আঞ্চলিক

রাজধানীতে ভেঙে পড়ল ৪০ বছরের পুরোনো গাছ, অতঃপর…

টানা বৃষ্টির ফলে ধানমন্ডি এলাকায় প্রায় ৪০ বছরের পুরোনো একটি বড় মেহগনিগাছ হঠাৎ ভেঙে পড়ে। এতে এক নারী আহত হন, ক্ষতিগ্রস্ত হয় চারটি গাড়ি। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের দ্রুত তৎপরতায় উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হয় এবং যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।

ঘটনাটি কীভাবে ঘটল

রাজধানীর ধানমন্ডি ৬ নম্বর সড়কে বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঘটে এই দুর্ঘটনা। প্রায় ৪০ বছরের পুরোনো একটি মেহগনিগাছ হঠাৎ করে কাত হয়ে পড়ে যায়। গাছটি পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাশ দিয়ে যাওয়া কয়েকটি গাড়ি ও একটি মোটরসাইকেল এর নিচে চাপা পড়ে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, গাছটি প্রথমে সামান্য হেলে পড়ে এবং মুহূর্তের মধ্যে জোরে শব্দ করে মাটিতে আছড়ে পড়ে। এতে একটি প্রাইভেট কার, একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এবং একটি মোটরসাইকেল গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

উদ্ধার অভিযান এবং ফায়ার সার্ভিসের ভূমিকা

দুর্ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। ফায়ার সার্ভিসের মোহাম্মদপুর স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার ফসির উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করি। সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভেতরে আটকে থাকা ২৬ বছর বয়সী এক নারীকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

তাদের তৎপরতায় প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেলটি সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হলেও বড় গাছের নিচে চাপা পড়ে থাকা ব্যাটারিচালিত ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা দুটি তখনও সরানো সম্ভব হয়নি। পরে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা এসে গাছ কেটে রাস্তা পরিষ্কারের কাজ শুরু করেন।

কেন ভেঙে পড়ল গাছটি

বিশেষজ্ঞদের মতে, শহরের বড় বড় পুরোনো গাছের চারপাশে যখন কংক্রিটের দেয়াল বা রাস্তাঘাট তৈরি হয়, তখন গাছের শিকড় মাটির গভীরে ছড়িয়ে যেতে পারে না। এতে গাছের স্থিতি দুর্বল হয়ে পড়ে। সাম্প্রতিক টানা বৃষ্টির কারণে মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় গাছটি হেলে পড়ে এবং অবশেষে ভেঙে যায়। এ ঘটনায় শহরের সবুজায়ন এবং গাছের সঠিক যত্ন নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে।

ধানমন্ডি এলাকার যান চলাচলে প্রভাব

গাছ ভেঙে পড়ার কারণে ধানমন্ডি ৬ নম্বর সড়ক কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এতে ওই এলাকার যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টার পর রাস্তা থেকে গাছ সরিয়ে আংশিকভাবে যান চলাচল স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়। তবে গাছের বড় অংশ সরাতে রাত পর্যন্ত সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা।

শহরে পুরোনো গাছের ঝুঁকি নিয়ে বিশেষজ্ঞ মত

শহুরে পরিকল্পনাবিদ এবং পরিবেশবিদরা দীর্ঘদিন ধরেই সতর্ক করে আসছেন যে, পুরোনো গাছগুলোর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত। ঢাকা শহরের অনেক পুরোনো গাছ শিকড়হীন এবং হেলে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, নগর এলাকায় বড় গাছের শিকড় যেন মাটিতে ছড়িয়ে যেতে পারে তার জন্য পরিকল্পিতভাবে খোলা জায়গা রাখা জরুরি।

একজন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বলেন, “শুধু গাছ লাগালেই হবে না, গাছকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। না হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা বারবার ঘটতে পারে।”

আহত নারীর অবস্থা

সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভেতরে আটকে থাকা সুমাইয়া নামে ২৬ বছর বয়সী ওই নারীকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে মানসিকভাবে তিনি ভয়াবহ আঘাত পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার স্বজনেরা।

শেষ কথা 

রাজধানীতে পুরোনো গাছ ভেঙে পড়ার এই ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিল, নগর উন্নয়ন পরিকল্পনায় গাছের সুরক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণের গুরুত্ব কতটা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্রুত এই বিষয়ে সচেতনতা না বাড়ালে এবং পুরোনো গাছগুলোর স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করলে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা আরো বাড়বে। এখন প্রশ্ন হলো, আমরা কি শহরের সবুজকে বাঁচাতে পারব, নাকি অবহেলার কারণে এই ধরনের দুর্ঘটনা অব্যাহত থাকবে?

এম আর এম – ০৬২৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button