বাংলাদেশ

লুট হওয়া পাথর ৭ দিনের মধ্যে আগের স্থানে ফেলার নির্দেশ হাইকোর্টের

Advertisement

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ এলাকা থেকে লুট হওয়া বিপুল পরিমাণ সাদা পাথর আগামী সাত দিনের মধ্যে আগের স্থানে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। পাশাপাশি এই লুটের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার হাইকোর্ট বেঞ্চ সংশ্লিষ্ট একটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন।

হাইকোর্টের নির্দেশনার বিস্তারিত

আদালত জানায়, ভোলাগঞ্জ থেকে যেসব সাদা পাথর অবৈধভাবে তুলে নেওয়া হয়েছে, সেগুলো অবিলম্বে সাত দিনের মধ্যে আগের জায়গায় ফিরিয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এই লুটের সঙ্গে যুক্ত, তাদের তালিকা আদালতে জমা দিতে হবে। আদালত এও উল্লেখ করে যে, এই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।

রিট আবেদন

এই রিট আবেদন করেন মানবাধিকার ও পরিবেশ বিষয়ক আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, সিলেটের ভোলাগঞ্জে দিনের আলোয় প্রকাশ্যে পাথর লুট হলেও স্থানীয় প্রশাসন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। পাথর খেকো চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে এবং এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েনেরও আবেদন করা হয়। আদালত এসব বিষয়ে সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে রুল জারি করেছেন।

অবৈধ পাথর উত্তোলনের ইতিহাস

ভোলাগঞ্জ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ পাথরভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পরিবর্তনের পর থেকে গত এক বছরে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ পাথর উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের উপস্থিতিতেই দিনের বেলায় এসব পাথর তুলে নেওয়া হয়েছে এবং ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী মহলের সমর্থনে এই কার্যক্রম চলেছে।

স্থানীয় ও বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় পরিবেশ কর্মীরা বলছেন, এই ধরনের অবৈধ পাথর উত্তোলন শুধু প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে না, বরং নদী ও পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে। এছাড়া, ভোলাগঞ্জের পর্যটন সম্ভাবনাও হুমকির মুখে পড়ছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে এই ধরণের কর্মকাণ্ড জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে আরও ত্বরান্বিত করবে এবং নদীভাঙন, মাটি ক্ষয়সহ নানা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

সরকারের অবস্থান

সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পাথর লুট রোধে কড়া নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দোষীদের আইনের আওতায় আনতে তদন্তও শুরু হয়েছে।

পরবর্তী পদক্ষেপ

আগামী রোববার (১৭ আগস্ট) একই ঘটনার আরেকটি রিটের শুনানি হবে হাইকোর্টে। এতে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভোলাগঞ্জ এলাকায় স্থায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবিও জানানো হবে। আদালতের পরবর্তী নির্দেশনার ওপর নির্ভর করবে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ।

সংক্ষিপ্তসার

ভোলাগঞ্জ থেকে লুট হওয়া পাথর ফেরত দেওয়ার হাইকোর্টের নির্দেশকে অনেকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু ফেরত দেওয়াই যথেষ্ট নয় — বরং অবৈধ পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল, কড়া নজরদারি এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে একই ঘটনা পুনরায় ঘটার আশঙ্কা থেকেই যাবে।

এম আর এম – ০৮৬০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button