আঞ্চলিক

হবিগঞ্জের শাহজিবাজার গ্রিডে অগ্নিকাণ্ডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়

হবিগঞ্জের শাহজিবাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের গ্রিড উপকেন্দ্রে আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডের ফলে পুরো জেলাজুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফলে শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত অন্ধকারে ডুবে যায় পুরো হবিগঞ্জ জেলা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ বিকট শব্দের পর উপকেন্দ্র থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। এরপরই চারদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিস ও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

অগ্নিকাণ্ডের বিস্তারিত ঘটনা

সন্ধ্যা ৭টার কিছু পর শাহজিবাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের গ্রিড উপকেন্দ্র হঠাৎ বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই উপকেন্দ্রের ভেতর থেকে ধোঁয়া উঠতে শুরু করে। এলাকাবাসীরা আতঙ্কে ঘটনাস্থলের দিকে দৌড়ে যান এবং ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন।

ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এই দুর্ঘটনার কারণে উপকেন্দ্রের একটি বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

পূর্বে এমন ঘটনা

স্থানীয়দের দাবি, শাহজিবাজার গ্রিড উপকেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরেই অব্যবস্থাপনা দেখা যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে ছোটখাটো যান্ত্রিক ত্রুটি এবং হঠাৎ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা বারবার ঘটেছে। তবে এত বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এই প্রথম।

বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ

অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে হবিগঞ্জ শহরসহ জেলার সব উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে হাসপাতাল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারখানা ও গৃহস্থালি কাজে ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে রাতের বেলায় বিদ্যুৎ না থাকায় সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “আমাদের দোকানগুলো রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে। বিদ্যুৎ না থাকায় আজকের বেচাকেনা বন্ধ হয়ে গেছে। ফ্রিজে রাখা খাদ্যপণ্যও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।”

বিদ্যুৎ বিভাগের বক্তব্য

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগুনে গ্রিড উপকেন্দ্রের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে বিকল্প উৎস থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের চেষ্টা চলছে। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।

একজন কর্মকর্তা বলেন, “প্রাথমিকভাবে ট্রান্সফরমারের বিস্ফোরণের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছি। ক্ষতিগ্রস্ত যন্ত্রপাতি মেরামতের কাজ চলছে। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”

উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম

ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের যৌথ তৎপরতায় অগ্নিকাণ্ডের কারণে কোনো প্রাণহানি হয়নি। তবে অগ্নিকাণ্ডে গ্রিড উপকেন্দ্রের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার পর বিদ্যুৎ বিভাগের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরনো যন্ত্রপাতি, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গ্রিড উপকেন্দ্রগুলোতে এ ধরনের দুর্ঘটনা বারবার ঘটছে। তারা মনে করেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে অবিলম্বে আধুনিক প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন করা জরুরি।

একজন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, “এমন দুর্ঘটনা হলে পুরো জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তাই একাধিক বিকল্প গ্রিড সিস্টেম চালু করা উচিত।”

ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নির্ধারণে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে। এদিকে সাধারণ মানুষ দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে এখনো কোনো সুস্পষ্ট সময়সীমা দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন যাতে দ্রুত জেলা শহর ও আশপাশের এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালু করা যায়।

এম আর এম – ০৬৩৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button