মেসির জোড়া গোলে নতুন ইতিহাস, এমএলএসে ইন্টার মায়ামির সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন তিনিই
আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসি যেন থামতেই জানেন না। বয়স বাড়লেও ফর্মে নেই কোনো ছন্দপতন। যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে (MLS) ইন্টার মায়ামির হয়ে খেলতে নেমে এবার গড়লেন আরেকটি রেকর্ড। সর্বশেষ ম্যাচে জোড়া গোল করে তিনি হয়ে গেলেন ইন্টার মায়ামির সর্বোচ্চ গোলদাতা।
রোববার সকালে (বাংলাদেশ সময়) ঘরের মাঠ চেজ স্টেডিয়ামে কলম্বাস ক্রুর বিপক্ষে ম্যাচে দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন মেসি। শুধু গোলই করেননি, করিয়েছেনও দুটি। তার অনন্য নৈপুণ্যে ইন্টার মায়ামি ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছে কলম্বাসকে। মেসির গোল সংখ্যা এখন ৩১, যা আগের রেকর্ডধারী গঞ্জালো হিগুয়েইনের ২৯ গোলকে ছাড়িয়ে গেছে।
মেসির গোল উৎসবে ইতিহাস গড়া রাত
ম্যাচের শুরু থেকেই মেসির প্রভাব ছিল স্পষ্ট। ১৩ মিনিটে তার দুর্দান্ত লং পাস থেকে গোল করেন তাদেও আলেন্দে। মাঝমাঠ থেকে বাড়ানো নিখুঁত পাসটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গোল করেন এই আর্জেন্টাইন উইঙ্গার।
এর ঠিক দুই মিনিট পরই, কলম্বাস গোলরক্ষক নিকোলাস হাগেন একটি মারাত্মক ভুল করে বসেন। সতীর্থকে বল দিতে গিয়ে তিনি তা তুলে দেন বক্সের কাছাকাছি অবস্থানরত মেসির পায়ে। এমন সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেননি বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। সহজভাবে বল জালে পাঠিয়ে ব্যবধান ২-০ করেন।
২৪ মিনিটে আবারও গোল করেন মেসি, এটি ছিল তার জোড়া গোল পূর্ণ হওয়ার মুহূর্ত। এবার সহায়তাকারী ছিলেন পুরোনো বার্সেলোনা সতীর্থ সের্হিও বুসকেতস। মাঝমাঠ থেকে উঁচু পাসে গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বল জালে পাঠিয়ে দলের জয় একপ্রকার নিশ্চিত করেন।
পরিসংখ্যানেও এগিয়ে মায়ামি, সেরা ফিনিশিং মেসির
খেলার মাঠে বল দখলের লড়াই বেশ সমানে-সমানে হয়েছিল। মায়ামি দখলে রাখে ৫১ শতাংশ বল, আর কলম্বাসের দখলে ছিল ৪৯ শতাংশ। শটের দিক থেকেও বড় ব্যবধান ছিল না — মায়ামি নেয় ১৪টি শট, কলম্বাস নেয় ১২টি। তবে লক্ষ্যে শট রাখার দক্ষতায় মায়ামি অনেক এগিয়ে। তারা নেয় ৭টি অন-টার্গেট শট, যেখানে কলম্বাসের ছিল মাত্র ১টি।
এখানেই মেসি ও মায়ামির পার্থক্য স্পষ্ট — শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ফিনিশিংয়ে শ্রেষ্ঠত্ব।
ক্লাব ইতিহাসে শীর্ষ গোলদাতা মেসি
এই ম্যাচে জোড়া গোল করে মেসি গড়েছেন নতুন রেকর্ড। ইন্টার মায়ামির ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন তিনিই। আগের রেকর্ড ছিল আরেক আর্জেন্টাইন তারকা গঞ্জালো হিগুয়েইনের দখলে, যার গোল সংখ্যা ছিল ২৯টি। মেসির গোল এখন ৩১টি। উল্লেখ্য, মেসি ২০২৩ সালের জুনে মায়ামিতে যোগ দেন। অল্প সময়েই তিনি হয়ে উঠেছেন ক্লাবটির প্রতীক ও প্রাণভোমরা।
গোল করানোতেও পারদর্শী মেসি
শুধু গোল নয়, সহায়তাতেও মেসি ছিলেন দুর্দান্ত। প্রথম গোলটি করিয়েছেন আলেন্দেকে এবং ম্যাচের শেষ দিকে ফাফা পিকাল্টকে পাস দিয়ে করিয়েছেন পঞ্চম গোলটি। গোলের সুযোগ তৈরি এবং সতীর্থদের কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে তার পারফরম্যান্স চোখে পড়ার মতো।
দ্বিতীয়ার্ধে কলম্বাসের একমাত্র জবাব
বিরতির পর কলম্বাস কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। ৫৮ মিনিটে সিজার রুভালকাবা একটি গোল করে ব্যবধান ৩-১ করেন। তবে মায়ামি দমে যায়নি। ৬৪ মিনিটে লুইস সুয়ারেজ ব্যবধান বাড়িয়ে ৪-১ করেন এবং ম্যাচের শেষ দিকে ফাফা পিকাল্টের গোলে ৫-১ ব্যবধান নিশ্চিত হয়।
পয়েন্ট তালিকায় তিনে মায়ামি
এই বড় জয়ের ফলে এমএলএস পয়েন্ট টেবিলে তিন নম্বরে উঠে এসেছে ইন্টার মায়ামি। ১৮ ম্যাচে ৮ জয়, ৫ ড্র ও ৩ হারে মেসিদের পয়েন্ট এখন ২৯। শীর্ষে থাকা ফিলাডেলফিয়া ইউনিয়নের থেকে তারা মাত্র ৫ পয়েন্টে পিছিয়ে, তবে একটি ম্যাচ কম খেলেছে মায়ামি। অর্থাৎ লিগের বাকি অংশে শীর্ষে ওঠার জোর সম্ভাবনা রয়েছে মেসিদের সামনে।
আর্জেন্টাইন সংযোগ: মেসি, বুসকেতস, আলেন্দে, সুয়ারেজ
মায়ামির এই দলে পুরোনো বার্সা সংযোগ এখন আর নতুন কিছু নয়। সের্হিও বুসকেতস ও লুইস সুয়ারেজের মতো তারকারা নিয়মিতই পারফর্ম করছেন। আজকের ম্যাচেও আর্জেন্টাইন ও দক্ষিণ আমেরিকান জুটির অসাধারণ বোঝাপড়ার প্রমাণ পাওয়া গেল।
বিশ্ব ফুটবলে মেসির প্রভাব অব্যাহত
২০২২ সালের বিশ্বকাপ জয়ের পর অনেকে ভেবেছিলেন মেসির ক্যারিয়ারের গতি হয়তো থেমে যাবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে এসেও তিনি দেখিয়ে যাচ্ছেন কেন তিনি ইতিহাসের অন্যতম সেরা। শুধু পারফরম্যান্স নয়, তার উপস্থিতি মেজর লিগ সকারের জনপ্রিয়তাকেও অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
লিওনেল মেসি আবারও প্রমাণ করলেন, বয়স নয়, প্রভাবই আসল। মাঠে নেমে তিনি দলকে যেমন জয় এনে দেন, তেমনি তৈরি করেন নতুন ইতিহাস। মেজর লিগ সকারে ইন্টার মায়ামির জার্সিতে এমন আর কত ইতিহাস অপেক্ষা করছে—তা সময়ই বলে দেবে।
