ফুটবল

একদিনে দুই কিংবদন্তির বিদায়: রোনালদো ও মেসির পরাজয়ে হতাশ বিশ্ব

দুনিয়ার কোটি ফুটবলপ্রেমীর হৃদয়ে একদিনে জমেছে হতাশা আর নস্টালজিয়া। কারণ এক রাতেই দুই মহাতারকা—ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসির দল বিদায় নিয়েছে দুই মহাদেশীয় প্রতিযোগিতা থেকে। একদিকে রোনালদোর আল নাসর হেরে গেল এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগে, অন্যদিকে মেসির ইন্টার মায়ামি বিদায় নিল কনক্যাকাফ চ্যাম্পিয়নস কাপ থেকে।

রোনালদোর চোখে হতাশা, হৃদয়ে যুদ্ধ

সৌদি আরবের জেদ্দার কিং আবদুল্লাহ স্পোর্টস সিটিতে বুধবার রাতের ম্যাচে আল নাসর ৩–২ গোলে হেরে যায় জাপানি ক্লাব কাওয়াসাকি ফ্রন্তেলের কাছে। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার পর রোনালদোকে দেখা যায় মাঠের কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে, হাত উঁচিয়ে কী যেন বলছেন। হয়তো নিজেকেই দিচ্ছেন ব্যাখ্যা, কিংবা ভাগ্যকে দিচ্ছেন দায়।

৪০ বছর বয়সী এই পর্তুগিজ তারকার জন্য বিষয়টি শুধু একটি ম্যাচ নয়, বরং একটি অসমাপ্ত লক্ষ্য। ২০২২ সালে আল নাসরে যোগ দেওয়ার পর এখনও বড় কোনো শিরোপা হাতে ওঠেনি। এই ম্যাচেও ৯৫তম মিনিটে একটি নিশ্চিত গোলের সুযোগ নষ্ট করেন তিনি, যা হতাশার আগুনে ঢেলে দেয় ঘি।

রোনালদো পরে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লেখেন, ‘কখনো কখনো স্বপ্নকে অপেক্ষা করতে হয়। আমি এই দল এবং পারফরম্যান্স নিয়ে গর্বিত।’

মেসির সকালটাও বিষণ্ন

রোনালদোর ব্যর্থতার ৬ ঘণ্টা পর বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৬টায় আরেকটি দুঃসংবাদ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ইন্টার মায়ামি কনক্যাকাফ চ্যাম্পিয়নস কাপের ফিরতি লেগে ভ্যাঙ্কুভার হোয়াইটক্যাপসের কাছে ৩–১ গোলে হেরে যায়। দুই লেগ মিলিয়ে ৫–১ ব্যবধানে বিদায় নেয় মেসির দল।

প্রথমার্ধে লুইস সুয়ারেজের পাস থেকে জর্দি আলবার গোলে মায়ামি এগিয়ে গেলেও বিরতির পর ভ্যাঙ্কুভার তিনটি গোল করে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়। মেসি চেষ্টা করেছেন, সুযোগ পেয়েছেন, কিন্তু সাফল্যের মুখ দেখেননি। ম্যাচ শেষে তাঁর চোখে ছিল হতাশার ছায়া, যা বলে দিচ্ছিল কিংবদন্তিও হেরে যেতে পারেন।

ভক্তদের ভাঙা হৃদয়

রোনালদো ও মেসি—এই দুই নামই ফুটবলকে নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়। গত দুই দশকজুড়ে মাঠের রাজা ছিলেন এই দুই তারকা। একই দিনে, একই পরিণতি যেন ফুটবলপ্রেমীদের মনে এক শূন্যতা এনে দিল।

বাংলাদেশের অনেক ভক্ত রাত জেগে রোনালদোর ম্যাচ দেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ভোরে ঘুম ভেঙে যখন মেসির ম্যাচ দেখতে বসেছেন, তখন তাঁদের জন্য সকালটা আরও হতাশার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া প্রতিক্রিয়াগুলো বলছে, অনেকেই এই রাত ও সকালকে বলছেন ‘নক্ষত্রপতনের দিন’।

কেন এমন হলো? পারফরম্যান্স বনাম বয়স

রোনালদো ও মেসি—দুজনই চল্লিশ ও উনচল্লিশ ছুঁইছুঁই বয়সে পৌঁছে গেছেন। স্বাভাবিকভাবেই গতি, ফিটনেস, ফিনিশিং আগের মতো থাকে না। কিন্তু সমস্যা শুধু বয়স নয়। দলগত সমন্বয়ের অভাব, ট্যাকটিক্যাল দুর্বলতা ও প্রতিপক্ষের আধুনিক ফুটবল পরিকল্পনার সামনেও অসহায় দেখিয়েছে এই দুই কিংবদন্তিকে।

আশা এখনও শেষ নয়

যদিও দুজনেই নিজেদের ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছেন, তবে ফুটবল বিশ্ব জানে—তাঁদের ভেতরের আগুন এখনও নিভে যায়নি। আগামী মৌসুমে হয়তো তাঁরা আবারও ফিরবেন শক্ত হয়ে। মেসির সামনে মেজর লিগ সকারে আরেকটি মৌসুম রয়েছে, আর রোনালদো এখনো সৌদির ঘরোয়া লিগে লড়াই করছেন।

ফুটবলের নিষ্ঠুর বাস্তবতা

ফুটবল এক নির্মম খেলাও বটে। যেখানে কিংবদন্তিরাও হেরে যান, চোখে জল আসে কোটি ভক্তের। রোনালদো ও মেসির বিদায় সেই চিরন্তন বাস্তবতারই এক নতুন অধ্যায়। তবে এই দুই নক্ষত্র যতদিন আলো ছড়ান, ফুটবল দুনিয়া ততদিন তাদের গল্প বলবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button