ফ্যাক্ট চেক

জিন, জাদু ও বদনজর থেকে আত্মরক্ষার কার্যকর ইসলামি পদ্ধতি

Advertisement

বর্তমান বিজ্ঞানপ্রযুক্তির যুগেও মানুষ জাদু, জিন ও বদনজরের ভয়াল ছায়া থেকে নিরাপদ নয়। ইসলাম এসব ক্ষতিকর প্রভাবের অস্তিত্ব স্বীকার করেছে এবং আত্মরক্ষার জন্য দিয়েছে শক্তিশালী দোয়া, আমল ও করণীয় নির্দেশনা। চলুন জেনে নেই কিভাবে আমরা এগুলোর হাত থেকে বাঁচতে পারি।

জিন, জাদু ও বদনজর: ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

ইসলাম জাদু ও বদনজরের অস্তিত্বকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। হাদিসে এসেছে, বদনজর বাস্তব এবং তা মানুষের ক্ষতি করতে সক্ষম। তেমনি জাদুও কুফরি কাজ হিসেবে বিবেচিত যা মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আর জিন হচ্ছে অদৃশ্য একটি সৃষ্টিজগৎ, যাদের মাঝে শয়তানসুলভ আচরণও বিদ্যমান। ইসলাম এসবের থেকে আত্মরক্ষার জন্য কিছু নির্দিষ্ট আমল ও দোয়ার মাধ্যমে প্রস্তুত থাকতে বলে।

আত্মরক্ষার কোরআনি পদ্ধতি

আয়াতুল কুরসি পাঠ
প্রতিদিন ফজর ও মাগরিব নামাজের পর এবং ঘুমানোর আগে সূরা বাকারা’র আয়াত ২৫৫ অর্থাৎ আয়াতুল কুরসি পাঠ করতে বলা হয়েছে। হাদিসে বলা হয়েছে, এটি পড়লে রাতে শয়তান তার কাছাকাছি আসতে পারে না।

সূরা ফালাক ও সূরা নাস
প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় ৩ বার করে এই দুই সূরা পাঠ করা রাসুল (সা.)-এর নিয়মিত আমল ছিল। এই সূরাদ্বয়কে “মুআউউজাতাইন” বলা হয়, যা বদনজর ও জাদু থেকে রক্ষাকারী।

সূরা ইখলাস পাঠ
সূরা ফালাক ও নাস-এর সঙ্গে সূরা ইখলাস মিলিয়ে প্রতিদিন ৩ বার পাঠ করা সুন্নত। এভাবে একত্রে পাঠ করে দেহে ফুঁক দিলে বদনজরের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

সূরা বাকারা তিলাওয়াত
রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ঘরে সূরা বাকারা তিলাওয়াত করা হয়, সেই ঘরে শয়তান প্রবেশ করতে পারে না। তাই সপ্তাহে অন্তত একবার ঘরে সূরা বাকারা তিলাওয়াত করার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।

দোয়া ও যিকর: আত্মিক সুরক্ষা

জিন ও জাদু থেকে রক্ষার দোয়া
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
এই দোয়া সকালে ও সন্ধ্যায় ৩ বার পড়লে, আল্লাহর ইচ্ছায় জিন বা যাদু কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।

বদনজর থেকে রক্ষার দোয়া
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
এই দোয়াটি প্রতিদিন পড়লে বদনজর থেকে আত্মরক্ষা সহজ হয়।

রাতের আমল
শয্যা গ্রহণের সময় সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে দুই হাতে ফুঁ দিয়ে পুরো শরীরে মাসেহ করা রাসুল (সা.)-এর নিয়মিত আমল ছিল। এটি বদনজর ও জাদু থেকে নিরাপদ রাখে।

রুকইয়া: ইসলামি ঝাড়ফুঁক পদ্ধতি

রুকইয়া হলো শরিয়তসম্মত দোয়া ও কোরআনি আয়াত পাঠ করে রোগ নিরাময়ের প্রচেষ্টা। সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে নিজের ওপর বা পানিতে ফুঁ দিয়ে সেই পানি পান করা বা শরীরে লাগানো যেতে পারে। এটি প্রমাণিত সুন্নাহ পদ্ধতি।

বদনজর শনাক্ত ও চিকিৎসা

বদনজরের লক্ষণ হতে পারে — হঠাৎ অসুস্থতা, শিশুর কান্না, ঘনঘন জ্বর, মানসিক চাপ ইত্যাদি। হাদিসে এসেছে, বদনজর সন্দেহ হলে যিনি নজর দিয়েছেন, তার অজু করানো হবে এবং সেই পানি আক্রান্ত ব্যক্তির মাথা ও শরীরে ঢেলে দেওয়া হবে। এটি একটি প্রমাণিত হাদিসভিত্তিক চিকিৎসা।

ইসলামি জীবনব্যবস্থা ও প্রতিরক্ষা

৫ ওয়াক্ত নামাজ
নামাজ আমাদের আত্মিক শক্তি যোগায় ও শয়তান থেকে রক্ষা করে।

হালাল জীবিকা ও পরিশুদ্ধ জীবন
সন্দেহজনক কিছু থেকে বিরত থাকা, গীবত না করা, হালাল রুজিতে সন্তুষ্ট থাকা আত্মার শক্তি বাড়ায়।

বিশ্বাস ও তাওয়াক্কুল
সবশেষে, সর্বোচ্চ আত্মরক্ষা হলো আল্লাহর উপর নির্ভরতা ও দোয়া। আল্লাহ চাইলে কোনো অপশক্তিই ক্ষতি করতে পারে না।

যে বিষয়গুলো থেকে সতর্ক থাকতে হবে

 কবিরাজ বা শরিয়তবিরোধী তাবিজ-তান্ত্রিকদের কাছে না যাওয়া
কুফরি বা বিদআতি আমল পরিহার
গন্ধবস্তু, তাবিজ, লাল সুতা এসব শিরকসুলভ আচরণ বর্জন


“মুসলমানের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা হলো — নিয়মিত নামাজ, কোরআন পাঠ ও আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ নির্ভরতা।” — একজন ইসলামি চিন্তাবিদ

সারসংক্ষেপ  

আজকের আধুনিক যুগেও আমাদের সমাজে বহু মানুষ জিন, জাদু ও বদনজরের ভয় থেকে মুক্ত নয়। হঠাৎ অসুস্থতা, মানসিক অস্থিরতা, পারিবারিক অশান্তি বা পেশাগত ব্যর্থতার পেছনে অনেকেই এসব অদৃশ্য কারণকেই দায়ী করে থাকেন। ইসলামে এসব বিষয়কে স্বীকৃতি দিয়ে আত্মরক্ষার জন্য দেওয়া হয়েছে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা। নিচে আলোচনা করা হলো কীভাবে একজন মুসলমান ইসলামি পদ্ধতিতে নিজেকে ও পরিবারকে এসব ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে পারেন।


জিন, জাদু ও বদনজর সত্যিকারের অস্তিত্ব রাখে—তবে আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই ঘটতে পারে না। ইসলামের নির্দেশিত আমল, দোয়া ও জীবনব্যবস্থা অনুসরণ করলে একজন মানুষ সহজেই এসব অদৃশ্য ক্ষতিকর শক্তির হাত থেকে নিরাপদ থাকতে পারেন। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি সেই আত্মিক প্রস্তুতি নিচ্ছি?

এম আর এম – ০৩৫৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button