বিশ্ব

পুতিনের হাতে আর ১০–১২ দিন সময় আছে: স্পষ্ট বার্তা দিলেন ট্রাম্প

 ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে শান্তি চুক্তির চাপ আরও বাড়ালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পূর্বের ৫০ দিনের আল্টিমেটাম কমিয়ে এখন মাত্র ১০–১২ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে। সময়সীমার মধ্যে চুক্তি না হলে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি।


চুক্তির জন্য নতুন আল্টিমেটাম

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে আরও এক ধাপ এগোলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গত দুই সপ্তাহ আগে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ৫০ দিনের একটি সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য। কিন্তু এবার সেই সময়সীমা হঠাৎ করেই কমিয়ে আনলেন মাত্র ১০–১২ দিনে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প স্পষ্টভাবে বলেন,
“আজ থেকে পুতিনের হাতে আর ১০ বা ১২ দিন সময় আছে।”

তিনি আরও জানান, “যদি আমরা জানি কী ঘটতে যাচ্ছে, তাহলে অপেক্ষার কোনো মানে নেই। সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আর দেরি করা যাবে না।”

পুতিনকে ‘হতাশ’ বললেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানায়, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ট্রাম্প হতাশ। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সম্প্রতি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেন।
তবে রাশিয়া কোনো নতুন প্রস্তাব দেয়নি বলে জানিয়েছেন রুবিও।
এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “আমি রাশিয়ার জনগণকে ভালোবাসি, কিন্তু যুদ্ধ বন্ধের জন্য যদি প্রয়োজন হয়, কঠোর পদক্ষেপ নিতে আমি প্রস্তুত।”

কড়া শর্ত: চুক্তি না হলে নিষেধাজ্ঞা

ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি রাশিয়া কোনো চুক্তিতে না পৌঁছায়, তবে নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ নিষেধাজ্ঞা কেবল রাশিয়ার উপরেই নয়, বরং রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রাখা দেশগুলোর ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই ট্রাম্পের অন্যতম বড় অঙ্গীকার—২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন। কিন্তু চার মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও বাস্তবে পরিস্থিতির তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।
বরং, রাশিয়া সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে হামলার মাত্রা আরও বাড়িয়েছে।
ফলে ট্রাম্প প্রশাসন নতুন করে চুক্তির জন্য চাপ বাড়িয়েছে।

পূর্ববর্তী আলোচনা ও ফলাফল

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে সর্বাত্মক হামলা শুরু করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন পর্যায়ে শান্তি আলোচনার চেষ্টা করে আসছে।
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে সরাসরি আলোচনাও হয়েছিল।
তখন রাশিয়া সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিলেও, যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করেনি পুতিন।
অন্যদিকে ইউক্রেন সেই প্রস্তাব মেনে নেয়।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি

২০২২ সাল থেকে এ পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধে ২১ হাজারের বেশি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্ররা।
তবুও, রাশিয়ার অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়েনি।
এ কারণে আরও শক্তিশালী নিষেধাজ্ঞার কথা ভাবছে ট্রাম্প প্রশাসন।
এই প্রসঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও পশ্চিমা বিশ্বকে নতুন নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছেন।

অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্তে নতুন মোড়

সম্প্রতি ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করলেও, আবারও সেই সিদ্ধান্ত বদল করেছেন ট্রাম্প।
তিনি বলেছেন, “আমরা ন্যাটোর মাধ্যমে অস্ত্র সরবরাহ করব। ন্যাটো এর পুরো মূল্য পরিশোধ করবে এবং পরে সেই অস্ত্র ইউক্রেনকে দেওয়া হবে।”
বিশ্লেষকদের মতে, এ সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের যুদ্ধের সক্ষমতা বাড়াবে, তবে রাশিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে।

আন্তর্জাতিক মহলের নজর

ট্রাম্পের দেওয়া এই ১০–১২ দিনের নতুন সময়সীমা নিয়ে এখন পুরো বিশ্বজুড়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
রাশিয়া কী অবস্থান নেয়—এখন সেটিই বড় প্রশ্ন।
আলোচনায় না এলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে যুক্তরাষ্ট্র—এমন ইঙ্গিত বারবার দিচ্ছেন ট্রাম্প।

শেষ কথা

ট্রাম্প–পুতিন সম্পর্কের এই নতুন পর্যায় এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামনের ১০ দিনই নির্ধারণ করবে ইউক্রেন যুদ্ধ নতুন কোনো সমাধানের পথে যাচ্ছে কি না, নাকি আরও বড় সংঘাতের দিকে এগোবে।

এম আর এম – ০৫৬২, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button