ফুটবল

ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পাচ্ছেন বলে দাবি সুমাইয়ার

বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের ফরোয়ার্ড মাতসুশিমা সুমাইয়া অভিযোগ করেছেন যে, তিনি ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পাচ্ছেন। সম্প্রতি পিটার বাটলারকে আবারও বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার প্রতিবাদে ১৮ জন ফুটবলার বিদ্রোহের ডাক দিয়েছেন। তারা বাফুফেকে জানিয়ে দিয়েছেন, বাটলার কোচ থাকলে তারা অনুশীলন ক্যাম্পে অংশ নেবেন না এবং প্রয়োজনে গণ–অবসরে যাবেন।

বিদ্রোহী ফুটবলারদের চিঠি

বিদ্রোহী ফুটবলাররা একটি চিঠিতে বাটলারের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ তুলে ধরেছেন। এই চিঠিটি ইংরেজিতে লেখা ছিল। বাফুফের বিশেষ কমিটি বিদ্রোহী ফুটবলারদের ডেকে জিজ্ঞাসা করেছিল, চিঠিটি কে লিখেছে? সবাই মাতসুশিমা সুমাইয়ার নাম বলেন। সুমাইয়াও কমিটির সামনে স্বীকার করেছেন, ওই চিঠি তিনিই লিখেছেন।

সুমাইয়ার জীবনযাত্রা

এই ঘটনার পর সুমাইয়ার জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছে। ২৩ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানিয়েছেন, গত কয়েক দিনে তিনি অসংখ্যবার ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পেয়েছেন। এতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

ফেসবুক স্ট্যাটাসের শুরুতে সুমাইয়া লিখেছেন, “আমার নাম মাতসুশিমা সুমাইয়া। আমি বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের একজন খেলোয়াড়। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থী হিসেবে আন্তস্কুল প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে মালদ্বীপে লিগ খেলা এবং বাংলাদেশের হয়ে ২০২৪ সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা পর্যন্ত যাত্রাটা আমার কাছে অম্লমধুর ছিল।”

ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা

সুমাইয়া আরও লিখেছেন, “যখন থেকে আমি ফুটবলকে বেছে নিয়েছি, আমার স্বপ্ন ছিল তরুণ শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করা। আমি দেখাতে চেয়েছিলাম, খেলার প্রতি আবেগ এবং নিবেদন সব প্রতিবন্ধকতা ভেঙে দিতে পারে। এখন এটা ভেবে আমার অনুতাপ হচ্ছে—আমার শিক্ষা, আমার পরিবার, আমার ঈদ, সবকিছু এমন একটি দেশের সেবা করার জন্য, যে দেশ আমাদের লড়াইয়ের প্রশংসা করতে জানে না।”

হুমকির বিষয়

সুমাইয়া তার স্ট্যাটাসে হুমকি পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “ফুটবল খেলার জন্য আমি আমার মা-বাবার সঙ্গে লড়াই করেছি, শুধু এই বিশ্বাসে যে আমার দেশ আমার পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সত্যিকার অর্থে কেউই একজন ক্রীড়াবিদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা করে না। আমরা যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছি, সেই পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার এবং সতীর্থদের জন্য ইংরেজিতে একটি চিঠি লেখার ন্যূনতম সামর্থ্য আমার আছে। কয়েক দিন ধরে আমি অসংখ্যবার মৃত্যু ও ধর্ষণের হুমকি পেয়েছি। হুমকিতে ব্যবহৃত শব্দগুলো আমাকে ভেঙে দিয়েছে, যা আমি কল্পনাও করিনি।”

মানসিক অবস্থা

সুমাইয়া তার স্ট্যাটাসের শেষে লিখেছেন, “আমি জানি না, এই মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে উঠতে আমার কত সময় লাগবে। তবে এটা বলতে চাই, শুধু তাদের স্বপ্ন অনুসরণ করার জন্য আর কাউকে যেন এর মধ্য দিয়ে যেতে না হয়।”

সুমাইয়ার এই অভিযোগ ক্রীড়াঙ্গনে একটি গুরুতর সমস্যা তুলে ধরছে। একজন ক্রীড়াবিদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আশা করা হচ্ছে, সুমাইয়ার এই পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে এবং তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button