ফুটবল

জোড়া পেনাল্টি পাওয়ার পরও জিততে পারল না ব্রাজিল

Advertisement

ব্রাজিল ফুটবল মানেই আলাদা উত্তেজনা। পাঁচবারের বিশ্বকাপজয়ী দলটির দিকে বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা বরাবরই তাকিয়ে থাকে। কার্লো আনচেলোত্তির মতো কিংবদন্তি কোচ দায়িত্ব নেওয়ার পর আশা আরও বেড়ে গিয়েছিল। ভাবা হয়েছিল—হয়তো নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে, হয়তো আবারও সেলেসাওকে দেখা যাবে সেই জাদুকরী ছন্দে, যেটি বিশ্ব ফুটবলে ব্রাজিলকে কিংবদন্তিতে পরিণত করেছে।

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে—জয়, হার, ড্র—এই তিন ফলাফলের রোলার কোস্টারে উঠেই যেন আটকে আছে নতুন ব্রাজিল। ধারাবাহিকতা এখনো সেই কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছাতে পারেনি।

জাপানের কাছে হার দিয়ে আনচেলোত্তির যাত্রা শুরু হয়েছিল হতাশায়। এরপর সেনেগালের বিপক্ষে দারুণ জয়ে সমর্থকদের মাঝে আবার আশা জাগে। কিন্তু তিউনিসিয়ার বিপক্ষে সেই ধারাবাহিকতার ছাপ অনুপস্থিত ছিল। দুইটি পেনাল্টি পেয়েও দলটি জয় তুলে আনতে পারল না—এ যেন ব্রাজিলের আত্মবিশ্বাসী ফুটবলের সঙ্গে বেমানান এক বাস্তবতা।

গতরাতে ফ্রান্সের লিলেতে অনুষ্ঠিত প্রীতি ম্যাচে ব্রাজিল ও তিউনিসিয়া ১-১ গোলে ড্র করে মাঠ ছাড়ে। যদিও পরিসংখ্যান, বল দখল কিংবা আক্রমণ—সব কিছুতেই ব্রাজিল ছিল এগিয়ে; কিন্তু জয়ের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়তে হলো দক্ষতার অভাবে ও সিদ্ধান্তহীন আক্রমণের কারণে।

আক্রমণে আধিপত্য, তবে ধারহীন সেলেসাও

ম্যাচের শুরু থেকেই ব্রাজিল বল দখলে ও আক্রমণে এগিয়ে ছিল। ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রদ্রিগো, এস্তেভাও—তিনজনই তিউনিসিয়ার ডিফেন্সকে চাপে রেখেছিলেন।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ব্রাজিল পুরো ম্যাচে ৭৪ শতাংশ বল দখলে রাখে, ২২ বার শট নেয়—কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৩টি ছিল টার্গেটে।

এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়, তিউনিসিয়ার ডিফেন্স ভাঙতে ব্রাজিল বেশ বেগ পায়। দ্রুত পাস আদান-প্রদান, থ্রু-বল, উইং থেকে কাট-ব্যাক—সব কিছুতেই ছিল ছন্দহীনতা। অনেকটা দেখেশুনে খেলার চেষ্টা করলেও আক্রমণের ফিনিশিং ছিল একেবারেই কমজোরি।

২৩ মিনিটে অঘটন: তিউনিসিয়ার দারুণ প্রতি-আক্রমণে গোল

যেখানে ব্রাজিল আক্রমণে একের পর এক সুযোগ নষ্ট করছিল, সেখানে তিউনিসিয়া অপেক্ষায় ছিল পাল্টা আক্রমণের।
২৩তম মিনিটে সেই সুযোগটাই কাজে লাগায় তারা।

দ্রুতগতির এক কাউন্টার অ্যাটাক থেকে বল পেয়ে দারুণ শটে গোল করেন হাজেম মাসতৌরি। ব্রাজিলের ডিফেন্স তখন কিছুটা অগোছালো ছিল, আর সেই দুর্বলতার সুযোগই কাজে লাগায় তিউনিসিয়া।

এই গোলের পরই ম্যাচের গতি বদলে যায়। ব্রাজিল আক্রমণ বাড়ায়, কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে পারছিল না।

এস্তেভাওয়ের গোল: ভবিষ্যৎ তারকার উজ্জ্বল উপস্থিতি

৪৪ মিনিটে তিউনিসিয়ার ডি-বক্সে ডিফেন্ডার ব্রুনের হাতে বল লাগে। ভিএআর পর্যালোচনায় রেফারি পেনাল্টি দেন ব্রাজিলকে।

দায়িত্ব নেন তরুণ তারকা এস্তেভাও।

চাপের মুহূর্তে দারুণ দক্ষতায় বল জালে পাঠান তিনি। ব্রাজিলের জার্সিতে এ ছিল তার ৪ ম্যাচে চতুর্থ গোল।
চেলসির এই নবীন ফরোয়ার্ড ইতোমধ্যেই বিশ্ব ফুটবলে নতুন প্রতিভা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে শুরু করেছেন।

