তন, লজিস্টিক ব্যবস্থার উন্নতি
মধ্যস্বত্ত্বের আধিপত্যসরাসরি কৃষক থেকে বাজারে সেলিং পয়েন্ট, সাবসিডি
বাজার পর্যবেক্ষণ অভাবস্থানীয় বাজার মনিটরিং, তথ্যভিত্তিক দাম নির্ধারণ
আমদানি ও সরবরাহ বাস্তবায়নপেঁয়াজসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি আমদানি ও বাজারে সরবরাহ

প্রতি কেজি ৮০-২০০ টাকায় সবজি, পটোল-ঝিঙা-বেগুনের দাম চড়া—এখন শুধু একটি বাজার সমস্যা নয়; এটি প্রায় প্রতিটি নিম্ন বিচার্যের পরিবারের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করছে। মৌসুমীয় উৎপাদন কম, বাজারে ঘাটতি, বৃষ্টি ও পরিবহন ব্যয়, মধ্যস্বত্ত্ব, তথ্যের অভাব—এই সব মিলিয়ে দাম বাড়ছে। তবে সরকার, কৃষি দপ্তর, লজিস্টিক ও বাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা যদি সম্মিলিত পরিকল্পনায় এগিয়ে আসে, তাহলে অক্টোবরে শীতকালীন উৎপাদন শুরু হলেই দাম অভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণে আসার পথ তৈরি করা সম্ভব।

MAH – 12324 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button