ফুটবল

থাইল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াইয়ে প্রথমার্ধে পিছিয়ে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল

Advertisement

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল আজ ব্যাংককের অ্যানিভার্সারি স্টেডিয়ামে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচে মাঠে নামে। র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা স্বাগতিকদের বিপক্ষে লড়াইয়ের শুরু থেকেই প্রতিপক্ষের আক্রমণাত্মক ফুটবলে কোচ পিটার বাটলারের শিষ্যারা পড়ে যায় চাপে।
প্রথমার্ধের খেলা শেষে স্কোরলাইন দাঁড়ায় থাইল্যান্ড ৩ – ১ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র গোলটি করেছেন তরুণ ফুটবলার শামসুন্নাহার জুনিয়র

শুরু থেকেই থাইদের আক্রমণ

ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল শুরু করে থাইল্যান্ড নারী দল। গতি, পাসিং আর পজিশনে আধিপত্য দেখাতে থাকে তারা।
বাংলাদেশের ডিফেন্সের মাঝে বারবার ফাঁক খুঁজে নেয় স্বাগতিকরা। আর ১২ মিনিটেই সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে থাইল্যান্ডের অধিনায়ক সাওয়ালাক পেংগাম করেন দলের প্রথম গোল।

এর আগে ৫ মিনিটেই প্রথম বিপজ্জনক আক্রমণ ঠেকিয়ে দেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক রুপনা চাকমা। পোস্ট ছেড়ে সাহসী ক্লিয়ারেন্সে দলকে রক্ষা করেন তিনি।

কোচ পিটার বাটলারের সাজানো হাই-লাইন ডিফেন্স শুরু থেকেই ভঙ্গুর হয়ে পড়ে থাইদের দ্রুতগতির আক্রমণের সামনে।

ডিফেন্সে বিপর্যয়, বারবার ফাঁক

বাংলাদেশের রক্ষণভাগে সমন্বয়ের অভাব স্পষ্ট ছিল। মাঝমাঠ থেকে পাস কেটে নেওয়া বা লম্বা শট ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন ডিফেন্ডাররা।
২৩ মিনিটে সেই দুর্বলতারই মাশুল দেয় দল। থাইল্যান্ডের খেলোয়াড় জিরাপর্ন মংকোলডি মাঝমাঠ থেকে এক দুর্দান্ত লব শটে বল পাঠান বাংলাদেশের জালে — রুপনা চাকমার মাথার ওপর দিয়ে বল চলে যায় গোলপোস্টে। স্কোরলাইন তখন ২–০।

বাংলাদেশ কিছুটা regroup করে আক্রমণে ফেরার চেষ্টা করে। ১৬ মিনিটে বাঁ প্রান্ত ধরে ঋতুপর্ণা চাকমার একক দৌড় কিছুটা উত্তেজনা তৈরি করেছিল, কিন্তু থাই ডিফেন্ডারদের কড়া নজরদারিতে বল কেড়ে নেওয়া হয়।

২০ মিনিটে ফ্রি-কিক পেলেও সেটি কাজে লাগাতে পারেননি বাংলাদেশের মেয়েরা।

শামসুন্নাহারের হেডে বাংলাদেশের প্রত্যাবর্তন

প্রথমার্ধের ২৯ মিনিটে অবশেষে গোল পায় বাংলাদেশ। কর্নার কিক থেকে মারিয়া মান্দার নিখুঁত ক্রসে হেড ছুঁইয়ে দেন শামসুন্নাহার জুনিয়র — বল জালে জড়ায়, আর বাংলাদেশ ফিরে আসে খেলায়।
গোলটি আসার পর কিছুটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় দল, তবে সেই আনন্দ স্থায়ী হয়নি বেশিক্ষণ।

মাত্র ৫ মিনিট পর, ৩৪ মিনিটে আবারও বাংলাদেশের রক্ষণভাগ ভেদ করে তৃতীয় গোল তুলে নেয় থাইল্যান্ড। বাংলাদেশের দুই ডিফেন্ডার শামসুন্নাহার সিনিয়রআফঈদা খন্দকারকে পাশ কাটিয়ে গোল করেন ম্যাডিসন ক্যাস্টিন
প্রথমার্ধ শেষ হয় থাইল্যান্ড ৩–১ বাংলাদেশ

প্রথম ম্যাচের হতাশা, দ্বিতীয় ম্যাচেও চাপে বাটলারের দল

এর আগে প্রথম প্রীতি ম্যাচে ৫১ ধাপ এগিয়ে থাকা থাইল্যান্ডের কাছে ৩–০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ।
ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে থাইল্যান্ডের অবস্থান ৫৩তম, আর বাংলাদেশের ১০৪তম — ব্যবধানই যেন মাঠের পারফরম্যান্সে স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

কোচ পিটার বাটলার ম্যাচের আগে বলেছিলেন,

“আমরা থাইল্যান্ডের মতো দলের সঙ্গে খেলেই নিজেদের উন্নতি করতে চাই। এই ম্যাচগুলো শেখার সুযোগ।”

কিন্তু বাস্তব চিত্রে দেখা গেছে, দলটি এখনো রক্ষণে এবং ট্রানজিশনে অনেক পিছিয়ে। বিশেষ করে বল কন্ট্রোল ও দ্রুত পাস বিনিময়ে থাইদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

