ফুটবল

এমবাপ্পের একহালিতে রিয়ালের রুদ্ধশ্বাস জয়

Advertisement

চ্যাম্পিয়নস লিগের এক রোমাঞ্চকর রাতে রিয়ালের নাটকীয় জয়

চ্যাম্পিয়নস লিগ মানেই নাটক, উত্তেজনা, টানটান স্নায়ুচাপ—আর গোলের পর গোল। ইউরোপিয়ান ফুটবলের এই শ্রেষ্ঠ মঞ্চে আবার প্রমাণিত হলো, ফুটবল মুহূর্তেই আপনাকে অবাক করতে পারে। ঠিক এমনই এক রোমাঞ্চকর রাত দেখলো সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা, যখন সাত গোলের ম্যাচে অলিম্পিয়াকোসকে ৪–৩ ব্যবধানে হারিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ ফিরল জয়ের ধারায়।
এই ম্যাচের সব আলো কেড়ে নিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে—যিনি একাই করলেন চারটি গোল।

এ যেন এমবাপ্পের একক নৈপুণ্যের প্রদর্শনী। শুরুতে পিছিয়ে পড়েও যেভাবে রিয়াল মাদ্রিদ ফিরে এসেছে, তা রীতিমতো দারুণ এক নাটকের মতো। ম্যাচজুড়ে আক্রমণ-প্রতিআক্রমণে দর্শকরা শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ছিলেন।

ম্যাচ শুরুতেই বিপাকে রিয়াল

বার্নাব্যুতে খেলতে নামার মাত্র আট মিনিটের মধ্যে গোল হজম করে বসে রিয়াল মাদ্রিদ। অলিম্পিয়াকোসের পক্ষে গোল করেন চিকুইনহো।
রিয়াল মাদ্রিদের ডিফেন্স কিছুটা ঢিলেঢালা শুরু করায় সেটির সুযোগ নেন গ্রিক ক্লাবটির খেলোয়াড়রা।

অনেকেই ভেবেছিলেন, রিয়ালের হতাশা হয়তো আরও বাড়বে। কিন্তু মাঠে তখনও নিজেদের ছন্দ খুঁজছিলেন এমবাপ্পে, ভিনিসিউস জুনিয়র, বেলিংহ্যামরা।

এমবাপ্পের আগমন—দুই মিনিটে দুই গোল

৮ মিনিটে গোল হজম করার পর মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে পাল্টা আঘাত হানেন এমবাপ্পে।
প্রথম গোল: চ্যাম্পিয়নস লিগে স্বাভাবিক স্টাইলেই গতি, ড্রিবল আর নিখুঁত শট—সব মিলিয়ে অসাধারণ এক ফিনিশ।
দ্বিতীয় গোল: দুই মিনিটের ব্যবধানে মাথা তুলে হেডে করলেন আরেকটি গোল। পেনাল্টি বক্সে দারুণ ক্রসে সাড়া দিয়ে হেডে বল জালে জড়াতে ভুল করেননি তিনি।

এই দুই গোলেই রিয়াল স্কোরলাইন পাল্টে ফেলে ২–১ করে নেয়।
দর্শকরা উপলব্ধি করলেন—আজ এমবাপ্পে অন্য মুডে আছেন।

বিরতিতে ৩–১ লিড—রিয়ালের শক্তির নিদর্শন

এরপর আবারও রিয়ালের দাপট। প্রথমার্ধে আরও একটি গোল করে রিয়াল মাদ্রিদ ৩–১ ব্যবধানে এগিয়ে বিরতিতে যায়।
অলিম্পিয়াকোসের রক্ষণভাগ ছিল অসহায়, আর রিয়ালের গতি থামছিল না।
দলের পাসিং, আক্রমণাত্মক খেলা এবং বক্সে ঢোকা–সবকিছুই ছিল দুর্দান্ত।

দ্বিতীয়ার্ধে নতুন নাটক—তারোমির গোল

বিরতির পর ৫২ মিনিটে মেহদি তারেমি অলিম্পিয়াকোসের হয়ে ব্যবধান কমান।
৩–২ গোলে স্কোরলাইন দাঁড়ালে ম্যাচ নতুন করে জমে ওঠে।
রিয়াল মাদ্রিদের রক্ষণভাগ আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।

কিন্তু রিয়ালের সামনে ছিলেন এমবাপ্পে—যিনি আজ রীতিমতো আগুন ঝরাচ্ছিলেন।

এমবাপ্পের চতুর্থ গোল—মহাকাব্যিক এক আক্রমণের জন্ম

৬০ মিনিটে এদিনের সেরা মুহূর্তটি তৈরি হয়। মাঝমাঠ থেকে অসাধারণ থ্রু পাস পান ভিনিসিউস। তিনি ডানদিক দিয়ে গতি বাড়িয়ে বক্সে ঢুকে পাস দেন এমবাপ্পেকে।
ফুরফুরে এ ফরাসি তারকার সামনে তখন শুধু গোলরক্ষক। শট নিতে এক মুহূর্ত দেরি করলেন না।
বল চলে যায় জালে।

এমবাপ্পের ব্যক্তিগত চতুর্থ গোল।
রিয়ালের হয়ে একটি ম্যাচে চার গোল করার কীর্তি খুব কম খেলোয়াড়ের ঝুলিতে আছে।

