আঞ্চলিক

সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, গ্রেপ্তারের পর কারাগারে তিনজন

Advertisement

ঘটনা টির সম্পর্ক নির্দেশ করে, রাজধানীর উত্তরায় সমন্বয়ক পরিচয় অপব্যবহার করে চাঁদাবাজির অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযোগ অনুযায়ী তারা মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার কথা বলে ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে টাকা দাবি ও আদায় করে। পরে তাদের আদালতে তোলা হলে আদালত তিনজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

ঘটনা

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর রোডে গতকালের ঘটনার ভিত্তিতে দেলোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তির পরিবারকে টার্গেট করা হয়। অভিযুক্তরা নিজেদের পরিচয় সমন্বয়ক বলে পরিচয় দিয়ে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেখায় এবং মোট এক কোটি টাকা দাবি করে। প্রথম ধাপ হিসেবে তারা সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা আদায় করে এবং বাকি টাকার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে চলে আসে। পরে পরিবারটি স্থানীয় থানা করে এবং মামলায় অভিযান শুরু করলে গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালিত হয়।

গ্রেপ্তার ও উদ্ধৃত মালামাল

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নোমান রেজা নামক একজনকে প্রথমে বিমানবন্দর এলাকা থেকে আটক করা হয়। তার সামনে দিয়ে প্রাপ্ত তথ্য ও অনুসন্ধানের ভিত্তিতে উত্তরার জসীম উদ্দিন এলাকা থেকে তানজিল হোসেন ও ফারিয়া আক্তার তমা নামে দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে মোট ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, জব্দ হওয়া অর্থের সঙ্গে অভিযুক্তদের সরাসরি সংযোগ মিলেছে এবং ওই অর্থ ভিকটিমদের কাছ থেকে আদায় করা প্রথম কিস্তির অংশ বলে প্রাথমিক তদন্তে পেয়েছে তদন্তকারীরা।

অভিযোগের প্রেক্ষাপট ও মামলার বিবরণ

ভুক্তভোগী দেলোয়ার হোসেনের পরিবারের অভিযোগ, প্রথমে তাদের উপর চাপ দিয়ে বারবার ফোন করে এবং হুমকি-ধমকি দেখানো হয়। পরে অভিযোগকারীরা বাড়িতে গিয়ে বৈঠকের মাধ্যমে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নাম করে টাকা নিতে চাইলে কথাকাটাকাটির পর পরিবারটি থানায় অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে উত্তরা পশ্চিম থানা থেকে মামলা নম্বর দায়ের করা হয় এবং তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে এসআই আবদুল মালেক খানের নেতৃত্বে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। শুক্রবার আদালতে প্রাথমিক শুনানিতে পুলিশ তদন্তের স্বার্থে তাদের কারাগারে পাঠানোর আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।

পুলিশি বক্তব্য ও তদন্তের ধারা

উত্তরা পশ্চিম থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবদুল মালেক খান সাংবাদিকদের জানান, অভিযুক্তরা একটি সংগঠিত কৌশল ব্যবহার করে মানুষদের ভয় করাতো এবং সমন্বয়ক পরিচয়ে নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে চাঁদা আদায় করত। তিনি আরও বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নোমান রেজা ও دیگرরা তাদের অপরায়ণতাসহ বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে। আমরা ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের শনাক্ত করে তাদের ধরতে অভিযান জোরদার করেছি।” রিমান্ডের আবেদন না করায় আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। পুলিশ বলেছে, মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও আরও কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে।

স্থানীয় প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব

নির্বিঘ্ন-নাগরিক জীবনের স্বার্থে স্থানীয়রা দ্রুত পুলিশের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। অনেকেই বলছেন, এমন ধরনের চাঁদাবাজি সমাজে ভয় ও অনিশ্চয়তা বাড়ায় এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও সাধারণ পরিবারের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এক প্রতিবেশী জানান, “সমন্বয়ক পরিচয়ে যে ভাবে চাঁদাবাজি হচ্ছে, তা চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ দিনের পর দিন ভোগান্তিতে থাকবে।” অপরদিকে কিছু মহল মনে করেন, অপরাধীদের সংগঠিতভাবে সনাক্ত করতে এলাকাভিত্তিক নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি।

কেন বাড়ছে এ ধরনের চাঁদাবাজি: বিশেষজ্ঞের মন্তব্য

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, আইনি অসচেতনতা, দুর্বল তথ্য-প্রবাহ এবং লোকাল প্রশাসনের দুর্বলতা মিলিয়ে চাঁদাবাজির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। তারা উপদেশ দিয়েছেন যে প্রশাসনকে দ্রুত মোবাইল ক্রাইম টিম, এলাকাভিত্তিক হটলাইন ও সচেতনতা কর্মসূচি চালাতে হবে। এছাড়া স্থানীয় কমিউনিটি নেতাকর্মীদেরও সচেতন করে ভুক্তভোগীরা যাতে সহজে আনুষঙ্গিক সেবা ও আইনি সহায়তা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, “যতক্ষণ না জনগণ জানে তারা কোথায় অভিযোগ করবে এবং দ্রুত সাড়া পাবে, সে পর্যন্ত এই ধরনের অপরাধ দমন করা কঠিন।”

সারসংক্ষেপ  

উত্তরা ঘটনাটি আবারো স্মরণ করিয়ে দিল যে সামাজিক ভূমিকায় থাকা পরিচয় যদি অপব্যবহার করা হয় তবে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ভঙ্গ হয়। পুলিশের দ্রুত হস্তক্ষেপে তিনজন গ্রেপ্তার হলেও পুরো চক্র ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা ও তদন্তে জোর দেওয়া প্রয়োজন। আশা করা যায়, তদন্তের পর অপর সহযোগীসহ মূল সংগঠনের নেপথ্যকারীরা সনাক্ত হয়ে দায়মুক্তি রক্ষা পাবে না এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এম আর এম – ১৩১২,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button