নেপাল থেকে ঢাকায় রওনা হয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল দল

বাংলাদেশ ফুটবল দল নেপাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছে। দেশের প্রতিনিধিদল ও স্টাফ সদস্যরা আজ (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুর তিনটার দিকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিশেষ ফ্লাইটে দ্রুত ও নিরাপদভাবে দেশে ফিরেছেন। একই ফ্লাইটে ছিলেন বাংলাদেশ-নেপাল ম্যাচের কাভারেজ করার জন্য গিয়ে থাকা গণমাধ্যমকর্মীরাও।
বাংলাদেশ ফুটবল দল এই সফরে কাঠমান্ডুতে দুইটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার পরিকল্পনা করেছিল। তবে নেপালে সম্প্রতি শুরু হওয়া ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে সরকার পতন ঘটেছে এবং এ কারণে দেশের আকাশপথে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ে। ৯ সেপ্টেম্বর দুপুর থেকে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকায় দলটির দেশে প্রত্যাবর্তন বিলম্বিত হয়।
ত্রিভুবন এয়ারপোর্টে বাংলাদেশের আগমন
বৃহস্পতিবার সকালে নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ ফুটবল দল পৌঁছায়। দলটি প্রথমেই হোটেলে অবস্থান নেয়। তবে নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিমান চলাচলের বন্ধের কারণে তাদের দুই দিন হোটেলে সীমাবদ্ধ থাকতে হয়।
বাফুফে (বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন) এবং বিমান কর্তৃপক্ষ মিলিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সন্ধ্যার দিকে ফ্লাইট পুনরায় চালু হওয়ার সাথে সাথে বিশেষ ফ্লাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশ দলকে দেশে ফিরানো সম্ভব হয়।
আন্দোলন ও ফ্লাইট বন্ধের প্রভাব
নেপালে ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুরু হয় ৮ সেপ্টেম্বর। আন্দোলন দ্রুতভাবে সরকারের পতনের দিকে নিয়ে যায়। আন্দোলনের কারণে মূল শহর কাঠমান্ডুতে হট্টগোল দেখা দেয় এবং বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি কার্যক্রম প্রায় দুই দিন বন্ধ থাকে।
ফুটবল দলের জন্য নির্ধারিত ম্যাচও এই অস্থিরতার কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ দল ৯ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় তাদের ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায়। ফলে দল এবং স্টাফ সদস্যরা দুই দিন হোটেলে বন্দী অবস্থায় থাকতে বাধ্য হয়।
বাংলাদেশ দল ও স্টাফদের অভিজ্ঞতা
দলটির ক্যাপ্টেন জামাল ভূঞা বলেছেন, “নেপালের হোটেলে থাকা অবস্থায় আমরা দলের মধ্যে একতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল, কিন্তু আমরা সবাই নিরাপদে থাকার চেষ্টা করেছি।”
স্টাফ সদস্যরা বলেন, “বাফুফে ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। বিশেষ ফ্লাইট আমাদের নিরাপদে ঢাকায় ফিরিয়ে এনেছে। আমাদের সবাইকে তা স্বস্তি দিয়েছে।”
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও ক্রীড়া কর্মকর্তাদের সমর্থন
বাংলাদেশ ফুটবল দলের দ্রুত প্রত্যাবর্তন নেপালের স্থানীয় প্রশাসন এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় সম্ভব হয়। নেপালের ক্রীড়া বোর্ড এবং বাংলাদেশ দূতাবাসও দলের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
একজন ক্রীড়া বিশ্লেষক বলেন, “রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও ক্রীড়া দলে এমন দ্রুত ও সুশৃঙ্খল প্রত্যাবর্তন একটি প্রশংসনীয় দৃষ্টান্ত। এটি ক্রীড়া ব্যবস্থাপনার দক্ষতা এবং দেশের সংগঠনের সক্ষমতার প্রমাণ।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বাংলাদেশ ফুটবল দল আগামী মাসে আন্তর্জাতিক প্রস্তুতি ম্যাচ এবং প্রশিক্ষণ শিবিরের মাধ্যমে বিশ্বকাপ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুতি শুরু করবে। এই সফর থেকে দলের অভিজ্ঞতা তাদেরকে আরও মজবুত করে তুলবে।
বাফুফের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, “দলের নিরাপত্তা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ছিল। নেপালে পরিস্থিতি যে অনিশ্চিত ছিল, তাও আমাদের দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেওয়ার পরিকল্পনায় কোনো ব্যাঘাত ঘটায়নি। আমরা ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতির জন্য আরও শক্তিশালী পরিকল্পনা রাখব।”
বাংলাদেশের ক্রীড়া ও জাতীয় নিরাপত্তা
বাংলাদেশের ক্রীড়া দলগুলোর জন্য বিদেশ সফরে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা সবসময়ই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে রাজনৈতিক অস্থিরতা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই ঘটনায় দেখা গেছে, ক্রীড়া ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত দিক থেকে যথাযথ সমন্বয় থাকলে দলের জন্য বড় কোনো ঝুঁকি সৃষ্টি হয় না।
সমালোচনা ও পাঠের দিক
সামাজিক মিডিয়ায় সমালোচকেরা বলেছেন, “নেপালের পরিস্থিতি সম্পর্কে পূর্বেই সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।” তবে ক্রীড়া বিশেষজ্ঞরা বলেন, “সব পরিস্থিতি পূর্বাভাস করা সম্ভব নয়। দল নিরাপদে দেশে ফেরানোই মূল উদ্দেশ্য ছিল, যা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।”
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্রীড়া পরিচয়
বাংলাদেশ ফুটবল দল বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার মাধ্যমে ক্রীড়া কূটনীতি ও দেশের ক্রীড়া খ্যাতি বৃদ্ধি করে। এই সফর যদিও অসম্পূর্ণ রকমের খেলা দিয়ে শেষ হয়েছে, তবুও এটি দলের অভিজ্ঞতা ও সমন্বয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
MAH – 12759, Signalbd.com