ফুটবল

হামজা-শমিতদের ম্যাচ ঘিরে ব্যতিক্রমী আয়োজনের পথে বাফুফে

দীর্ঘ সময় পর আবারও প্রাণ ফিরছে দেশের ফুটবলে। একসময় যা ছিল গ্যালারিভর্তি দর্শক, পাড়ায় পাড়ায় আলোচনা—তা যেন হারিয়েই যাচ্ছিল সময়ের আবর্তে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার হামজা চৌধুরী, শমিত সোম ও ফাহামিদুল ইসলামের আগমনে দেশের ফুটবল আবারও আলোচনার কেন্দ্রে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নতুন যুগের সূচনা করতে চায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।

১০ জুনের ম্যাচ ঘিরে উৎসবের প্রস্তুতি

আগামী ১০ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, যেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকবে সিঙ্গাপুর। তবে এই ম্যাচ শুধুমাত্র একটি টুর্নামেন্টের অংশ নয়, বরং একে ঘিরে তৈরি হচ্ছে ‘ফুটবল উৎসবের’ পরিবেশ। মাঠের ৯০ মিনিট ছাড়িয়ে বিস্তৃত হচ্ছে আয়োজনের পরিসর—থাকছে লেজার শো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফ্যানজোন, এমনকি বিশেষ বাস ও মেট্রোরেল সেবা।

এই ম্যাচটিকে ঘিরে ফেডারেশন যা ভাবছে, তা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল ইতিহাসেও ব্যতিক্রম বলে মনে করেন বাফুফের সহসভাপতি ফাহাদ করিম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন,

“এটা শুধুই একটা ম্যাচ নয়। আমরা এমন কিছু করতে যাচ্ছি, যা বাংলাদেশ তো দূরের কথা, দক্ষিণ এশিয়াতেও এর আগে হয়নি।”

হামজা-শমিতদের নিয়ে বাড়তি আগ্রহ

শেফিল্ড ইউনাইটেডের মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরীর বাংলাদেশ জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছে ভারতের বিপক্ষে, চলতি বছরের ২৫ মার্চে। অপরদিকে, কানাডা জাতীয় দলের হয়ে খেলা শমিত সোম এবারই প্রথম দেশের জার্সিতে মাঠে নামবেন। ইতালির চতুর্থ স্তরের ক্লাব ওলবিয়া কালসিওতে খেলা ফাহামিদুল ইসলামও এবার দলে যোগ দিচ্ছেন।

এই তিন ফুটবলারকে ঘিরে তৈরি হওয়া আগ্রহকে পুঁজি করে দেশীয় ফুটবলকে এগিয়ে নিতে চাইছে বাফুফে। সহসভাপতি ফাহাদ করিম বলেন,

“হামজা-শমিতের মতো আন্তর্জাতিক মানের ফুটবলার দলে যোগ দিলে শুধু দলের মান বাড়ে না, ব্র্যান্ড ভ্যালুও বাড়ে। আমরা এই ব্র্যান্ড ভ্যালুকে কাজে লাগিয়ে আবার ফুটবলের সেই পুরোনো গৌরব ফেরাতে চাই।”

দর্শকদের জন্য টিকিট এবং অভিজ্ঞতা

আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে ম্যাচের টিকিট বিক্রি, যা অনলাইনের মাধ্যমেই পাওয়া যাবে। টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে ৪০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতটা বিস্তৃত টিকিট মূল্যের পরিসর এর আগে ফুটবল ম্যাচে দেখা যায়নি। উল্লেখযোগ্য যে, দেশের ফুটবলে অনেক সময় দর্শক টানতে বিনামূল্যে খেলার আয়োজন করলেও গ্যালারি ফাঁকা থাকত।

বাফুফে এবার সেই চিত্র পাল্টাতে চায়। দর্শকদের মাঠে এনে একটি সম্পূর্ণ বিনোদনমূলক অভিজ্ঞতা দেওয়ার লক্ষ্যে গ্রহণ করা হচ্ছে নানা আয়োজন। তবে ফাহাদ করিম এক চমকের ইঙ্গিত দিয়ে জানান,

“একটা চমক থাকবে, যা এখনই প্রকাশ করতে চাই না। তবে এতটুকু বলি, এটি দক্ষিণ এশিয়ার স্পোর্টস ইতিহাসে নজিরবিহীন হবে।”

মাঠে ফিরছেন দর্শক, আসছেন স্পনসররাও

দেশের ফুটবলে আবারও প্রাণ ফেরার ইঙ্গিত মিলেছে কেবল দর্শক নয়, স্পনসর প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেও। একসময় দেশের জাতীয় দলে কিট স্পনসর ছিল অ্যাডিডাস, লোটো, নকিয়া, গ্রামীণফোনের মতো প্রতিষ্ঠান। তবে ফুটবলের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ায় তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।

বর্তমানে সেই পরিস্থিতি বদলেছে। বাফুফে নতুন কিট স্পনসর পেয়েছে ‘দৌড়’ নামক স্থানীয় ব্র্যান্ডকে। জাতীয় দলের প্রধান স্পনসর হিসেবে যুক্ত হয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)। মোবাইল অপারেটর রবি যুক্ত হয়েছে টিকিট ক্যাম্পেইনে। বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক মানের ক্রীড়া সামগ্রী প্রস্তুতকারী জাপানি প্রতিষ্ঠান Molten বাংলাদেশের ফুটবলে প্রথমবারের মতো স্পনসর হয়েছে।

সিঙ্গাপুর ম্যাচের জন্য বাফুফে পেয়েছে আরও একটি টাইটেল স্পনসর এবং তিন থেকে চারটি কো-স্পনসর। এসবই প্রমাণ করে, হামজা-শমিতদের আগমনের মাধ্যমে বাংলাদেশি ফুটবলে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বারও খুলে যাচ্ছে।

ফুটবল যখন আলোচনায়, লাভবান হচ্ছেন স্থানীয়রাও

এই তিন তারকার আগমনে কেবল আন্তর্জাতিক মিডিয়া নয়, স্থানীয় খেলোয়াড়রাও অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। জাতীয় দলের অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেন বলেন,

“হামজাকে দেখে এখন অনেকেই আসছেন। ফুটবল নিয়ে একটা আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। এটা দেশের জন্য খুবই দরকার ছিল।”

ফাহামিদুলের মতো তরুণরা ইউরোপের ক্লাবে খেললেও দেশের হয়ে মাঠে নামতে আগ্রহী। এতে ভবিষ্যতে বিদেশি ঘরানার আরও খেলোয়াড়কে জাতীয় দলে টানার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তাতে যেমন দলের মান বাড়বে, তেমনি ফুটবলের প্রতি আগ্রহ বাড়বে তরুণ প্রজন্মের।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button