ভালুকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই মাদরাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু

ময়মনসিংহের ভালুকায় খালে সেচ দেওয়ার সময় দুই মাদরাসা শিক্ষার্থী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিহত হয়েছেন। স্থানীয় পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং মৃতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
ঘটনায় বিস্তারিত
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নে এই দূর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, মামারিশপুর এলাকার উজ্জলের ছেলে আব্দুল মুমিন এবং মুক্তাগাছা উপজেলার বনবাংলা বাজার এলাকার আব্দুল মোতালেবের ছেলে মেহেদী। তারা রওজাতুস সুন্নাহ আল আরাবিয়া মাদরাসার মিজান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকালে মাদরাসার সামনে খালে বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায্যে সেচ দিয়ে মাছ ধরার সময় অসাবধানতাবশত তারা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। স্থানীয়রা তাদের দ্রুত উদ্ধার করে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
দুর্ঘটনার পূর্বপ্রেক্ষাপট
বড় ধরনের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট দুর্ঘটনা গ্রামীণ এলাকায় প্রায়ই ঘটে থাকে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা খেলার বা মজার জন্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার করার সময় সতর্ক না থাকার কারণে এই ধরনের ঘটনা ঘটে।
ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন মাদরাসার শিক্ষার্থীরা প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছ ধরার জন্য বৈদ্যুতিক মোটর ব্যবহার করে থাকে। স্থানীয়রা বলছেন, এ ধরনের কার্যক্রমে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই, যা বারবার প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবার ও স্থানীয়রা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তাদের পরিজনরা শিক্ষার্থীদের আকস্মিক মৃত্যুতে মানসিকভাবে ব্যথিত। এলাকার লোকজন স্থানীয় প্রশাসনকে দ্রুত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা শোকসভা করেছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এমন দুর্ঘটনা যেন আর ঘট না হয় সেজন্য খালে বৈদ্যুতিক মোটরের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব
স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিস ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খাল ও ছোট জলাশয়ে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক সময় নেই। শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রশাসনকে নিয়মিত মনিটরিং চালাতে হবে।
এক বিশেষজ্ঞ বলেন, “শিশু ও কিশোররা নিরাপদ শিক্ষার পাশাপাশি নিরাপদ পরিবেশে বড় হওয়ার অধিকার রাখে। প্রশাসনের উচিত এ ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে পদক্ষেপ নেওয়া।”
প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দ্রুত প্রতিকার চাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সমাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিদ্যালয় ও মাদরাসাগুলোকে নিয়মিত নিরাপত্তা শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বৈদ্যুতিক মোটরের ব্যবহার এবং জলাশয়ের সংযোগে নিরাপত্তা হার্ডওয়্যার স্থাপন করা জরুরি। শিক্ষার্থীরা যাতে নিরাপদভাবে সেচ দিয়ে মাছ ধরতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
ময়মনসিংহের ভালুকায় দুই শিক্ষার্থীর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা স্থানীয় সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করেছে। এটি কেবল একটি দূর্ঘটনা নয়, বরং ভবিষ্যতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের গুরুত্বকেও তুলে ধরেছে। প্রশাসন, পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে মিলিতভাবে শিশুদের নিরাপত্তার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
এম আর এম – ১২১০, Signalbd.com