ফুটবল

রোনালদোর দৃষ্টিনন্দন গোল, বললেন সাফল্য কোনো দুর্ঘটনা নয়

Advertisement

রোনালদোর দৃষ্টিনন্দন গোল, বললেন সাফল্য কোনো দুর্ঘটনা নয়

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো — নামটি যেন সাফল্যের অন্য নাম। বয়স, সময় কিংবা প্রতিপক্ষ — কেউই তাকে থামাতে পারে না। মাঠে নামলেই যেন নতুন ইতিহাস লেখা শুরু হয় এই পর্তুগিজ তারকার পায়ের জাদুতে। সম্প্রতি সৌদি প্রো লিগে আল নাসরের জার্সিতে আবারও সেই জাদুর ঝলক দেখালেন রোনালদো। করলেন এক দৃষ্টিনন্দন গোল, যা মুহূর্তেই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও জুভেন্টাসের সোনালি দিনে যেভাবে তিনি প্রতিপক্ষের ডিফেন্সকে উড়িয়ে দিতেন, ঠিক তেমনি সৌদি লিগের মাঠেও ফিরিয়ে আনলেন সেই স্মৃতি। ম্যাচ শেষে রোনালদো নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, “সাফল্য কোনো দুর্ঘটনা নয়” — এই সংক্ষিপ্ত বাক্যটিই যেন তার জীবন ও ক্যারিয়ারের সারসংক্ষেপ।

রোনালদোর জাদুকরী গোল

গত শনিবার রিয়াদের আল আওয়াল পার্ক স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় আল নাসর ও আল ফাতেহ। ম্যাচটি শুরু থেকেই ছিল উত্তেজনায় ভরা। প্রথমার্ধেই সুযোগ পেয়েছিলেন রোনালদো, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার নেওয়া পেনাল্টি রুখে দেন প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক। এতে হতাশ হলেও রোনালদোর চোখেমুখে কোনো ভয় বা অনিশ্চয়তার ছাপ দেখা যায়নি। তিনি জানতেন, সুযোগ আসবেই এবং তখনই তিনি জবাব দেবেন তার নিজের মতো করে।

দ্বিতীয়ার্ধের ৬০ মিনিটে আসে সেই মুহূর্ত। বক্সের বাইরে থেকে পেয়ে যান বল, এক নজরে গোলরক্ষকের অবস্থান দেখে এমন এক বুলেট গতির শট নেন যা থামানো প্রায় অসম্ভব। প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক হাত ছুঁয়েও বল থামাতে পারেননি। গোল হতেই দর্শকরা উঠে দাঁড়ান, স্টেডিয়ামে শুরু হয় উল্লাস। রোনালদোও জার্সি খুলে দৌড় দেন পুরো মাঠজুড়ে। ৪০ বছর বয়সেও এমন উদ্দীপনা ও ফিটনেস দেখে দর্শকরা অভিভূত।

ফেলিক্সের হ্যাটট্রিক, কোম্যানের গোল

রোনালদোর মতোই উজ্জ্বল ছিলেন তার সতীর্থ জোয়াও ফেলিক্স। জাতীয় দলের এই তরুণ তারকা বার্সেলোনা থেকে আল নাসরে যোগ দিয়েই যেন নতুন করে জন্ম নিয়েছেন। ম্যাচে তিনি হ্যাটট্রিক করে দলকে ৫-১ ব্যবধানে জয় এনে দেন। দলের আরেক ফরোয়ার্ড কিংসলে কোম্যানও করেন একটি গোল। ম্যাচের প্রথমার্ধে সমতা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আল নাসর গোল বন্যায় ভাসিয়ে দেয় আল ফাতেহকে।

রোনালদোর অধ্যবসায় ও পেশাদারিত্ব

রোনালদো কেবল প্রতিভা নয়, তিনি এক কঠোর পরিশ্রমের প্রতীক। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত নিজের শরীর ও মনকে যেভাবে প্রস্তুত রেখেছেন, তা বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের উদাহরণ হয়ে আছে। জানা গেছে, তিনি প্রতিদিন প্রায় সাড়ে নয় ঘণ্টা ঘুমান এবং ঘুমের সময়ও ভাগ করে রাখেন, যাতে শরীরের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে।

তার খাদ্যাভ্যাসও অন্যদের চেয়ে আলাদা। রোনালদো চিনি, সফট ড্রিংক বা জাঙ্ক ফুড থেকে দূরে থাকেন। তার খাবারে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, সবজি ও ফলমূল। এমনকি সন্তানদেরও তিনি অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে দূরে থাকতে বলেন। এই কঠোর শৃঙ্খলাই তাকে এত বছর ধরে শীর্ষ পর্যায়ে টিকিয়ে রেখেছে।

