তুরস্কে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত

তুরস্কে আজ শক্তিশালী একটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে, যার মাত্রা ছিল ৬.২। ভূমিকম্পটি আঘাত হানে স্থানীয় সময় বুধবার সকালে, এবং এতে আতঙ্কে বহু মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন। তবে প্রাথমিকভাবে কোনো প্রাণহানি বা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সেস (জিএফজেড) জানায়, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে। গভীরতা কম হওয়ায় কম্পনটি ছিল বেশ তীব্র, যা তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলসহ আশপাশের অঞ্চলে অনুভূত হয়।
ঘটনার পরপরই তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা প্রেসিডেন্সি (এএফএডি) এক বিবৃতিতে জানায়, ইস্তাম্বুলে অনুভূত এই ভূমিকম্পে শহরের বিভিন্ন ভবন কেঁপে ওঠে এবং আতঙ্কিত জনগণ দ্রুত ভবনগুলো থেকে বেরিয়ে আসে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়, অনেকেই রাস্তায় নেমে আসছেন এবং অনেকে প্রার্থনায় লিপ্ত হয়েছেন।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে এবং কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে এবং সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ করছে।
ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় অবস্থানকারী নাগরিকদের প্রতি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ স্থানীয়দের খোলা জায়গায় অবস্থান করতে এবং পরবর্তী নির্দেশনার জন্য সরকারি বার্তা পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভূমিকম্পের মাত্রা ও গভীরতা বিবেচনায় এটি মধ্যম ধরণের একটি কম্পন হলেও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এর প্রভাব অনেক বেশি হতে পারে। বিশেষত ইস্তাম্বুলের মতো শহরে যেখানে পুরাতন ভবনের সংখ্যা বেশি, সেখানে ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ে।
ইতোমধ্যেই স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর বরাতে জানা গেছে, কিছু স্কুল ও অফিস সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং রেল চলাচলেও সাময়িক ব্যাঘাত ঘটেছে। এএফএডি ও অন্যান্য সংস্থা পরবর্তী কম্পনের আশঙ্কায় সতর্ক রয়েছে এবং উদ্ধার সামগ্রী প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তুরস্ক, বিশেষত এর পূর্বাঞ্চল, ইতিহাসজুড়ে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৯ সালের মারমারা ভূমিকম্পে প্রায় ১৭ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল, যার বেশিরভাগই ইস্তাম্বুল এবং আশপাশের এলাকায় ছিল। সে অভিজ্ঞতা এখনও অনেক তুর্কির মনে তাজা, ফলে প্রতিটি কম্পনে ভয় ফিরে আসে।
বিশেষজ্ঞরা এই ভূমিকম্পকে “স্মরণ করিয়ে দেওয়া” হিসেবেই দেখছেন, যে ভূমিকম্পের ঝুঁকি থাকা এলাকায় অবকাঠামো শক্তিশালী করা এবং জরুরি প্রস্তুতি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এই ঘটনায় জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দক্ষতাও পুনর্মূল্যায়নের দাবি উঠেছে।
তুরস্ক সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে এবং যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে।