বাংলাদেশ

নিহত পাইলট তৌকিরের পরিবারকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হলো

Advertisement

প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত বাংলাদেশি পাইলট তৌকির ইসলাম সাগরের মৃত্যুর পর, তার বাবা-মাকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে রাজশাহী থেকে ঢাকায় আনা হয়েছে। পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

প্রশিক্ষণ বিমানের দুর্ঘটনা ও পাইলট তৌকিরের মৃত্যু

ঢাকার উত্তরায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর তরুণ পাইলট তৌকির ইসলাম সাগর। সোমবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনের পাশে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়।

এ ঘটনায় পাইলট তৌকির গুরুতর আহত হন এবং পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে পরিবার, সহকর্মী ও পুরো জাতি শোকাহত।

হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয় পরিবারের সদস্যদের

তৌকিরের মৃত্যুর পরপরই তার পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা নেয় বিমানবাহিনী। সোমবার বিকেলে রাজশাহীর হযরত শাহমখদুম (র.) বিমানবন্দর থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে নিহত পাইলটের বাবা-মাকে ঢাকায় আনা হয়।

এই ব্যবস্থা ছিল একদিকে সম্মানসূচক, অন্যদিকে জরুরি প্রয়োজনীয়তার অংশ। বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে দ্রুত এই পদক্ষেপ নেওয়ায় তৌকিরের পরিবার কিছুটা হলেও শান্তনা পেয়েছে।

কে ছিলেন তৌকির ইসলাম সাগর?

তৌকির ইসলাম সাগর ছিলেন একজন মেধাবী এবং স্বপ্নবাজ তরুণ। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল পাইলট হওয়ার, এবং সেই লক্ষ্যেই তিনি ক্যারিয়ার গড়েন।

তৌকির রাজশাহীর নিউ গভ. ল্যাবরেটরি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর পাবনা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন। ৩৪তম ব্যাচের ছাত্র হিসেবে তিনি ২০১৬ সালে এইচএসসি পাস করেন এবং এরপর বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যোগ দেন।

সম্প্রতি তিনি একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। পরিবারসূত্রে জানা যায়, বছরখানেক আগে তার বিয়ে হয়। তার স্ত্রী বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন লেকচারার।

পরিবারের অবস্থান ও পেশাগত পটভূমি

তৌকিরের বাবা তহুরুল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাসিন্দা হলেও, প্রায় ২৫ বছর ধরে রাজশাহীতে বসবাস করছেন। তিনি একজন ব্যবসায়ী, যিনি আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

তৌকির পরিবারে একমাত্র পুত্র সন্তান ছিলেন। তার হঠাৎ চলে যাওয়া যেন পরিবারকে একেবারে নিঃস্ব করে দিয়েছে। তার মা–বাবা, স্ত্রী ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনরা সকলেই শোকে পাথর হয়ে গেছেন।

দুর্ঘটনায় আরও প্রাণহানি ও আহতের সংখ্যা

এই বিমান দুর্ঘটনার ফলে শুধু তৌকিরই নন, আরও অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঘটনায় ১৯ জন নিহত হয়েছেন এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। আহতদের অনেকেই দগ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন।

দগ্ধদের মধ্যে বেশিরভাগই শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে অন্তত ৭০ জনকে দ্রুত উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানান, অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

সরকার ও সামরিক বাহিনীর প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পরপরই বিমানবাহিনী এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। উদ্ধার কার্যক্রমে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও র‍্যাবসহ একাধিক বাহিনী অংশ নেয়।

সরকার ইতোমধ্যেই একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে কাজ চলছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পাইলট তৌকিরের আত্মত্যাগকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানো হবে। তার জানাজা ও দাফনের আয়োজন হবে সামরিক মর্যাদায়।

শহিদি মর্যাদার দাবি উঠেছে

তৌকির ইসলাম সাগরের মৃত্যু শুধুই দুর্ঘটনা নয়—তাকে দেশের একজন তরুণ সেনাসদস্য হিসেবে দেখা হচ্ছে, যিনি প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালনকালে প্রাণ হারিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই তাঁর মৃত্যুকে শহিদি মৃত্যু হিসেবে দেখার দাবি তুলেছেন। তার আত্মত্যাগকে ‘জাতির গৌরব’ বলে অভিহিত করছেন অনেকেই।

দেশজুড়ে শোকের ছায়া

তৌকিরের মৃত্যুতে শুধু তার পরিবার নয়, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও পাবনা জেলাতেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার সহপাঠী ও প্রাক্তন ক্যাডেট বন্ধুরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্মৃতিচারণ করেছেন।

প্রতিবেশীরা জানান, তৌকির ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ও ভদ্র ছিল। পাইলট হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করতেন। আজ সেই স্বপ্ন পূর্ণ হলেও, জীবন থেমে গেল দুর্ঘটনার এক করুণ বাস্তবতায়।

সংক্ষিপ্ত 

বাংলাদেশে এমন দুর্ঘটনা বারবার আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে প্রশ্ন তোলে। বিশেষ করে প্রশিক্ষণ বিমানের মান, ফ্লাইট রুট নিরাপত্তা এবং আবাসিক এলাকায় ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়গুলো নতুন করে ভাবনার সৃষ্টি করেছে।

তৌকিরের মতো প্রতিভাবান তরুণদের জীবন যদি এভাবে নিঃশেষ হয়ে যায়, তবে তা কেবল পরিবারের ক্ষতিই নয়, জাতির জন্যও এক অপূরণীয় ক্ষতি।

প্রশ্ন রয়ে গেল—এই দুর্ঘটনা থেকে কী শিক্ষা নিচ্ছি আমরা? ভবিষ্যতে এমন প্রাণহানির ঘটনা রোধে কত

এম আর এম – ০৪৫০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button