রোনালদোর সাফল্যের গল্প

রোনালদো বিশ্বের একমাত্র ফুটবলার যিনি ইউরোপের তিনটি শীর্ষ ক্লাবে (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ ও জুভেন্টাস) সফলতা পেয়েছেন। ক্লাব পর্যায়ে প্রায় ৯৫০ গোলের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেছেন তিনি। জাতীয় দলের হয়ে করেছেন ১২০টিরও বেশি গোল, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। সম্প্রতি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ৪১ গোল করে তিনি নতুন রেকর্ড গড়েছেন।

অনেকে বলেন, বয়স রোনালদোর জন্য শুধু একটি সংখ্যা। ৪০ বছর বয়সেও যেভাবে তিনি মাঠে পরিশ্রম করেন, তা তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি নিজে একবার বলেছিলেন, “যখন আপনি কঠোর পরিশ্রম করেন, তখনই ভাগ্য আপনাকে পুরস্কৃত করে।”

সৌদি প্রো লিগে রোনালদোর প্রভাব

রোনালদো সৌদি প্রো লিগে যোগ দেওয়ার পর থেকেই লিগটির জনপ্রিয়তা বেড়েছে বহুগুণে। ইউরোপীয় ফুটবলের তারকারা এখন সৌদি ক্লাবগুলোতে যোগ দিচ্ছেন একের পর এক। শুধু দর্শক নয়, বিজ্ঞাপনদাতা ও সম্প্রচারক সংস্থাগুলোর আগ্রহও বেড়েছে ব্যাপকভাবে। আল নাসরের হয়ে রোনালদোর পারফরম্যান্স পুরো লিগের মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

মানসিক দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস

রোনালদোর সবচেয়ে বড় শক্তি তার মানসিক দৃঢ়তা। জীবনের বিভিন্ন সময়ে সমালোচনা, ব্যর্থতা, এমনকি ব্যক্তিগত জীবনের চ্যালেঞ্জও তাকে দমাতে পারেনি। বরং প্রতিটি ব্যর্থতাই তাকে আরও শক্তিশালী করেছে। তিনি একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমি যতবার ব্যর্থ হয়েছি, ততবারই নিজেকে প্রমাণ করার ইচ্ছা আরও বেড়েছে।”

মাঠে যখন তিনি দাঁড়ান, তখন চোখেমুখে দেখা যায় এক অসাধারণ আত্মবিশ্বাস। যেন বলটি তার পায়ের নিচে এলেই গোল হবেই। এই বিশ্বাসই তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলেছে।

ভবিষ্যতের স্বপ্ন ও প্রেরণা

যদিও বয়স অনেকটা এগিয়ে গেছে, রোনালদো এখনো অবসর ভাবছেন না। বরং তিনি প্রতিটি ম্যাচকেই নিজের ক্যারিয়ারের নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেন। তিনি চান তরুণ খেলোয়াড়রা তার কাছ থেকে শিখুক কিভাবে নিজেকে প্রতিদিন আরও ভালো করা যায়।

তার কথায়, “সাফল্য কখনও দুর্ঘটনা নয়। এটি আসে কঠোর পরিশ্রম, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও ইতিবাচক মনোভাবের ফলাফল হিসেবে।”

এই উক্তিটিই এখন বিশ্বজুড়ে অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছে। শুধুমাত্র ফুটবলার নয়, জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রে যারা সাফল্যের স্বপ্ন দেখেন, তাদের জন্য এটি এক বাস্তব বার্তা।

সমর্থকদের ভালোবাসা

রোনালদোর জনপ্রিয়তা কেবল মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও সমান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার অনুসারীর সংখ্যা কয়েকশো মিলিয়ন। সৌদি আরবে যখনই তিনি খেলতে নামেন, স্টেডিয়াম ভরে যায় দর্শকে। তার প্রতিটি গোল, প্রতিটি উদযাপন হয়ে ওঠে উৎসবমুখর।

একজন সমর্থক সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “রোনালদো শুধু একজন ফুটবলার নন, তিনি এক অনুভূতি।” এই মন্তব্যেই যেন ধরা পড়ে রোনালদোর প্রতি মানুষের ভালোবাসা।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো প্রমাণ করেছেন, বয়স নয়, ইচ্ছাশক্তিই মানুষকে এগিয়ে রাখে। তিনি দেখিয়েছেন সাফল্য কোনো ভাগ্যের খেলা নয়, এটি অর্জন করতে হয় ঘাম, অধ্যবসায় ও নিবেদন দিয়ে। তার গোল যেমন চোখে আনন্দ আনে, তেমনি তার জীবনদর্শন দেয় প্রেরণা।

ফুটবলের ইতিহাসে অনেক মহান খেলোয়াড় এসেছেন, কিন্তু রোনালদোর মতো নিবেদিতপ্রাণ ও শৃঙ্খলাপরায়ণ তারকা বিরল। আজকের এই গোল কেবল একটি ম্যাচের সাফল্য নয়, এটি একটি বার্তা—
সাফল্য কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং এটি কঠোর পরিশ্রমের অবশ্যম্ভাবী ফল।

MAH – 13383 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button