রুপনা চাকমার নায়কোচিত সেভ

যদিও স্কোরলাইনে পার্থক্য বড়, তবুও বাংলাদেশের গোলরক্ষক রুপনা চাকমা ছিলেন ম্যাচের অন্যতম উজ্জ্বল মুখ।
প্রথমার্ধেই অন্তত তিনটি নিশ্চিত গোল ঠেকিয়েছেন তিনি। ২৪ ও ৩২ মিনিটে তাঁর দুইটি একক সেভ বাংলাদেশকে আরও বড় ব্যবধানে পিছিয়ে পড়া থেকে রক্ষা করেছে।
তাঁর পারফরম্যান্স নিয়েই ম্যাচ শেষে সামাজিক মাধ্যমে প্রশংসা ছড়িয়ে পড়ে।

দ্বিতীয়ার্ধে লড়াইয়ের প্রত্যাশা

প্রথমার্ধে ৩–১ ব্যবধানের পর দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ কোচ কিছু পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সম্ভাবনা আছে তরুণ ফরোয়ার্ড তহুরা খাতুনসানজিদা আখতারকে মাঠে নামানোর, যাতে আক্রমণে গতি বাড়ে।
দলের সহ-অধিনায়ক মারিয়া মান্দা বলেন,

“আমরা পেছনে পড়ে গেলেও হাল ছাড়ব না। দ্বিতীয়ার্ধে চেষ্টা করব স্কোর কমিয়ে আনার।”

বাংলাদেশ দল যদিও ফিটনেস ও অভিজ্ঞতায় পিছিয়ে, তবে তরুণ খেলোয়াড়দের মনোবলই তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ম্যাচ বিশ্লেষণ (প্রথমার্ধ)

পরিসংখ্যানবাংলাদেশথাইল্যান্ড
গোল
বল দখল৩৮%৬২%
শট অন টার্গেট
কর্নার
ফাউল

এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায়, মাঠে সম্পূর্ণ আধিপত্য ছিল থাইল্যান্ডের।
তবে বাংলাদেশের একমাত্র গোলটি ছিল পরিকল্পিত ও মানসম্মত, যা ভবিষ্যতে উন্নতির সম্ভাবনা দেখায়।

পিটার বাটলারের পরিকল্পনা ও দলের পরিবর্তন

পিটার বাটলার বাংলাদেশের নারী দলকে নিয়ে কাজ করছেন ২০২৪ সালের শেষ দিক থেকে।
তাঁর মূল লক্ষ্য — দলের রক্ষণশক্তি ও দ্রুত কাউন্টার আক্রমণ বাড়ানো
তবে থাইল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের রক্ষণে এখনো সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।
তাদের মতে, “রক্ষণ থেকে আক্রমণে যাওয়ার ট্রানজিশনটাই সবচেয়ে দুর্বল জায়গা।”
অন্যদিকে, মাঝমাঠে ফাহিমা খাতুন ও মারিয়া মান্দার মাঝে ভালো বোঝাপড়া গড়ে উঠছে, যা ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক।

প্রীতি ম্যাচের গুরুত্ব

এই দুই প্রীতি ম্যাচ মূলত ২০২৬ সালের এএফসি নারী এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বকে সামনে রেখে প্রস্তুতি হিসেবে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ নারী দল দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেলায় ম্যাচ ফিটনেসে কিছুটা পিছিয়ে ছিল।
তাই থাইল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে ম্যাচগুলো শেখার বড় সুযোগ বলে মনে করছেন কোচ ও খেলোয়াড়রা।

বাংলাদেশের নারী ফুটবলের সাম্প্রতিক অগ্রগতি

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল গত কয়েক বছরে দক্ষিণ এশিয়ায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে।
২০২২ সালের সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ–এর শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়েছিল মারিয়া মান্দারা।
সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্যই এখন তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে এশিয়ান পর্যায়ের বড় টুর্নামেন্টের জন্য।

যদিও প্রতিপক্ষ থাইল্যান্ড অনেক বেশি অভিজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিণত দল, তবুও বাংলাদেশের মেয়েদের প্রচেষ্টা ফুটবলপ্রেমীদের অনুপ্রাণিত করছে।

সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের সমর্থকরা সামাজিক মাধ্যমে দলকে সমর্থন জানাচ্ছেন।
অনেকে লিখেছেন —

“ফল নয়, চেষ্টাটাই বড়।”
“বাংলাদেশের মেয়েরা আজও দেখিয়েছে তারা হার মানে না।”

এই ভালোবাসা ও সমর্থনই ভবিষ্যতে দলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে মনে করেন কোচ বাটলার।উপসংহার

থাইল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচের প্রথমার্ধে ৩–১ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকলেও, বাংলাদেশের মেয়েরা লড়াইয়ের মনোভাব দেখিয়েছে।
তরুণদের উত্সাহ, রুপনার দৃঢ়তা ও শামসুন্নাহারের গোল — এই তিনটি দিকই ভবিষ্যতের আশার প্রতীক।

ফলাফল যাই হোক, এই ম্যাচগুলো বাংলাদেশের নারী ফুটবলের উন্নতির যাত্রাপথে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে।

MAH – 13506 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button