অর্থনীতি

বাংলাদেশে বিনিয়োগে যেসব বড় পাঁচটি বাধা দেখছে আইএফসি

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের গতি আশানুরূপ নয়। জিডিপির তুলনায় বিনিয়োগের হার কম এবং প্রতিবছর তা বাড়ার পরিবর্তে স্থবিরতা কিংবা হ্রাসের দিকে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাংকের বেসরকারি খাতভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (IFC) সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বাংলাদেশের বিনিয়োগ-পরিবেশে বিদ্যমান পাঁচটি প্রধান প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করা হয়েছে।

প্রতিবন্ধকতা পাঁচটি কী?

কান্ট্রি প্রাইভেট সেক্টর ডায়াগনস্টিক (CPSD) শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিনিয়োগে যেসব বড় বাধা রয়ে গেছে তা হলো:

  1. বিদ্যুৎ ঘাটতি ও সরবরাহে অনিশ্চয়তা
  2. অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা ও ঋণপ্রাপ্তির জটিলতা
  3. দুর্নীতি ও স্বচ্ছতার অভাব
  4. অনানুষ্ঠানিক খাতের আধিক্য
  5. উচ্চ করহার ও শুল্ক জটিলতা

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে ঢাকায় চলমান চারদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে। এতে ২০২২ সালের তথ্য ও বিশ্লেষণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে?

জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাড-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী বিদেশি বিনিয়োগ কমে ২% হলেও বাংলাদেশে তা কমেছে প্রায় ১৪%। ঐ বছর বাংলাদেশ পেয়েছে মাত্র ৩০০ কোটি ডলারের FDI, যেখানে একই সময়ে:

  • ভারত: ২,৮১৬ কোটি ডলার
  • ভিয়েতনাম: ১,৮৫০ কোটি ডলার
  • ইন্দোনেশিয়া: ২,১৬৩ কোটি ডলার
  • কম্বোডিয়া: ৩৯৬ কোটি ডলার
  • পাকিস্তান: ১৮২ কোটি ডলার

বাংলাদেশের জিডিপির অনুপাতে বিদেশি বিনিয়োগের হার ছিল মাত্র ০.৪%, যা এই অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম নিম্ন।

কোন খাতে সম্ভাবনা বেশি?

আইএফসি বলছে, সঠিক নীতিগত সহায়তা থাকলে চারটি খাতে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে:

  • আবাসন খাত
  • রং ও ডাইস শিল্প
  • তৈরি পোশাক খাত
  • ডিজিটাল আর্থিক সেবা খাত

এই খাতে বছরে প্রায় ৩৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ আছে। তবে জমির সমস্যা, আমদানি শুল্কায়ন, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসে সীমাবদ্ধতা প্রভৃতি এখনও বড় বাধা।

এলডিসি থেকে উত্তরণ ও নতুন চ্যালেঞ্জ

প্রতিবেদনটি সতর্ক করেছে যে, স্বল্পোন্নত দেশ (LDC) থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশি পণ্যে ইউরোপসহ বিভিন্ন বাজারে শুল্কহার বাড়বে। ফলে এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হলে:

  • পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি
  • আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ড
  • উন্নত প্রক্রিয়াকরণ ও উৎপাদন
  • টেকসই বিনিয়োগ
    অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

প্যানেল আলোচনায় কী বলা হলো?

আইএফসির প্রতিবেদনের পর আয়োজিত প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন:

  • প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী
  • বিডা (BIDA) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী
  • বিশ্বব্যাংকের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন

লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, “সমস্যাগুলো নতুন নয়, তবে সরকারের সদিচ্ছা আছে।”
আশিক চৌধুরী জানান, “কর্মসংস্থান বৃদ্ধি সরকারের অগ্রাধিকার। এই প্রতিবেদনকে ভিত্তি করে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।”

বেসরকারি উদ্যোক্তা শরিফ জহির বলেন, “সমস্যা সমাধান সম্ভব, শুধু দরকার একটি পরিকল্পিত পথনকশা।”

বিদ্যুৎ সংকট, অর্থায়নের সমস্যা, দুর্নীতি, অনানুষ্ঠানিক খাত ও উচ্চ করহার—এই পাঁচ বাধা কাটিয়ে উঠতে না পারলে বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগের দৌড়ে পিছিয়ে পড়বে। এলডিসি উত্তরণের পর জটিলতা আরও বাড়বে। তাই এখনই নীতিগত সংস্কার, সুশাসন এবং প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি জরুরি।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button