বিশ্ব

ভারতকে মুসলিম শাসকদের দয়া ও উদারতা স্মরণ করার আহ্বান ওমানের গ্র্যান্ড মুফতির

ভারত সরকারের প্রতি মুসলমানদের প্রতি বৈরিতা পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন ওমানের প্রধান ধর্মীয় নেতা গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আহমেদ বিন হামাদ আল-খলিলি। তিনি ভারতকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, অতীতে দেশটির মুসলিম শাসকেরা কতটা দয়ালু ও ধর্মনিরপেক্ষ শাসন চালিয়েছিলেন।

সাম্প্রতিক ভারত–পাকিস্তান সীমান্ত সংঘাতের প্রেক্ষাপটে শেখ আহমদ এই বিবৃতি দিয়েছেন। চারদিন ধরে চলা ভয়াবহ গোলাবর্ষণ ও পাল্টাপাল্টি আকাশ হামলার পর দুই দেশ গত শনিবার একটি যুদ্ধবিরতিতে উপনীত হয়। ওই যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছে ওমান সরকার।

পাকিস্তানকে শুভেচ্ছা

গত সোমবার দেওয়া এক বিবৃতিতে ওমানের গ্র্যান্ড মুফতি বলেন, “আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জনের জন্য আমরা পাকিস্তানকে অভিনন্দন জানাই। আমরা আশা করি, তারা সব সময় নির্যাতিত মুসলিমদের, বিশেষ করে আল-আকসার পবিত্র ভূমির অধিকার রক্ষায় অবিচল থাকবে।”

তিনি আরও বলেন, “ভারত সরকারের উচিত মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পরিহার করা। তাদের অতীতের মুসলিম শাসকদের দয়া ও মহানুভবতা স্মরণ করা উচিত, যারা ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে জনগণের সেবা করেছে।”

ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিত

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের আগেও ভারতীয় উপমহাদেশের বিশাল অংশ মুসলিম শাসকদের অধীনে ছিল। বিশেষ করে মোগল সাম্রাজ্য ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে ভারতের শাসনভার পরিচালনা করে। মুফতির বক্তব্যে সেই ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলা হয়, মুসলিম শাসকেরা উদারতা ও সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টানসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি সমান আচরণ করতেন।

গোয়াদর বন্দর ও ঐতিহাসিক সংযোগ

ওমান ও পাকিস্তানের মধ্যে ঐতিহাসিক সংযোগের একটি দিক হচ্ছে বেলুচিস্তানের গোয়াদর বন্দর। ১৭৮৪ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত এটি ওমানের শাসনে ছিল। ১৯৫৬ সালে ওমান এই বন্দর ভারতের কাছে বিক্রি করতে চাইলেও, জওহরলাল নেহরু সরকার সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। পরে ১৯৫৮ সালে এটি পাকিস্তানের কাছে বিক্রি করে ওমান।

ওমানের সঙ্গে পাকিস্তানের সমুদ্র সীমান্ত রয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিরাজ করছে। অন্যদিকে, ভারত ও ওমানের মধ্যেও কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে।

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের পটভূমি

গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের ভারত-নিয়ন্ত্রিত অংশে ভারতীয় পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। ভারত এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ সরাসরি সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে।

এর জের ধরেই শুরু হয় সীমান্তে তীব্র গোলাবর্ষণ ও পাল্টা বিমান হামলা। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতেও ভারত পাকিস্তানে হামলা চালায়, আর পাল্টা জবাব দেয় ইসলামাবাদ।

সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, সংঘাতে পাকিস্তানে কমপক্ষে ৩৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। অপরদিকে, ভারতের দাবি—পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে তাদের ১৬ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যেও বেসামরিক মানুষ রয়েছে।

ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি

চারদিনের সংঘাতের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দেন, ভারত ও পাকিস্তান উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। ওমান সরকার আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এ যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছে।

ওমানের প্রধান মুফতির বিবৃতি এই সময়টিতে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে, যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা আবারও সামরিক সংঘাতে রূপ নিচ্ছিল। অতীতের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও ইতিহাসকে স্মরণ করে বর্তমান বৈরিতা পরিহার করার এ আহ্বান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা সৃষ্টি করেছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button