ফুটবল

ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করতে ৫০ খেলোয়াড়ের চিঠি

Advertisement

খেলাধুলার অঙ্গনে আবারও জোরালো হলো ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করার দাবি। সর্বশেষ ইউরোপীয় ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফার কাছে একটি যৌথ চিঠি পাঠিয়েছেন ৫০ জন বর্তমান ও সাবেক আন্তর্জাতিক ক্রীড়াবিদ। তাদের একটাই আহ্বান— গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো নৃশংস হামলার কারণে ইসরায়েলকে সব প্রতিযোগিতা থেকে অবিলম্বে বহিষ্কার করা হোক।

কারা এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন

উয়েফার উদ্দেশে পাঠানো চিঠিতে সই করেছেন ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার মঈন আলী, ফরাসি বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার পল পগবা, ব্রিটিশ বক্সার জ্যাক চেল্লি, হিজাব পরা প্রথম ব্রিটিশ নারী জকি খাদিজা মেল্লা, প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ক্রিস্টাল প্যালেসের মিডফিল্ডার চিয়েক ডৌকুরে, চেলসির সাবেক তারকা হাকিম জিয়েচ, ডাচ উইঙ্গার আনোয়ার এল ঘাজি এবং লেস্টার সিটির সাবেক কোচ নাইজেল পিয়ার্সনসহ অনেকে।

এ তালিকায় বিশেষভাবে আলোচিত নাম আনোয়ার এল ঘাজি। ২০২৩ সালে জার্মান ক্লাব মেইঞ্জের সঙ্গে খেলার সময় ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় তাকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়। পরে আদালত রায় দেন, তার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কাতারের ক্লাব আল সাইলিয়ার হয়ে খেলছেন।

চিঠির মূল বক্তব্য

ব্রিটেনভিত্তিক নুজুম স্পোর্টসের উদ্যোগে “অ্যাথলেটস ফর পিস” ব্যানারে এই চিঠি জমা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়ানো খেলোয়াড়েরা এতে অংশ নিয়েছেন।

চিঠিতে লেখা হয়:

“আমরা উয়েফাকে আহ্বান জানাই, ইসরায়েলকে সব প্রতিযোগিতা থেকে অবিলম্বে বহিষ্কার করুন।”

এছাড়া চিঠিতে শ্রদ্ধা জানানো হয় ফিলিস্তিনি কিংবদন্তি ফুটবলার সুলেইমান আল-ওবেইদকে, যিনি “ফিলিস্তিনি পেলে” নামে পরিচিত ছিলেন। গত আগস্টে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন তিনি। চিঠিতে বলা হয়, জীবদ্দশায় তিনি খেলাধুলার মাধ্যমে আশা জাগিয়েছিলেন, আর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মনে করিয়ে দিলেন কেন এখনই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পদক্ষেপ জরুরি।

এর আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ইসরায়েলকে ফুটবল থেকে সাময়িক বহিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছিল। ফিলিস্তাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনও ফিফার সর্বশেষ দুটি কংগ্রেসে একই দাবি তোলে। তুরস্ক ফুটবল ফেডারেশন গত সপ্তাহে ফিফা ও উয়েফাসহ বিভিন্ন দেশের সংস্থার কাছে চিঠি পাঠিয়ে একই দাবি জানায়।

গাজায় সাম্প্রতিক সময়ে হাজারো বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ঘটায় আন্তর্জাতিক মহলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে খেলাধুলার অঙ্গনে প্রতিবাদ ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এবং জাতিসংঘের একদল বিশেষজ্ঞ আগেই ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক খেলাধুলা থেকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এখন সেই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হলেন ক্রীড়া তারকারা।

তবে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে ঘোষণা এসেছে, ২০২৬ বিশ্বকাপে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করার যেকোনো প্রচেষ্টা তারা প্রতিহত করবে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা নিশ্চিত করব, ইসরায়েলি দলকে বিশ্বকাপ থেকে বাদ দেওয়ার কোনো উদ্যোগ সফল না হয়।”

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, খেলাধুলায় ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করার দাবি শুধু ক্রীড়াঙ্গনের ইস্যু নয়, বরং এটি একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক বার্তা। যদি উয়েফা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়, তবে আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েলের ওপর চাপ বহুগুণ বেড়ে যাবে।

অন্যদিকে সমালোচকরা বলছেন, খেলাধুলা এবং রাজনীতিকে এক করা উচিত নয়। তবে মানবিক সংকটের সময় নীরব থাকাও অনেকের কাছে অগ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে।

ভবিষ্যত সম্ভাবনা

এখন মূল প্রশ্ন হলো, উয়েফা কি এই দাবির প্রতি সাড়া দেবে? ইউরোপীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে অতীতে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্যমূলক শাসনকেও খেলাধুলা থেকে বহু বছর বহিষ্কার করা হয়েছিল। তাই অনেকেই মনে করছেন, গাজা সংকট আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।

৫০ জন ক্রীড়াবিদের এই চিঠি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। খেলাধুলার মঞ্চ থেকে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করা হবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে এই দাবি যত জোরালো হচ্ছে, ততই বিশ্ববাসী ভাবছে— ক্রীড়া আর মানবিকতার লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কোন দিকটি প্রাধান্য পাবে?

এম আর এম – ১৫৮২,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button