শেষ মুহূর্তে অলিম্পিয়াকোসের গোল—উত্তেজনার চূড়ান্ত মুহূর্ত

কাবির গোল করে যখন ব্যবধান ৪–৩ করেন, তখন ম্যাচে আবারও নতুন উত্তেজনা তৈরি হয়।
শেষ ১০-১২ মিনিটে রিয়াল মাদ্রিদ প্রবল চাপের মুখে পড়ে।
অলিম্পিয়াকোসের খেলোয়াড়রা মরিয়া চেষ্টা চালায় সমতায় ফিরতে।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্নায়ুচাপ সামলে জয়টাই তুলে রাখে রিয়াল।
এই জয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে নতুন করে প্রতিযোগিতায় শক্ত অবস্থান গড়ে নেয় দলটি।

এমবাপ্পের রেকর্ড—চ্যাম্পিয়নস লিগের নতুন রাজা

ম্যাচের আগে এমবাপ্পের গোল ছিল ৫টি।
শীর্ষ গোলদাতাদের তালিকায় ছিলেন চার নম্বরে।
কিন্তু আজকের ৪ গোল করে তিনি উঠে এলেন তালিকার শীর্ষে।

চলতি মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এমবাপ্পের গোল: ২২টি!

রিয়ালে যোগ দেওয়ার পর থেকেই এমবাপ্পে দেখিয়েছেন কেন তাকে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন বলা হয়।
তার গতি, ড্রিবলিং, অবস্থান নির্বাচন এবং ফিনিশিং—সবকিছুই রিয়ালের আক্রমণভাগে নতুন প্রাণ নিয়ে এসেছে।

রিয়াল মাদ্রিদের অবস্থা—পয়েন্ট টেবিলে পঞ্চম

এই জয়ের ফলে রিয়াল মাদ্রিদ গ্রুপ টেবিলে উঠে এসেছে পঞ্চম স্থানে।
শীর্ষে আছে আর্সেনাল, দ্বিতীয় স্থানে পিএসজি।
এই ম্যাচের ফলাফলে নক-আউট পর্বে ওঠার সম্ভাবনা আরও জোরালো হলো রিয়ালের।

চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়ালকে কখনোই হালকা ভাবে দেখা যায় না—আজকের ম্যাচ আবারও সেই কথা মনে করিয়ে দিল।

এমবাপ্পে-ভিনিসিউস-বেলিংহ্যামের ত্রয়ী—রিয়ালের ভবিষ্যতের আলো

এমবাপ্পে, ভিনিসিউস জুনিয়র ও জুড বেলিংহ্যাম—ইউরোপিয় ফুটবলের সবচেয়ে ভয়ংকর ত্রয়ীগুলোর একটি এখন রিয়াল মাদ্রিদে।
এই তিনজন একসঙ্গে মাঠে থাকলে রিয়ালের যেকোনো ম্যাচেই গোল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৯০% এর বেশি।

আজকের ম্যাচেও তাদের সমন্বয়, পাসিং ও দৃষ্টিনন্দন খেলা দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।

পুরো ম্যাচ–সংক্ষেপ

  • রিয়াল মাদ্রিদ ৪ – ৩ অলিম্পিয়াকোস
  • গোলদাতা (রিয়াল): এমবাপ্পে (৪)
  • গোলদাতা (অলিম্পিয়াকোস): চিকুইনহো, তারেমি, কাবি
  • ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়: কিলিয়ান এমবাপ্পে

এমবাপ্পে কেন আজ অন্য গ্রহের খেলোয়াড় মনে হলো

ক্রীড়া বিশ্লেষকদের মতে—

  • এমবাপ্পের গতি
  • সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা
  • বক্সে নিখুঁত অবস্থান
  • চাপের মধ্যে স্থিরতা
  • এবং খেলায় নেতৃত্ব নেওয়ার মানসিকতা

—সব মিলিয়ে তাকে আলাদা করে তোলে।

রিয়ালের হয়ে এত দ্রুত আত্মবিশ্বাসী পারফরম্যান্স দিয়ে তিনি প্রমাণ করলেন—তার উপর ভরসা করা সময়ের দাবি।

চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়ালের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

রিয়াল মাদ্রিদ ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দল—এই টুর্নামেন্টে ১৪ বারের শিরোপাজয়ী।
এবার কি ১৫তম শিরোপার পথে এগোচ্ছে লস ব্লাঙ্কোস?
আজকের ম্যাচ তা-ই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

দল যদি আক্রমণভাগের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে, আর ডিফেন্স যদি আরও সংগঠিত হয়—তাহলে রিয়ালকে থামানো খুব কঠিন হবে।

এমবাপ্পের দুর্দান্ত চার গোল, রোমাঞ্চকর সাত গোলের ম্যাচ, আর শেষ মিনিট পর্যন্ত উত্তেজনা—এই ম্যাচ ফুটবলের সৌন্দর্যকেই আরও উজ্জ্বল করেছে।
রিয়াল মাদ্রিদের জন্য এটি শুধু একটি জয় নয়—এটি আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার মুহূর্ত, সামনে আরও বড় লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।

MAH – 14012 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button