অর্থনীতি

আজীবনের জন্য পুঁজিবাজার থেকে বহিষ্কৃত সালমান এফ রহমান, ১০০ কোটি টাকা জরিমানা

 বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজারে অনিয়মের অভিযোগে আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। একই সঙ্গে ১০০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।


দেশের পুঁজিবাজারে অনিয়ম ও সুশাসনের ঘাটতির কারণে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কমিশনের ৯৬৫তম সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে আজীবনের জন্য পুঁজিবাজারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে এবং তাকে ১০০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বিএসইসির ঘোষণা এবং মূল সিদ্ধান্ত

মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বিএসইসির ৯৬৫তম সভার পর বুধবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সালমান এফ রহমানের পাশাপাশি তার ছেলে ও আইএফআইসি ব্যাংকের তৎকালীন ভাইস-চেয়ারম্যান আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানকেও আজীবনের জন্য অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া, আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আহমেদকে ৫ বছরের জন্য পুঁজিবাজারের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ারের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

অনিয়মের অভিযোগ ও তদন্তের ফলাফল

বিএসইসি জানিয়েছে, আইএফআইসি ব্যাংকের মাধ্যমে ‘গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড’ ইস্যু ও ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থহানি এবং স্বচ্ছতার ঘাটতির অভিযোগে দীর্ঘ তদন্তের পর এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
এই তদন্ত প্রতিবেদনে পুঁজিবাজারে সুসংগঠিত অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি এবং সুশাসনের অভাবের প্রমাণ মিলেছে, যা বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির কারণ হয়েছে।

অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়েই নয়, প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও বিএসইসি কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসিকে ভবিষ্যতে কোনো ধরনের অনিয়ম করলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
এছাড়া ব্যাংকের তৎকালীন মনোনীত পরিচালক এ আর এম নাজমুস সাকিব, মো. গোলাম মোস্তফা, মো. জাফর ইকবাল (এনডিসি), কাওমরুন নাহার আহমেদ এবং স্বতন্ত্র পরিচালক সুধাংশু শেখর বিশ্বাসকেও সতর্ক করা হয়েছে।

পুঁজিবাজারের জন্য এই সিদ্ধান্তের গুরুত্ব

বিশ্লেষকদের মতে, দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে এবং বাজারকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে এই ধরনের কঠোর শাস্তি প্রয়োজন ছিল।
বছরের পর বছর ধরে পুঁজিবাজারে অনিয়মের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। এ সিদ্ধান্ত বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভবিষ্যতে কী হতে পারে

বিএসইসি জানিয়েছে, ভবিষ্যতে কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে অনিয়ম করলে একইভাবে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।
এ ধরনের পদক্ষেপ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, এই ঘটনায় বাজারে স্বল্পমেয়াদী অস্থিরতা তৈরি হলেও দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

একজন অর্থনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “এই সিদ্ধান্ত একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিয়ম বন্ধে এটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি স্বস্তির খবর।”

সংক্ষেপে


পুঁজিবাজারের স্বচ্ছতা ও সুশাসন ফিরিয়ে আনতে এ ধরনের পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে বিএসইসি। তবে সময়ই বলে দেবে, এই শাস্তির ফলে বাজার কতটা ইতিবাচক পরিবর্তনের মুখ দেখবে।

এম আর এম – ০৫৯৯ , Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button