
সিরিজের ফলাফল আগেই নির্ধারিত হয়ে গেছে। প্রথম দুই ম্যাচ হেরে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হার নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের। তবে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লক্ষ্যে তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে মরিয়া এক বাংলাদেশকেই দেখা গেল লাহোরে। ব্যাট হাতে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ রেখে পাকিস্তানের সামনে ১৯৭ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দাঁড় করিয়েছে টাইগাররা। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৬ রান তোলে সফরকারীরা।
এই সংগ্রহ বাংলাদেশের ব্যাটিং ঘাটতির সময়ে এক ধরনের আত্মবিশ্বাসও বটে, বিশেষ করে যেখানে আগের ম্যাচগুলোতে ব্যাটিং ব্যর্থতাই বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছিল। এবার ব্যাটারদের দৃঢ়তা এবং আত্মবিশ্বাস দলকে শক্ত ভিত গড়ে দিতে সহায়তা করেছে।
দারুণ শুরু, জীবন পেয়ে ব্যাট চালালেন ইমন
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমায় খেলে বাংলাদেশ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে তানজিদ তামিম যখন ৬ রানে ছিলেন, তখন ফাহিম আশরাফের বলে বাউন্ডারিতে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডার সেটি তালুবন্দি করতে না পারায় জীবন পান তামিম। সেই জীবন কাজে লাগাতে পারলেও মূল কৃতিত্ব দিতে হয় পারভেজ হোসেন ইমনকে। বাঁহাতি এই ওপেনার শুরু থেকেই মারমুখী ছিলেন এবং শুরুর ধাক্কা সামলে দলকে এগিয়ে নিতে বড় ভূমিকা রাখেন।
ইমনের ব্যাটে ৫.৩ ওভারেই বাংলাদেশ পেরিয়ে যায় পঞ্চাশ। পাওয়ার প্লে শেষে স্কোরবোর্ডে ৬ ওভারে ৫৩ রান যোগ হয়। ইমন ও তানজিদের ব্যাটে গড়া ওপেনিং জুটি দ্রুতগতিতে রান তুলতে থাকে। দুজনের দৃঢ়তায় প্রথম উইকেট জুটিতে আসে ৭০ বলে ১১০ রান।
তানজিদের পর ইমনের বিদায়, মাঝখানে ব্যাটিং ছন্দ কিছুটা খোয়া
এই জুটি ভাঙে তানজিদের বিদায়ের মাধ্যমে। ৩২ বলে ৩টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪২ রান করে ফাহিম আশরাফের বলে ক্যাচ দেন তানজিদ। পরের ওভারেই শাদাব খানের বলে উইকেট দিয়ে বসেন ইমন। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং চালিয়ে যাওয়া এই ওপেনার ৩৪ বলে ৭টি চার ও ৪টি ছক্কায় করেন ৬৬ রান।
দুই সেট ব্যাটার দ্রুত বিদায় নেওয়ায় কিছুটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তবে ক্রিজে এসে হাত খুলে খেলেন তাওহিদ হৃদয়। তাঁর ব্যাটে কিছুটা গতি ফিরে পায় ইনিংস। কিন্তু অন্যপ্রান্তে লিটন দাস ছিলেন বেশ ধীরগতির। দলের অধিনায়ক লিটন দাস আরও একবার হতাশ করেন। ১৮ বলে ২২ রানের মন্থর ইনিংস খেলে হাসান আলির বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান তিনি।
ডেথ ওভারে উইকেট পতন, সংগ্রহ বাড়াতে ভূমিকা জাকের-সাকিবের
১৮তম ওভারে পাকিস্তানের পেসার আব্বাস আফ্রিদি দেন জোড়া আঘাত। তিন বলের ব্যবধানে সাজঘরে ফেরত পাঠান শামীম হোসেন পাটোয়ারী ও হৃদয়কে। শামীম ৪ বলে ৮ রান করে আউট হন, আর হৃদয় করেন ১৮ বলে ২৫ রান।
