উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিক আন্দোলনে সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৮

নীলফামারী জেলার উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) গত চার দিন ধরে চলমান শ্রমিক আন্দোলন সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) এক নতুন মোড় নেয়। এভারগ্রিন প্রোডাক্টস ফ্যাক্টরি (বিডি) লিমিটেডের শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সোমবার কারখানা কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
আন্দোলনের পটভূমি
শ্রমিকরা ২০ দফা দাবি তুলেছেন, যার মধ্যে রয়েছে উৎপাদন টার্গেট কমানো, ওভারটাইম নিশ্চিত করা, ছুটি যথাযথভাবে দেওয়া, বেতন ও ভাতা সময়মতো পরিশোধ, আবাসন ও প্রমোশনের জটিলতা নিরসন, সকাল ৭টার আগে ডিউটি না রাখা, গর্ভবতী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ সুবিধা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ করা এবং ক্ষুদ্র সমস্যাকে কেন্দ্র করে চাকরিচ্যুত না করা।
শ্রমিক সোহাগ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, “আমরা টানা চার দিন শান্তিপূর্ণভাবে দাবি তুলেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো আলোচনা করেনি। উল্টো কারখানা বন্ধ করে আমাদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছে।”
সংঘর্ষের ঘটনা
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে শ্রমিকরা ইপিজেড এলাকার বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটে। আতঙ্কে আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, সাধারণ মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
সংঘর্ষে নিহত হন শ্রমিক হাবিব ইসলাম (২০)। তিনি ইপিজেডের ইকো কোম্পানিতে কাজ করতেন। হাবিব নীলফামারী সদর উপজেলার সংগলশী ইউনিয়নের কাজিরহাট গ্রামের দুলাল হোসেনের ছেলে।
সংঘর্ষে আরও আটজন শ্রমিক আহত হন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে নীলফামারীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কারখানা কর্তৃপক্ষের অবস্থান
কারখানা কর্তৃপক্ষ নোটিশে জানিয়েছে, “টানা আন্দোলনে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯-এর ধারা ১২(১) অনুযায়ী ২ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তী নোটিশে পুনরায় চালুর কথা জানানো হবে।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা
এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। তবে শ্রমিকদের অভিযোগ, তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সহিংসভাবে দমন করা হয়েছে।
স্থানীয় জনগণের প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় জনগণ বলেন, “এমন পরিস্থিতি আগে কখনো দেখিনি। শ্রমিকদের দাবি যৌক্তিক, তবে সহিংসতা কোনো সমাধান নয়।”
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
শ্রমিকরা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা বলেন, “যতদিন আমাদের দাবি পূর্ণাঙ্গভাবে মেনে না নেওয়া হবে, ততদিন আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
এদিকে, কারখানা কর্তৃপক্ষও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারা শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
উত্তরা ইপিজেডের এই ঘটনা শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ের সংগ্রামের একটি উদাহরণ। শ্রমিকদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে তারা জানিয়েছেন। এটি বাংলাদেশের শ্রম আইন ও শ্রমিক অধিকার নিয়ে নতুন করে ভাবার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
MAH – 12608, Signalbd.com