এস্তেভাওয়ের এই গোলের পর ব্রাজিল কিছুটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলেও দ্বিতীয়ার্ধে আবারও দেখা যায় একই সমস্যা—ফিনিশিংয়ের অভাব।

ম্যাচের মোড় ঘোরানোর সুযোগ—কিন্তু ব্যর্থ পাকেতা

৭৬ মিনিটে ভিতো হক তিউনিসিয়ার ডি-বক্সে ফাউলের শিকার হলে আবার পেনাল্টি পায় ব্রাজিল।
সমর্থকেরা আশা করেছিলেন—এবার লিড আসবে।

কিন্তু লুকাস পাকেতা যে শটে মারেন, তা পোস্টের ওপর দিয়ে উড়ে যায়।

এই মুহূর্তই ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট।
দ্বিতীয়বার পেনাল্টি পেয়েও কাজে লাগাতে না পারা—টপ লেভেল দলের জন্য তা অবশ্যই হতাশাজনক।

আনচেলোত্তির কপালে চিন্তার ভাঁজ

ম্যাচ শেষে ফুটবলবিশেষজ্ঞরা বলছেন—
ব্রাজিল আক্রমণাত্মক ফুটবল খেললেও ফলাফল তৈরিতে ব্যর্থ হচ্ছে।

সমস্যার জায়গাগুলো:

  • আক্রমণের সমন্বয়হীনতা
  • ডি-বক্সে সিদ্ধান্তহীনতা
  • রক্ষণভাগে অভিজ্ঞতার অভাব
  • মধ্যমাঠে সৃজনশীলতার ঘাটতি
  • সুযোগ কাজে লাগানোর সীমাবদ্ধতা

মাঝপথে ডিফেন্ডার এদের মিলিতাওয়ের চোট-সংক্রান্ত সমস্যা আনচেলোত্তির পরিকল্পনায় আরও ঝামেলা তৈরি করেছে।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন—
‘ব্রাজিলের খেলায় সম্ভাবনা আছে, কিন্তু ধারাবাহিকতা নেই।’

ব্রাজিলের পরবর্তী ম্যাচগুলোতে চাপ আরও বাড়বে

বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব সামনে রেখে ব্রাজিলকে এখন দল হিসেবে আরও শক্ত হতে হবে।
বাকি ম্যাচগুলোতে তারা মুখোমুখি হবে শক্ত প্রতিপক্ষদের—আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া, উরুগুয়ে।
তাই আক্রমণে সুযোগ নষ্ট করা, রক্ষণে ভুল করা—এসব আর চলবে না।

সমর্থকদের প্রত্যাশা—আনচেলোত্তির অধীনে ব্রাজিল আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবে।

ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান (স্ট্যাটস)

পরিসংখ্যানব্রাজিলতিউনিসিয়া
বল দখল৭৪%২৬%
মোট শট২২
অন টার্গেট শট
কর্নার
পেনাল্টি
গোল

এই পরিসংখ্যানই বলে—ব্রাজিল খেলেছে, কিন্তু গোল করতে পারেনি।

ফুটবলবিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

বহু বিশেষজ্ঞই মনে করছেন—

  • ব্রাজিল এখন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে
  • তরুণরা ভালো খেলছে, যেমন এস্তেভাও
  • তবে সিনিয়র খেলোয়াড়দের দায়িত্ব আরও বেশি নিতে হবে

কেউ কেউ বলছেন,
“ব্রাজিলের দলে যে প্রতিভা আছে, তা কাজে লাগাতে হবে। নইলে বড় টুর্নামেন্টে সমস্যা হবে।”

সেলেসাও সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া

বিশ্বজুড়ে ব্রাজিলের সমর্থকেরা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
কেউ হতাশ, কেউ আবার ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিচ্ছেন।

একজন লিখেছেন—
“আনচেলোত্তি এসে পরিবর্তন এনেছেন, কিন্তু সময় লাগবে।”

অন্য আরেকজনের মন্তব্য—
“ভালো খেলেও জিততে না পারা এখন ব্রাজিলের অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে।”

সার্বিকভাবে বলা যায়—
ব্রাজিল সুযোগ নষ্ট করেছে, আর তিউনিসিয়া প্রাপ্য সম্মান পেয়েছে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে।

জোড়া পেনাল্টি পেলেও জয় ধরতে না পারা ব্রাজিলের সমস্যার গভীরতাই যেন তুলে ধরে।
সমর্থকদের আশা—আসন্ন ম্যাচগুলোতে আনচেলোত্তির দল আরও শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়াবে এবং ধারাবাহিকতা ফিরে পাবে।

MAH – 13872 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button