হামাস প্রত্যাখ্যান করলো ইসরায়েলের ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব

গত কয়েক বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ও সংঘর্ষের ধারাবাহিকতায় এবারও শান্তির আলো আলোড়িত হলেও, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলের সঙ্গে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের ফলে কাতারের দোহায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা স্থগিত হয়ে গেছে।
কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা: এককথায় যুদ্ধবিরতির চেষ্টা
দুই পক্ষের দীর্ঘ সংঘাতের মাঝে শান্তির পথ খুঁজে পেতে, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্র একটি যৌথ প্রস্তাব পেশ করেছিল। প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত ছিল:
- অন্তত ৬০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা,
- গাজা অঞ্চলে সাময়িক সামরিক অভিযান বন্ধ,
- কিছু বন্দী মুক্তি ও মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া।
এই প্রস্তাব যুদ্ধবিরতিতে এক আশার সঞ্চার করেছিল, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে। তবে আলোচনায় ইসরায়েলি সেনাদের গাজা থেকে প্রত্যাহার নিয়ে মূল বিবাদ তৈরি হয়।
ইসরায়েলের অবস্থান ও হামাসের দ্বিধা
তেলআবিব সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন থাকার পরেও, হামাসের পক্ষ থেকে প্রস্তাব মেনে নেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি দেখা দেয়। তাদের দাবি, প্রস্তাবে থাকা সেনা প্রত্যাহারের পরিমাণ অপর্যাপ্ত এবং নিরাপত্তা বিষয়ক প্রয়োজনীয়তা পূরণ হয় নি।
এদিকে, একটি বিবিসি অনলাইন সাক্ষাৎকারে এক জ্যেষ্ঠ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন, “ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওয়াশিংটনে এক সফরের সময় প্রকৃত অর্থে কোনো শান্তিচুক্তির জন্য উদ্যোগ নেননি। তারা কেবল সময় কাটানোর চেষ্টা করেছে। দোহায় যে প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়েছে, তাদের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই আলোচনায় কোনো ফল পাওয়া সম্ভব হয়নি।”
যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
মধ্যপ্রাচ্যের এই সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতি না হলে, মানবিক দুর্দশা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও সংগঠনগুলো। গাজার প্রায় ২০ লাখ মানুষ ইতিমধ্যেই যুদ্ধ ও অবরোধের ভীষণ প্রভাবের মুখোমুখি।
আন্তর্জাতিক কমিউনিটির পক্ষ থেকে বারবার শান্তি আলোচনায় ফিরে আসার আহ্বান জানানো হলেও, এখন পর্যন্ত সুরাহার কোনো সুস্পষ্ট সংকেত পাওয়া যায়নি।
গাজার বর্তমান পরিস্থিতি: মানবিক বিপর্যয় ও জরুরি সহায়তার প্রয়োজন
গাজার মানুষ ক্রমশ সংকটময় জীবনযাপন করছে। বিদ্যুৎ, পানি, ও খাদ্যের মারাত্মক অভাব দেখা দিয়েছে। হাসপাতালগুলো পরিপূর্ণ, আর চিকিৎসার সুযোগ সীমিত। এই অবস্থায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া পরিস্থিতি আরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
ইউনাইটেড নেশনস এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা গাজায় অবিলম্বে জোরালো মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশকে আবেদন জানিয়েছে।
ভবিষ্যৎ কী?
দোহায় আলোচনার স্থগিত হওয়ার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ইসরায়েল ও হামাস উভয় পক্ষই নিজেদের অবস্থান কঠোর রেখেছে। এদিকে, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মধ্যস্থতাকারী কাতারসহ অন্যান্য দেশের চেষ্টায় নতুন মাত্রা যোগ করার প্রয়োজনীয়তা আজ প্রকট।
বিশ্লেষকদের মতে, চলমান দ্বন্দ্বে কূটনৈতিক কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে হবে এবং দুই পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ফোরাম গুলোকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে তৎপর হতে হবে।
কীভাবে হবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর?
১. সেনা প্রত্যাহার ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ: ইসরায়েলি সেনাদের গাজার কাছাকাছি সীমান্ত থেকে ধাপে ধাপে সরে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
২. বন্দী মুক্তি: দুই পক্ষের আটককৃত বন্দীদের মুক্তির মাধ্যমে আস্থা বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করতে হবে।
৩. মানবিক সহায়তা: জরুরি খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রী নিরাপদে পৌঁছে দিতে হবে।
৪. আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ: তৃতীয় পক্ষ হিসেবে নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ করে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে হবে।