ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে বাংলাদেশ নিরাপদ

ভারতের হঠাৎ করে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ বাণিজ্যিকভাবে বড় কোনো সমস্যায় পড়বে না বলে আশ্বস্ত করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সক্ষমতা ও বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে, যাতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কোনো প্রকার বিঘ্ন না ঘটে।
আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন। তিনি জানান, “গতকালই (বুধবার) আমরা বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। উপস্থিত ছিলেন দেশের বড় বড় রপ্তানিকারক ও ক্রেতারাও। সবাই আশাবাদী—আমরা সম্মিলিতভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারব।”
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট আদেশ বাতিল: পটভূমি
২০২০ সালের ২৯ জুন ভারত সরকার একটি আদেশ জারি করে, যাতে বাংলাদেশের পণ্য ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পাঠানোর ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেওয়া হয়। এতে করে চট্টগ্রাম বা মংলা বন্দরের পণ্য আগরতলা হয়ে কলকাতা বা হালদিয়াতে গিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা যেত সহজে ও দ্রুত সময়ে।
কিন্তু গত মঙ্গলবার ভারত সরকারের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (CBIC) হঠাৎ করেই সেই সুবিধা বাতিল করে দেয়। ফলে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়, বিশেষ করে যারা এ সুবিধার মাধ্যমে ইউরোপ, আমেরিকায় পণ্য পাঠিয়ে আসছিলেন।
বাংলাদেশ কী করছে?
বাণিজ্য উপদেষ্টা জানিয়েছেন, “আমরা আমাদের অবকাঠামো উন্নয়নের দিকেই বেশি মনোযোগী হচ্ছি। বন্দর, রেলপথ, সড়ক ও ইন্টিগ্রেটেড লজিস্টিক সাপোর্ট ব্যবস্থার উন্নয়ন করে নিজস্ব সক্ষমতা গড়ে তোলা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই সিদ্ধান্তের ফলে কিছু ক্ষেত্রে খরচ বাড়তে পারে এবং পরিবহন সময়ও কিছুটা বাড়বে, তবে আমরা তা মোকাবিলায় প্রস্তুত।”
যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক স্থগিত: কিছুটা স্বস্তি
বাণিজ্য উপদেষ্টা এ-ও জানান যে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তিন মাসের জন্য বাড়তি শুল্ক স্থগিত রেখেছে। ফলে আপাতত একটি সুরক্ষা বলয় তৈরি হয়েছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ তার রপ্তানি কার্যক্রম সচল রাখতে পারবে।
এটি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ, কারণ এই সময়ের মধ্যে দেশ অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারবে এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কৌশল নির্ধারণ করতে পারবে।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ও কূটনৈতিক অবস্থান
ভারতের এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা চলছে। কেউ কেউ বলছেন, বাংলাদেশও ভারতের ট্রানজিট সুবিধা বাতিল করতে পারে।
তবে এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “এই বিষয়টি আমার আওতায় পড়ে না। আমার দায়িত্ব হলো দেশের বাণিজ্যিক সক্ষমতা বাড়ানো এবং বাজারে প্রতিযোগিতা ধরে রাখা।”
ভারতের কাছে কোনো কূটনৈতিক চিঠি পাঠানো হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে এ ধরনের কিছু বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না।”
পরিস্থিতি থেকে কি শিখছে বাংলাদেশ?
বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনায় বাংলাদেশ আরও সচেতন হয়ে উঠেছে বিকল্প বন্দর, ট্রানজিট ও পরিবহন ব্যবস্থার গুরুত্ব সম্পর্কে। বিশেষ করে ভুটান, নেপাল এবং চীনের সঙ্গে সরাসরি রেল ও সড়ক যোগাযোগ জোরদার করার চিন্তা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
একই সঙ্গে, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের ডিজিটালাইজেশন, আধুনিক কনটেইনার ব্যবস্থাপনা এবং কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজীকরণের মতো পদক্ষেপ বাংলাদেশকে ভবিষ্যতের জন্য আরও প্রস্তুত করতে পারে।