এরপর শেষদিকে দ্রুত রান তুলতে গিয়ে ব্যর্থ হন মেহেদী হাসান মিরাজ। মাত্র ৩ বলে ১ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। তবে শেষদিকে জাকের আলী ও তানজিম হাসান সাকিব কিছুটা ক্ষতিপূরণ করেন। জাকের ৯ বলে করেন ১৫ রান, আর তানজিম অপরাজিত থাকেন ৩ বলে ৮ রান করে।
এই সংক্ষিপ্ত অথচ কার্যকর ইনিংস দুটিতে বাংলাদেশ পৌঁছে যায় ১৯৬ রানে। বিশেষ করে শেষ দুই ওভারে ২৫ রান যোগ হয়, যা লক্ষ্যটিকে করে তোলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।
পাকিস্তানের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ
লাহোরের ঘাসের উইকেট বরাবরই ব্যাটারদের সহায়ক। তবে লক্ষ্য যখন ১৯৭, তখন চাপে থাকবে যে কোনো ব্যাটিং লাইনআপ। বিশেষ করে বাংলাদেশ যদি বল হাতে আগ্রাসী হতে পারে, তাহলে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
পাকিস্তান দলের ব্যাটিং লাইনআপে রয়েছে মোহাম্মদ রিজওয়ান, বাবর আজম, ফখর জামানদের মতো অভিজ্ঞ তারকা। তবে লক্ষ্য তাড়া করার চাপ এবং বাংলাদেশের স্পিন-সহ পেস আক্রমণ এই ম্যাচে তাদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের নতুন পেসার তানজিম হাসান সাকিব ও অভিজ্ঞ শরিফুল ইসলামের উপর থাকছে চোখ।
ওপেনিংয়ে ইমনের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং প্রশংসাযোগ্য
পারভেজ হোসেন ইমন এদিন যে ইনিংসটি খেলেছেন, সেটিই ছিল বাংলাদেশের ইনিংসের ভিত্তি। ৩৪ বলেই তুলে নেওয়া তাঁর ৬৬ রান ছিল আক্রমণাত্মক, আত্মবিশ্বাসী এবং পরিকল্পিত। শুরুতেই পাকিস্তানি বোলারদের চাপে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর সাহসী ব্যাটিংয়ের কারণেই বাংলাদেশ পাওয়ার প্লেতে ভালো রান তুলতে সক্ষম হয়।
তানজিদের ব্যাটে কিছুটা স্থিরতা এলেও স্ট্রাইক রোটেশনের ঘাটতি চোখে পড়েছে। একইসঙ্গে লিটন দাসের অস্বচ্ছন্দ ইনিংসটি দলে চাপ তৈরি করেছে, যা ভবিষ্যতের জন্য চিন্তার বিষয় হতে পারে।
সিরিজের প্রেক্ষাপটে শেষ ম্যাচের গুরুত্ব
যদিও সিরিজ ইতোমধ্যেই পাকিস্তানের দখলে, তবুও এই ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য মানরক্ষার লড়াই। হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর পাশাপাশি তরুণ ব্যাটারদের আত্মবিশ্বাস ফেরানো এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি তৈরির ম্যাচ এটি। এই ম্যাচে ভালো কিছু হলে তা দলের মনোবলে বড় প্রভাব ফেলবে।
অন্যদিকে পাকিস্তান চাইবে আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে সিরিজ শেষ করতে। তিন ম্যাচে জয়ী হয়ে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইবে না তারা। ফলে ম্যাচটি দুই দলের জন্যই মর্যাদার লড়াই হয়ে উঠেছে।
উপসংহার
বাংলাদেশের ব্যাটাররা শেষ পর্যন্ত দেখাতে পেরেছেন যে তারাও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি মঞ্চে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলতে পারেন। এখন দেখার বিষয়, বোলাররা সেই সংগ্রহ রক্ষা করতে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ১৯৭ রানের লক্ষ্য সহজ নয়, বিশেষ করে চাপের ম্যাচে। এখন বাংলাদেশের বোলারদের প্রয়োজন ধৈর্য, শৃঙ্খলা ও আক্রমণাত্মক মানসিকতা। ম্যাচ জিতে সিরিজ হোয়াইটওয়াশ এড়ানো এবং আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়াই এখন প্রধান লক্ষ্য।