পিএসজিকে কাঁপিয়ে দিল অ্যাস্টন ভিলা, চোখের জলে বিদায় মার্তিনেজদের

অ্যাস্টন ভিলার স্বপ্নভঙ্গ হলেও তারা পিএসজিকে দিতে পেরেছে কাঁপন ধরানো চ্যালেঞ্জ। নাটকীয়তা, আবেগ আর মন কাঁদানো বিদায়ের গল্প লিখে শেষ হয়েছে উনাই এমিরির শিষ্যদের চ্যাম্পিয়নস লিগ অভিযান।
দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৪ ব্যবধানে জিতে সেমিফাইনালে উঠেছে প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)। তবে দ্বিতীয় লেগে ৩-২ গোলের জয় পায় অ্যাস্টন ভিলা। এই জয় সত্ত্বেও একটি গোলের জন্য ইউরোপ সেরার লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে ইংলিশ ক্লাবটি।
লড়াইয়ের সূচনা: হারের মধ্যে থেকেও সাহসী প্রত্যাবর্তন
গত সপ্তাহে প্যারিসে প্রথম লেগে ৩-১ ব্যবধানে জয় পেয়েছিল পিএসজি, ফলে দ্বিতীয় লেগে অ্যাস্টন ভিলার সামনে ছিল পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ। তবে নিজের মাঠে শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি তাদের জন্য।
মাত্র ১১ মিনিটে আশরাফ হাকিমির এবং ২৭ মিনিটে নুনো মেন্দেজের গোলে ম্যাচে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় পিএসজি। দুই লেগ মিলিয়ে তখন স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৫-১—মনে হচ্ছিল সব শেষ।
এর মধ্যে হাকিমির করা গোলটির পেছনে ভুল ছিল গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজের। স্লাইড করে বল ঠেকাতে গিয়ে উল্টো সেটি হাকিমির পায়ে তুলে দেন তিনি, যেটিকে কাজে লাগিয়ে গোল করে বসেন এই মরোক্কান তারকা।
ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প: যখন বীর হয়ে উঠল ভিলা
৫-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়া অ্যাস্টন ভিলা তখনও হাল ছাড়েনি। ৩৪তম মিনিটে ইউরি টিয়েলেমানসের শট পিএসজি ডিফেন্ডার পাচোর গায়ে লেগে জালে ঢুকে যায়, যা তাদের মধ্যে সাহস ফিরিয়ে আনে।
দ্বিতীয়ার্ধে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে ভিলা। ৫৫ মিনিটে জন ম্যাকগিন বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক শটে দ্বিতীয় গোল এনে দেন। এরপর ৫৭ মিনিটে মার্কাস রাশফোর্ডের কাটব্যাক থেকে গোল করেন এজরি কনস্টা। মুহূর্তেই ম্যাচে ফিরে আসে উত্তেজনা, স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৩-২ (দুই লেগে ৫-৪)।
ভিলার একটি মাত্র গোল দরকার ছিল ম্যাচ টাই করে অতিরিক্ত সময়ে নেওয়ার জন্য। তখনই শুরু হয় পিএসজি ডিফেন্স বনাম ভিলা আক্রমণের নাটকীয় লড়াই।
দেয়াল হয়ে দাঁড়ালেন দোন্নারুম্মা
এই উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্তে পিএসজির জন্য ত্রাতা হয়ে দাঁড়ান গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা। তিনি একে একে টিয়েলেমানস এবং আসেনসিওর নিশ্চিত দুইটি গোল আটকে দিয়ে ভিলার স্বপ্নে জল ঢেলে দেন।
ম্যাচের যোগ করা সময়ে ইয়ান মাটসেন বল নিয়ে গোলের সামনে আসলেও তাঁর শট ব্লক করে দেন পাচো। তখনই ভিলা পার্ক জুড়ে নেমে আসে নিস্তব্ধতা।
কোচ উনাই এমিরি তো হতাশায় মাটিতেই বসে পড়েন। মার্তিনেজ মাঠে বসে চোখের পানি লুকানোর চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন।
আবার সেই এমিরি বনাম এনরিকে: ৮ বছরের পুরনো স্মৃতি
এই ম্যাচের আরেকটি বিশেষ দিক ছিল উনাই এমিরি এবং লুইস এনরিকের পুনর্মিলন। ২০১৭ সালে বার্সেলোনা-পিএসজির ঐতিহাসিক ম্যাচে এনরিকে ছিলেন বার্সার কোচ আর এমিরি ছিলেন পিএসজির দায়িত্বে।
তখন বার্সা প্রথম লেগে ৪-০ গোলে হেরে ফিরেও দ্বিতীয় লেগে ৬-১ গোলে জয় পেয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। সেই ম্যাচকে ঘিরে এখনও ইউরোপিয়ান ফুটবলে রোমাঞ্চ সৃষ্টি হয়।
এবার এমিরি চেষ্টা করেছিলেন সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে, তবে একটুর জন্য তা সম্ভব হয়নি।
আবেগ, হতাশা আর সম্মানের বিদায়
অ্যাস্টন ভিলার এই হার শুধুই একটি হারের গল্প নয়, এটি সাহস, মনোবল ও সম্মানের গল্পও। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে খুব কম দলই ৫-১ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে এমনভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে।
এমিলিয়ানো মার্তিনেজ, টিয়েলেমানস, রাশফোর্ড, ম্যাকগিন ও পুরো ভিলা দল শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে গেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে শেষ বাঁশি তাদের বিদায় জানিয়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে পিএসজি পরপর দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে পৌঁছেছে। তারা এখন মুখোমুখি হবে আর্সেনাল বনাম রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যে জয়ী দলের।
ম্যাচের পরিসংখ্যান এক নজরে:
- ম্যাচ: অ্যাস্টন ভিলা ৩:২ পিএসজি
- দুই লেগ মিলিয়ে: পিএসজি ৫:৪ অ্যাস্টন ভিলা
- অ্যাস্টন ভিলার গোলদাতারা: টিয়েলেমানস (৩৪’), ম্যাকগিন (৫৫’), কনস্টা (৫৭’)
- পিএসজির গোলদাতারা: হাকিমি (১১’), মেন্দেজ (২৭’)
- ম্যান অফ দ্য ম্যাচ (অনানুষ্ঠানিক): জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা (দুর্দান্ত সেভ)
অ্যাস্টন ভিলা হেরে গেলেও তারা এই ম্যাচে ফুটবলের সৌন্দর্য আর মানবিক আবেগের পরিপূর্ণ উদাহরণ হয়ে থাকল। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার মানসিকতা, দর্শকদের হৃদয় জিতে নেওয়া পারফরম্যান্স, আর দুঃখময় বিদায়—সব মিলিয়ে ম্যাচটি হয়ে থাকবে স্মরণীয়।
অন্যদিকে, পিএসজির জন্য এটি নতুন আশার শুরু। এখন দেখার বিষয়, তারা কি পারবে এই গতি ধরে রেখে প্রথমবারের মতো ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে?