ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পড়লো সৌদি আরবে

ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইয়েমেন থেকে হুতি বিদ্রোহীদের ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সৌদি আরবের মাটিতে এসে পড়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (৯ এপ্রিল) স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে। ইয়েমেন অনলাইন নামের একটি সংবাদমাধ্যম বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা
এই ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল যখন ইসরায়েল-হামাস সংঘাত এবং গাজা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ইরানপন্থী হুতি গোষ্ঠী বেশ কয়েক মাস ধরে ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান থেকে আঞ্চলিক অভিযানের হুমকি দিয়ে আসছে। তারা এর আগেও রেড সি ও আরব সাগরে ইসরায়েলমুখী বিভিন্ন বাণিজ্যিক জাহাজে হামলার দায় স্বীকার করেছে।
সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনাটি হুতিদের সামরিক কার্যক্রমে আরেকটি স্পষ্ট সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে তাদের লক্ষ্য ছিল ইসরায়েল হলেও বাস্তবে ক্ষেপণাস্ত্রটি সৌদি আরবের ভূখণ্ডে এসে পড়েছে। এতে সৌদি আরব, হুতি এবং ইসরায়েলের মধ্যকার নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক হিসাব-নিকাশ আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।
কোথায় পড়েছে ক্ষেপণাস্ত্র?
প্রতিবেদনে ক্ষেপণাস্ত্রটির নির্দিষ্ট অবস্থান উল্লেখ না করলেও, এটি যে ইসরায়েল পৌঁছানোর আগেই মাঝপথে সৌদি ভূখণ্ডে পতিত হয়েছে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে ক্ষেপণাস্ত্রটি সৌদি আরবের কোন অঞ্চলে পড়েছে, তা জানানো হয়নি। সৌদি আরব এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি।
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, তারা ক্ষেপণাস্ত্রটি ট্র্যাক করতে সক্ষম হয়েছে। তবে এটি ইসরায়েলি ভূখণ্ডে আঘাত হানার আশঙ্কা ছিল না বলেই কোনো সাইরেন বাজানো হয়নি বা বেসামরিক নাগরিকদের সতর্ক করা হয়নি। ইসরায়েল দাবি করেছে, এই হামলা তাদের জন্য সরাসরি কোনো হুমকি তৈরি করেনি।
তবে ইসরায়েলের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ বিশ্লেষকরা এটিকে হুতিদের পক্ষ থেকে দীর্ঘপাল্লার হামলার সক্ষমতার একধরনের প্রদর্শনী হিসেবে দেখছেন। তারা আশঙ্কা করছেন, হুতিদের এমন কর্মসূচি ভবিষ্যতে আরও সংঘর্ষের কারণ হতে পারে।
হুতিদের পক্ষ থেকে দাবি
হুতি গোষ্ঠী বুধবার এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ইসরায়েলের দিকে একটি ড্রোন হামলা পরিচালনা করেছে। যদিও এই বিবৃতিতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার বিষয়টি সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে হুতিদের পক্ষ থেকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে একাধিক হামলার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।
সৌদি আরবের ভূমিকা ও চ্যালেঞ্জ
এই ঘটনার পর সৌদি আরব একটি জটিল কূটনৈতিক পরিস্থিতির সম্মুখীন। একদিকে সৌদি সরকার হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ইয়েমেনে দীর্ঘদিন ধরে সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছে। অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব ঘিরে সৌদি আরব এখনো ইসরায়েলের সাথে পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেনি।
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সৌদি আরবের ভেতরে এসে পড়া দেশটির সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার প্রশ্নে উদ্বেগ তৈরি করেছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তারা এ বিষয়ে মন্তব্য করেনি, তবুও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ভবিষ্যতে এমন হামলা সৌদি ভূখণ্ডে পুনরাবৃত্তি হলে তা রিয়াদের জন্য বড় রকমের সামরিক প্রতিক্রিয়ার পথ উন্মুক্ত করতে পারে।
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনও ঘটনাটির ব্যাপারে সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিগুলো এই অঞ্চলে হুতি গোষ্ঠীর কার্যক্রম এবং ইরানের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকার দিকে গভীর নজর রাখছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের হামলা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘর্ষের দ্বার উন্মুক্ত করতে পারে এবং ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। একইসাথে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ উপসাগরীয় দেশগুলোকে নতুন করে নিরাপত্তা পুনর্বিবেচনার দিকেও ঠেলে দিচ্ছে।
ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপট
এই হামলার ঘটনার পর একাধিক প্রশ্ন সামনে আসছে— হুতিদের সামরিক প্রযুক্তি কতটা উন্নত হয়েছে? তারা কি ইরানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এই ধরনের দীর্ঘপাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করছে? কিংবা ভবিষ্যতে এই অস্ত্রগুলো কোথায় এবং কী উদ্দেশ্যে ব্যবহার হতে পারে?
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল, হুতি, সৌদি আরব ও ইরানের ভূরাজনৈতিক কৌশলপনা ও পরস্পরবিরোধী অবস্থান এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে। এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে, কোনো একক দেশ এখন আর নিজেদের আঞ্চলিক দ্বন্দ্বের বাইরে রাখতে পারছে না।