ইরেশ যাকের আন্দোলনের পক্ষে জানালেন ফারুকী, সংস্কৃতি উপদেষ্টা

সম্প্রতি অভিনেতা ও প্রযোজক ইরেশ যাকেরের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাকে ঘিরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তোলপাড় চলছে। এ নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংস্কৃতি উপদেষ্টা ও বিখ্যাত নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
সোমবার (২৮ এপ্রিল, ২০২৫) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি ইরেশ যাকেরের মামলার প্রসঙ্গে বলেন, তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটন হবে। এ সময় তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইরেশ যাকের ছিলেন জুলাই আন্দোলনের সক্রিয় সমর্থক।
মামলার প্রসঙ্গে ফারুকীর বক্তব্য
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী জানান, “ইরেশ যাকেরকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তিনি জুলাই আন্দোলনের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তবে এই মামলাটি রাষ্ট্র দায়ের করেনি, করেছে কোনো ব্যক্তিগত পক্ষ। নতুন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রতিটি নাগরিকের মামলা করার অধিকার রয়েছে। তবে এই অধিকার কেউ কেউ অপব্যবহারও করছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি বিশ্বাস করি পুলিশ যথাযথ তদন্ত করে সত্য উদঘাটন করবে। যদি অভিযোগ সত্য হয়, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যদি মিথ্যা হয়, তাহলে মামলা বাতিল হবে।”
ইরেশ যাকের ও জুলাই আন্দোলন
ইরেশ যাকের দীর্ঘদিন ধরেই সংস্কৃতি অঙ্গনে একজন সুপরিচিত নাম। টিভি নাটক, চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপনে তাঁর কাজ প্রশংসিত হয়েছে। সম্প্রতি তিনি দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আলোচিত জুলাই আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। সেই সময় দেশের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে অনুষ্ঠিত এ আন্দোলনে বহু সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের সাথে ইরেশ যাকেরও সরব ভূমিকা পালন করেন।
ফারুকীর মন্তব্য ইঙ্গিত করে যে, ইরেশ যাকেরের বিরুদ্ধে মামলাটি হয়তো তার রাজনৈতিক অবস্থানের কারণেও হতে পারে, যদিও এখনই কোনো সিদ্ধান্তে আসার আগে তদন্তের ফলাফলের অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন তিনি।
কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের সাফল্য
এদিন সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সম্প্রতি কান চলচ্চিত্র উৎসবে মনোনয়ন পাওয়া শর্টফিল্ম ‘আলী’-এর কলাকুশলীদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের এই অর্জনকে গর্বের বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, “আমাদের সংস্কৃতির জাগরণ এখন বিশ্বমঞ্চেও আলো ছড়াচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, সরকার ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় চলচ্চিত্র, নাটক, সংগীতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা বৃদ্ধি করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অপ্রকাশিত কাজের প্রসঙ্গ
সংস্কৃতি উপদেষ্টা তার বক্তব্যে আরও বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় নিয়মিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে, যেগুলো সবসময় গণমাধ্যমে আসে না। উদাহরণ হিসেবে তিনি টাঙ্গাইলের একটি ঘটনা তুলে ধরেন। সেখানে একটি পাঠাগারে এক পক্ষ বই সরিয়ে দিয়েছিল। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় হস্তক্ষেপে সমস্যার সমাধান হয় এবং পাঠাগারটি আবার চালু করা হয়।
তিনি বলেন, “আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। অনেক সময় প্রচারের আলোয় আসে না বলেই অনেকে মনে করেন কিছু করা হচ্ছে না। বাস্তবে ব্যাপক কাজ চলছে।”
মামলার তদন্ত নিয়ে আশাবাদী ফারুকী
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী স্পষ্ট করেন, এই মামলার বিষয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সরাসরি জড়িত নয়, তবে নৈতিকভাবে তারা ন্যায়বিচারের পক্ষে। তিনি বলেন, “আমরা চাই সত্য প্রকাশিত হোক। কোনো নির্দোষ ব্যক্তি যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন, মামলার বিষয়ে আগে থেকে রায় দিয়ে না ফেলে তদন্তের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
ইরেশ যাকেরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, দেশের বর্তমান রাজনীতির আলোকে সংস্কৃতিকর্মীদের স্বাধীন মত প্রকাশের ওপর চাপ বাড়ছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, আইন সবার জন্য সমান এবং কোনো অভিযোগ এলে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পাশাপাশি আইনের শাসনও অপরিহার্য। তাই যেকোনো অভিযোগ যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে বিবেচনা করা উচিত।
ইরেশ যাকেরের বিরুদ্ধে মামলা এবং মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর বক্তব্যের পর পুরো বিষয়টি এখন পুলিশের তদন্তের ওপর নির্ভর করছে। সংস্কৃতি অঙ্গনের সবাই আশা করছেন, তদন্ত নিরপেক্ষ হবে এবং সত্যের জয় হবে।
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, নতুন বাংলাদেশের বাস্তবতায় মত প্রকাশের স্বাধীনতার পাশাপাশি দায়িত্বশীল আচরণ এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধা অত্যন্ত জরুরি।