বিশ্ব

ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ১১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি

Advertisement

ইসরায়েলের কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দিদের সংখ্যা সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। বর্তমানে কমপক্ষে ১১ হাজার ৪০ জন ফিলিস্তিনি বন্দি রয়েছে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে, যা সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সর্বাধিক। এই তথ্য প্রকাশ করেছে ইসরায়েলভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হামোকেদ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম দ্য জেরুজালেম পোস্ট

হামোকেদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিপুল সংখ্যক বন্দির মধ্যে ৫৬ শতাংশ ফিলিস্তিনি আটক রয়েছেন বিনা বিচারেই। তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন বা আদালতে হাজির করা হয়নি। বাকিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলার কার্যক্রম চলছে।

গাজায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকে আটক অভিযানের মাত্রা বেড়েছে

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পরই পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। শুধু গাজা নয়, পশ্চিম তীরেও অভিযান চালিয়ে ফিলিস্তিনিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে ব্যাপকভাবে। ইসরায়েলি সেনাদের অভিযোগ, আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িত। হামোকেদের তথ্য অনুযায়ী, কমপক্ষে ২ হাজার ৬৭২ জনকে সহিংসতার অভিযোগে আটক করা হয়েছে

তবে ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংস্থাগুলো দাবি করছে, অধিকাংশ গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি নিরীহ সাধারণ মানুষ। মহিলা, কিশোর, এমনকি শিশুদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে। তাদের অনেকে মাসের পর মাস বিনা বিচারে আটক রয়েছেন।

‘প্রশাসনিক আটক’ নীতি নিয়ে বিতর্ক

ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ‘প্রশাসনিক আটক’ (Administrative Detention) নীতি ব্যবহার করে আসছে। এই নীতির আওতায় কাউকে কোনো অভিযোগ প্রমাণ ছাড়াই, আদালতের আদেশ ছাড়া, দীর্ঘ সময় কারাগারে রাখা যায়।
বর্তমানে এই নীতির আওতায় ফিলিস্তিনিদের আটক রাখার সংখ্যা বেড়েছে নজিরবিহীনভাবে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, এই নীতি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী এবং এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় উদাহরণ

মোট কতজন বন্দি? বিস্তারিত তথ্য

হামোকেদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের কারাগারে বর্তমানে মোট ১১ হাজার ৪০ জন ফিলিস্তিনি বন্দি রয়েছেন। এর মধ্যে—

  • ৫৬% বিচার বহির্ভূতভাবে আটক
  • ৪৪% মামলার আওতায়
  • ২,৬৭২ জনের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ

ফিলিস্তিনি সূত্র জানাচ্ছে, এর বাইরে হাজার হাজার মানুষকে অস্থায়ী আটক কেন্দ্রগুলোতে রাখা হয়েছে। তবে সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

নারী ও শিশুদের অবস্থাও ভয়াবহ

ফিলিস্তিনি কমিশন ফর প্রিজনার অ্যাফেয়ার্সের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের কারাগারে বর্তমানে প্রায় ৩২০ জন নারী এবং ৪০০-এর বেশি শিশু বন্দি রয়েছে। তাদের অনেকের বয়স ১৫ বছরের নিচে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, শিশুদের আটক করা আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার কনভেনশনের লঙ্ঘন।

কারাগারের ভেতরের পরিস্থিতি

মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, ইসরায়েলের কারাগারগুলোতে ফিলিস্তিনি বন্দিদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন, চিকিৎসা বঞ্চনা এবং খাদ্য সংকট চলছে। অনেক বন্দির বিরুদ্ধে অত্যধিক শারীরিক নির্যাতন এবং অবমাননাকর আচরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া, অসুস্থ বন্দিদের চিকিৎসা না দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ফিলিস্তিনি পক্ষের।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়া

জাতিসংঘ বারবার ইসরায়েলের প্রশাসনিক আটক নীতি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘ জানিয়েছিল, ফিলিস্তিনি বন্দিদের অধিকারের সুরক্ষায় ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে
তবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাদের নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে এই আটক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

ফিলিস্তিনিদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন

ফিলিস্তিনি সমাজে বন্দিদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। গাজা, পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় প্রতিদিনই প্রতিবাদ মিছিল ও ধর্মঘট হচ্ছে। হামাস ও ফাতাহসহ বিভিন্ন ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক দল বলছে, বন্দিদের মুক্তি ছাড়া শান্তি সম্ভব নয়।

পূর্বের তুলনায় এখন পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ?

পূর্বে ইসরায়েলের কারাগারে গড়ে ৪-৫ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি থাকত। তবে গাজায় চলমান যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এটি ইসরায়েলি দখলদারিত্বের ইতিহাসে এক ভয়াবহ অধ্যায়

বিশ্লেষকদের মন্তব্য

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের ব্যাপক আটক কার্যক্রম পরিস্থিতি আরও জটিল করবে।
মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞদের মতে:

  • এটি শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য বড় বাধা
  • বন্দিদের নির্যাতন এবং বিনা বিচারে আটক আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন
  • দীর্ঘমেয়াদে এটি সহিংসতার মাত্রা আরও বাড়াবে

বর্তমানে ইসরায়েলের কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দিদের সংখ্যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানাচ্ছে। তবে পরিস্থিতি এখনো উন্নতির কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছে না।
ফিলিস্তিনিদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন চলছেই, কিন্তু ইসরায়েলের নিরাপত্তার অজুহাতে গ্রেফতারের মাত্রা আরও বাড়ছে।

MAH – 12613,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button